বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বক্তব্য গোপনে যেভাবে ধারণ

  •    
  • ৬ এপ্রিল, ২০২২ ২৩:৩১

মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠার পর গত ২২ মার্চ ওই শিক্ষককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের ক্লাসে দেয়া বক্তব্য গোপনে রেকর্ড করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ঘটনাটিকে পরিকল্পিত মনে করছেন জেলার অনেকে। আর অডিও ধারণকারী শিক্ষার্থী বলছে বন্ধুর পরামর্শে সে এ কাজ করেছে।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মামলায় প্রায় দুই সপ্তাহ কারাগারে আছেন হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। বুধবার তার জামিন শুনানি হলেও বিচারক তা নাকচ করেন। এ বিষয়ে পরের শুনানি হবে রোববার।

বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠার পর গত ২২ মার্চ ওই শিক্ষককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

এরপর রাতেই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও কোরআন অবমাননার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। পরের দিন পুলিশ আদালতে তোলার পর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান।

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ক্লাস নিচ্ছিলেন। ওই দিন তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করেন।

আলোচনার সময় গোপনে তার বক্তব্যের অডিও ধারণ করা হয়। প্রায় ১৭ মিনিটের ওই অডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় কয়েক জন ছাত্রকে বারবার ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

ওই অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে পরদিন শিক্ষার্থীরা হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে।

প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে।

বিদ্যালয় চত্বরের পার্শ্ববর্তী রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। প্রধান শিক্ষক বিষয়টি সদর থানা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর পর পুলিশ হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে।

অডিও রেকর্ডধারণকারী শিক্ষার্থী যা বলছে

ঘটনার দিন ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর মোবাইল ফোনে গোপনে রেকর্ড করেন দশম শ্রেণির বাণিজ্য শাখার এক শিক্ষার্থী। নিউজবাংলা তার সঙ্গে কথা বলছে, তবে কিশোর বয়স বিবেচনায় সম্পাদকীয় নীতির কারণে তার নাম প্রকাশ করছে না নিউজবাংলা।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে ওই শিক্ষার্থী বলে, ‘আমাদের স্কুলের পরীক্ষা চলছিল। তাই স্যার সংকট ছিল। ওই স্যারকে পাঠানো হইছিল বাংলা দ্বিতীয়পত্র ক্লাসে।

‘স্যার ক্লাসে গিয়েই বলেন, বাংলা কী পড়াবো, তার চেয়ে বিজ্ঞান পড়াই। বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে পদার্থ বুঝাতে বুঝাতে স্যার বলেন বৈজ্ঞানিক একটা ব্যাখ্যা আছে, ধর্ম বিজ্ঞান থেকে আসছে। সব কিছুই বিজ্ঞান থেকে আসছে।’

ওই শিক্ষার্থী বলে, ‘স্যারের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্ররা জিজ্ঞেস করে, স্যার যদি ধর্ম বিজ্ঞান থেকে আসে তাহলে ১৪০০ বছর আগে নবীজি (সা.) যা বলে গেছেন আজকে তাই প্রমাণ হচ্ছে। তাহলে এইটা কীভাবে সম্ভব? তখন স্যার বলে, না তখনও বিজ্ঞান ছিল, কিন্তু তখন বিজ্ঞান মানুষের ভেতর এমন প্রসারিত ছিল না।’

ওই শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলে, ‘আমার এক বন্ধু বলেছে বিজ্ঞানের অনেক কিছুই আছে কোরআন থেকে নেয়া হয়েছে। তখন স্যার অনেক কথা বলেন। এ সময় এক বন্ধুর কথায় কথাগুলো রেকর্ড করি। পরে ক্লাসের সবাই স্যারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করি।’

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ-ই-হাসান তুহিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যে অডিও ক্লিপ শুনেছি তাতে নির্দিষ্টভাবে ধর্মীয় অবমাননার তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। গোপনে শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন নিয়ে শিক্ষকের আলাপচারিতা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ার বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কাজেই ওই শিক্ষার্থীকেও আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে রহস্য উদঘাটন করা উচিত।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অজয় কুমার চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষে পরিকল্পিতভাবে কিছু শিক্ষার্থী প্রশ্ন করলে ওই শিক্ষক শিক্ষকসুলভ উত্তর দেন। তবে ছাত্ররা তা রেকর্ড করে ছড়িয়ে দেয়।’

অভিযোগের সর্বোচ্চ সাজা ২ বছরের জেল

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ক ধারায় মামলা করা হয়েছে। এই ধারায় ‘কোনো শ্রেণিবিশেষের ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে আবমাননা করে ওই শ্রেণির ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বিদ্বেষাত্মক কাজের’ সংজ্ঞা ও শাস্তির প্রসঙ্গ রয়েছে।

এই ধারায় বলা হয়, ‘যে ব্যক্তি, বাংলাদেশের নাগরিকদের যে কোনো শ্রেণির ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর অপমানিত করার অভিপ্রায়ে ইচ্ছাকৃত ও বিদ্বেষাত্মকভাবে উচ্চারিত বা লিখিত শব্দাবলির সাহায্যে বা দৃশ্যমান কোনো বস্তুর সাহায্যে ওই শ্রেণির ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমানিত করে বা অবমাননা করার চেষ্টা করে, সে ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ বুধবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই ঘটনার পর বিদ্যালয়ের পরিবেশ এখন স্বাভাবিক। শিক্ষকের বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়টি আদালত দেখবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে আমরা তা দেয়ার চেষ্টা করব।’

এ বিভাগের আরো খবর