বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধী পোস্ট দেয়া নিষেধ পুলিশের

  •    
  • ৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৮:৫৯

উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরের ডিসিপ্লিন শাখা যদি দেখে কোনো পুলিশ সদস্য নীতিমালাবহির্ভূত কাজ করছে, সঙ্গে সঙ্গে তার স্ক্রিনশট সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয়। তারপর তারা সেটার ফাইল প্রসিড করে, তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’

রাজধানীতে টিপ পরা নারীকে এক পুলিশ সদস্যের হেনস্তা করার অভিযোগ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যেই সিলেটের এক পুলিশ কর্মকর্তা ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন।

সিলেট জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক লিয়াকত আলী গত ৪ এপ্রিল একটি পোস্টে লেখেন (মূল পোস্টের বানান অপরিবর্তিত), ‘টিপ নিয়ে নারীকে হয়রানীর করার প্রতিবাদে অনেক পুরুষ নিজেরাই কপালে টিপ লাগাইয়া প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু আমি ভবিষ্যত ভাবনায় শংকিত। বিভিন্ন শহরে অনেক নারীরা যেসব খোলামেলা পোষাক পড়ে চলাফেরা করেন - তারমধ্যে অনেকেরই ব্রায়ের উপরে দিকে প্রায় অর্ধেক আনকভার থাকে। পাতলা কাপড়ের কারনে বাকী অর্ধেকও দৃশ্যমান থাকে। এখন যদি কোনো পুরুষ এইভাবে ব্রা পড়ার কারনে কোনো নারীকে হয়রানী করে তবে কি তখনও আজকে কপালে টিপ লাগানো প্রতিবাদকারী পুরুষগণ একইভাবে ব্রা পড়ে প্রতিবাদ করবেন???’

লিয়াকত পরে পোস্টটি মুছে দিলেও তার আগেই এর স্ক্রিনশট ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এর পরই লিয়াকতকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। পরদিন তাকে বদলি করা হয় রংপুরে।

লিয়াকত আলীর আগেও ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন পুলিশের আরও কয়েক সদস্য। এমন প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জন্য কী কী বিধিনিষেধ রয়েছে, তা অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে জানান, দায়িত্বশীল বাহিনীর সদস্যের জায়গা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কিত কোনো পোস্ট দেয়ার সুযোগ নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিলেটের ওই পুলিশ সদস্য ফেসবুকে যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তা নিয়ে আমরা বিব্রত। কারণ এ ধরনের ঘটনার কারণে জনসাধারণের বেলায় আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।’

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা আছে। এটি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পরিপত্র আকারে জারি করা হয়েছে।

‘এই পরিপত্রে পুলিশ সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কী প্রচার করতে পারবেন, সে বিষয়ে ডিটেইল উল্লখ করা আছে। সুতরাং কেউ যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন কিছু প্রচার করে, যা নীতিমালাকে ভায়োলেট করে তাহলে অবশ্যই পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ব্যবস্থা নেবে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। এমনকি চাকরি পর্যন্ত চলে যেতে পারে।’

তিনি জানান, বিষয়টি দেখভালের জন্য পুলিশে আলাদা ডিপার্টমেন্ট আছে। উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরের ডিসিপ্লিন শাখা যদি দেখে কোনো পুলিশ সদস্য নীতিমালাবহির্ভূত কাজ করছে, সঙ্গে সঙ্গে তার স্ক্রিনশট সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয়। তারপর তারা সেটার ফাইল প্রসিড করে, তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’

পুলিশ সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কীভাবে ব্যবহার করবেন, সে বিষয়ে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তর একটি হালনাগাদ পরিপত্র জারি করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের নির্দেশিকাসংক্রান্ত এই পরিপত্রের একটি অংশে বলা হয়েছে, ‘এই নির্দেশনা মেনে না চললে সেটি অসদাচরণ এবং অদক্ষতা হিসেবে গণ্য করা হবে। নির্দেশনা অমান্য করলে সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং প্রয়োজনে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশের জন্য যা নিষেধ

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে রাষ্ট্র, সরকার বা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থি কোনো পোস্ট দেয়া যাবে না।’

এতে বলা হয়, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা ধর্মনিরপেক্ষতা পরিপন্থি কর্মকাণ্ড করা যাবে না। রাজনৈতিক মতাদর্শ, জঙ্গি কর্মকাণ্ড অথবা ধর্মীয় উগ্রবাদসংশ্লিষ্ট কোনো মন্তব্য বা কনটেন্ট আপলোড করা যাবে না।

‘মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের গুজব বা বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট করা যাবে না। লিঙ্গবৈষম্য বা এ-সংক্রান্তে বিতর্কমূলক কোনো কনটেন্ট আপলোড করা যাবে না।’

জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো বিষয় লেখা, অডিও বা ভিডিও প্রকাশ করা যাবে না বলেও উল্লেখ রয়েছে পরিপত্রে। এতে বলা হয়, ‘চিহ্নিত, অভ্যাসগত অপরাধী বা এরূপ কোনো বিতর্কিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তোলা ও পোস্ট করা যাবে না।’

মোবাইল ফোন ও ই-মেইল ব্যবহারে যা মানতে হবে

মোবাইল ফোন ও ই-মেইলের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় মেনে চলতে হয় পুলিশ সদস্যদের।

এ বিষয়ে নির্দেশনায় বলা হয়, ‘একই সময়ে মুঠোফোনে দুটির বেশি সিম ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সিম নিজ নামে নিবন্ধন করা থাকতে হবে। দেশের প্রচলিত আইন ও নির্দেশনা মেনে সিম কিনতে হবে। হারানো বা নষ্ট সিম চূড়ান্তভাবে অচল ও অকার্যকর করে একই নম্বরের বা ভিন্ন নম্বরের নতুন সিম কেনা যাবে।’

এতে বলা হয়, ‘বাহিনীর জন্য বরাদ্দ করা সিম হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে অবশ্যই একই নম্বরের নতুন সিম তুলতে হবে। ই-মেইল সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে দাপ্তরিক ই-মেইল ব্যবহার করতে হবে। অতিগুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় কোনো দাপ্তরিক তথ্য ই-মেইলের মাধ্যমে আদান-প্রদানে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।’

ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের সময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে পুলিশ সদস্যদের।

বন্ধু নির্বাচনেও সতর্কতা

পুলিশ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট ও বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে অপরাধী বা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রকে এড়িয়ে চলতে হবে।

ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও শেয়ারের ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখতে হবে পুলিশ সদস্যদের। যেকোনো ধরনের গুজব, মিথ্যাচার বা উসকানিমূলক তথ্য প্রচার ঠেকাতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে সচেতন থাকতে হবে।

এ ছাড়া ইন্টারনেটে সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের সময় অপ্রীতিকর কোনো কিছু খোঁজ করা বা নিষিদ্ধ কোনো সাইটে প্রবেশ করায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে পুলিশ সদস্যদের।

এ বিভাগের আরো খবর