ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপককে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার অধ্যাপক মফিজুর রহমানকে নিয়মনীতি পালনে যত্নশীল থাকার জন্য সতর্ক করে চিঠি পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মফিজুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং নরওয়ের বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক ও সহযোগিতা চুক্তি (কোলাবরেশন এগ্রিমেন্ট) অনুযায়ী পিএইচডি ডিগ্রির জন্য নিবন্ধন করেন। তিনি বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পিএইচডিকালীন শিক্ষকতা চাকরি থেকে ছুটি নেয়ার কথা থাকলেও তিনি সেটি করেননি। ছুটি না নিয়েই তিনি ডিগ্রি অর্জনের জন্য নরওয়ে যান এবং ডিগ্রির কার্যক্রমের কোনো কিছুই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগকে অবহিত করেননি।
এরপর এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অভিযোগ করা হলে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির সদস্য ছিলেন আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
ওই কমিটির দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা হয়।
সভার কার্যবিবণীতে বলা হয়, যে চুক্তির ভিত্তিতে অধ্যাপক মফিজুর রহমান পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, সেই চুক্তির ৪ নম্বর ধারায় পিএইচডিকালীন শিক্ষকতা চাকরি থেকে ছুটি নেয়ার শর্ত ছিল, তবে তিনি সেই ধারা অনুসরণ করেননি। এ ছাড়া পিএইচডির রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে কোনো পর্যায়ই মফিজুর রহমান বিভাগকে বিষয়টি অবগত করেননি।
কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, ‘নরওয়ের বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষণার কার্যক্রম বিষয়ে বিভাগকে অবগত ও অবহিত না করা এবং সম্পাদিত চুক্তির উল্লেখিত শর্ত লঙ্ঘন করে অধ্যাপক মফিজুর রহমান নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন বলে সিন্ডিকেট মনে করে।’
বিবরণীতে আরও বলা হয়, ‘এমন ব্যত্যয় কোনোভাবেই কাম্য নয়, তবে যেহেতু বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি দিয়েছে, তাই ডিগ্রির বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ গ্রহণ করে অধ্যাপক মফিজুর রহমানকে সতর্ক করা উচিত, যেন ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক বা গবেষক এ ধরনের নিয়মনীতির ব্যত্যয় না ঘটান।’
অধ্যাপক মফিজুর রহমানকে পাঠানো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে জানানো যাচ্ছে, আপনি নরওয়ের বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষণার কার্যক্রম বিষয়ে বিভাগকে অবগত ও অবহিত না করা এবং সম্পাদিত চুক্তির উল্লিখিত শর্ত লঙ্ঘন করে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন বলে সিন্ডিকেট মনে করে, যা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। ভবিষ্যতে যেন আপনি নিয়মনীতি পালনে যত্নশীল থাকেন, সে জন্য আপনাকে সতর্ক করা হলো।’