জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মন্ডলের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনের সড়কে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ মানববন্ধন হয়।
হৃদয় মন্ডলের নিঃশর্তে মুক্তির দাবিসহ ইন্ধনদাতাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, ‘ধর্ম এবং তাত্ত্বিক আলোচনা নিয়ে হৃদয় মন্ডলকে গ্রেপ্তারে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ আলোচনা নতুন কিছু নয়; আদিকাল থেকেই এ আলোচনা হয়ে আসছে। হৃদয় মন্ডলকে গ্রেপ্তারের পেছনে কাদের ইন্ধন আছে তাদের বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। সেখানে কেমন শিক্ষক হবে? হৃদয় মন্ডলের মতো যুক্তি দিয়ে ক্লাস করাবে নাকি ঠিকমতো ক্লাস নেবে না এমন শিক্ষক হবে? হৃদয় মন্ডলের গ্রেপ্তার ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। এখানে নিশ্চয়ই কেউ চক্রান্ত করেছে। সেটি খুঁজে বের করা হোক। শিক্ষকদের বন্দি রাখা হয়েছে, সাংবাদিকদের কথা বলার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। এভাবেই রাষ্ট্র আমাদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।’
মানববন্ধনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান বলেন, ‘হৃদয় মন্ডল একজন আদর্শ শিক্ষকের চরিত্র দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সরকার পুরস্কার দিলো জেল-জরিমানা। এর মাধ্যমে এই রাষ্ট্র বার্তা দিলেন মুক্ত চিন্তা করা যাবে না, কথা বলা যাবে না।
‘গণতন্ত্রের ছিঁটেফোঁটাও বর্তমানে এ দেশে নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে আমাদের মুখবন্ধ করে রাখা হয়েছে। সব বাধা অতিক্রম করে এই সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নিতে হবে।’
এ সময় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, ‘দেশে যেমন একদিকে ধর্মকে উস্কে দেয়া হচ্ছে, তেমনি বিজ্ঞান চর্চা থেকেও দূরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। হৃদয় মন্ডলকে দ্রুত মুক্তির দাবি জানাই।’
গত ২০ মার্চ মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন হৃদয় মন্ডল।
আলোচনার সময় গোপনে তার বক্তব্যের অডিও ধারণ করা হয়। প্রায় ১৭ মিনিটের ওই অডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় কয়েকজন ছাত্রকে বারবার ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল এ সময় ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
ওই অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে পরদিন শিক্ষার্থীরা হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে।
পরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গত ২২ মার্চ হৃদয় মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।