ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে অনুমোদনের তুলনায় ৬৯ হাজার ২১৯ দশমিক ৭২০ ঘন ফুট বেশি ও ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে খাড়াভাবে পাহাড় কাটার অভিযোগে ২০২০ সালে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
একই সঙ্গে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে দুটি এনফোর্সমেন্ট মামলা ও জরিমানা করা হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিল করে সিডিএ।
এদিকে আপিল করলেও এখন পর্যন্ত শুনানি হয়েছে শুধু একবার। শুনানিতে সিডিএ তাদের যুক্তি তুলে ধরার পরেও এ বিষয়ে আর শুনানি করছে না পরিবেশ অধিদপ্তর।
বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় ঝুলে আছে বায়েজিদ লিংক রোড প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ।
বর্তমানে এ সড়কে গাড়ি চলাচল শুরু হলেও প্রকল্পের অন্যান্য কাজ এখনো শেষ হয়নি। বিশেষ করে সড়কের দুই পাশের পাহাড়ের ঢাল লেভেল না করায় মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে সড়কটি। সম্প্রতি চট্টগ্রাম পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৩তম সভায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা।
আপিল নিষ্পত্তি ছাড়াও বায়েজিদ লিংক রোদ প্রকল্পে পরিবেশগত ছাড়পত্রের মেয়াদ ২০২০ সালের মে মাসে মেয়াদউর্ত্তীর্ণ হয়ে যায়। ওই বছরের জানুয়ারিতে সিডিএকে জরিমানার পর ছাড়পত্রের নবায়ন ইস্যু করছে না পরিবেশ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে পাহাড়ের ঢাল সুরক্ষায় সংশোধিত ডিজাইন ড্রয়িং সিডিএ দাখিল করলেও সে অনুযায়ী কাজ করার অনুমতিও মিলছে না। ফলে প্রকল্পের কাজের শেষ দিকে এসে বিপাকে পড়েছে সিডিএ।
প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার লক্ষ্যে ও আপিল নিষ্পত্তি করতে পরিবেশ অধিদপ্তরে গত ৬ মার্চ চিঠি দেয় সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৯ সালে পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়া হয়। যেখানে অনুমোদিত এলাইনমেন্টে সড়ক নির্মাণে পাহাড়ের কোনো অংশে কাটা বা পাহাড়ের ঢালের কোথায় লেভেল ড্রেসিং করা হবে উল্লেখ ছিল। তা যথাযথ অনুসরণও করা হচ্ছে। পরিবেশ ছাড়পত্র ইস্যু করা সত্ত্বেও পাহাড় কাটার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দায়ী করা হয়েছে এবং জরিমানা করা হয়েছে। অথচ পাহাড়ের লেভেল ড্রেসিংয়ের কাজে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের কর্মকর্তারাও সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
তবে প্রকল্পটি শুরুর আগে সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে বায়েজিদ সংযোগ সড়ক নির্মাণে আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড়, টিলা ও মাটি কাটার প্রয়োজন হতে পারে বলে নির্ধারণ করা হয়। আর এ নির্দেশনা মানার শর্তে সিডিএকে জাতীয় স্বার্থে সড়কটি নির্মাণের জন্য ছাড়পত্র দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু তা না মেনে পাহাড় কাটে সিডিএ।
এদিকে প্রকল্পের কাজ শেষ না হলেও বর্তমানে নির্মাণাধীন সড়কটি দিয়ে প্রচুর যানবাহন চলাচল করছে। অন্যদিকে এ বছরের শেষ দিকে কর্ণফুলী টানেলের কাজ শেষ হলে এই সড়কের ওপর যান বাহনের চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে সিডিএর কর্মকর্তারা।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী চিঠিতে এ আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, ‘এনফোর্সমেন্ট মামলার কারণে প্রকল্পটির অনেক কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে পরিবেশ ছাড়পত্রের অনুসরণে পাহাড়ের ঢাল লেভেল/ড্রেসিং না করার ফলে বাইপাস সড়কটি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আগামী বছর টানেল চালু হলে এ সড়কে যানবাহন চলাচল বাড়বে। ফলে যেকোনো সময় পাহাড় ধস হতে পারে।’
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আসাদ বিন আনোয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট মামলার কারণে প্রকল্পের রেল ব্রিজ, রিটেইনিং ওয়াল ও পাহাড় সুরক্ষার কাজ এখনো শেষ করা যায়নি। ওই সড়কের পাঁচটি পাহাড় অতি ঝুঁকিপূর্ণ। আপিল নিষ্পত্তি করতে চলতি মাসে আবার চিঠি দেয়া হবে। এরপরেও কাজ না হলে বর্ষা মৌসুমে সড়কটি বন্ধ করে দেবো আমরা।’
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে। এতে প্রকল্পের শেষ দিকে এসেও বন্ধ রয়েছে অবশিষ্ট কাজ। গত দুই বছরে মাত্র একবার আপিল শুনানি করেছে। দ্রুত আপিল নিষ্পত্তি করে এনফোর্সমেন্ট থেকে সিডিএ ও স্পেক্ট্রা লিমিটেডকে অব্যহতি দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও দিয়েছি। বর্ষার আগে এটি নিষ্পত্তি না করলে নিরাপত্তার কারণে সড়কটি বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’
এদিকে সিডিএর কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। ঢাকা থেকে দেখা হচ্ছে।’
নিউজবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন শাখার পরিচালক ফজলুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো মামলা থাকার শুনানি করতে বিলম্ব হচ্ছে। এখানে আসলে আমাদের কিছু করার নেই। যেহেতু আপিল শুনানি আদালতের দিনক্ষণ দেয়ার ওপর নির্ভর করছে। তবে দ্রুতই বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করছি।’