জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যায় জড়িত সাবেক সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক রহমানের সঙ্গে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ফোনে কথা বলার ছবি আছে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই হত্যা মামলার তদন্তে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল বলেও জানিয়েছেন সরকারপ্রধান। বলেছেন, এই হত্যা মামলায় তাকে আসামি করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু এই মামলা চলাকালে তিনি মৃত থাকায় আসামি করা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনী ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিসভাকে ধন্যবাদ জানাতে বুধবার জাতীয় সংসদে কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ বিধিতে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
১৪৭ বিধিতে আলোচনা শুরু হলে আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননসহ বেশ কয়েকজন জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কথা বলেন। অভিযোগ করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়া জড়িত ছিল। তারা জিয়াকে ‘খুনি’ বলেও সম্বোধন করেন।
পরে বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কোথাও উল্লেখ নেই যে জিয়াউর রহমান হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল।
জিয়াকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাকে বারবার খুনি বলা হয়, যা দুঃখজনক।’
হারুনুর প্রতিবাদের পর সংসদ নেতা বলেন, ‘খুনিকে কেন খুনি বলবে না?’
১৯৮৭ সালে খালেদা জিয়া এবং কর্নেল ফারুক ফোনে কথা বলছেন সেটার ছবি আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রশিদের (বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি খন্দকার আবদুর রশিদ) সাক্ষাৎকারেও আছে জিয়াউর রহমান এই খুনের সঙ্গে ছিল।’
সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে, তবু আসামি হয়নি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রসিডিংস যখন শুরু হয়, সাক্ষী নেয়া হয়, তখন কিন্তু এটা স্পষ্ট হয় যে, জিয়াউর রহমান এই হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
‘তাই যদি না হবে খন্দকার মোশতাক তাকে সঙ্গে সঙ্গেই সেনাপ্রধান করবেন কেন? যতই অস্বীকার করুক, এগুলো তো রেকর্ডেড। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই।’
প্রমাণ থাকলেও কেন আসামি করা হয়নি- সেই কারণ ব্যাখ্যা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘ইনডেমনিটি (বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে বিচার থেকে রক্ষা করার আইনি সুযোগ দিয়ে জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ, যেটি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের অংশ করা হয়) যখন প্রত্যাহার করলাম, তারপর যখন মামলা করতে গেলাম আমি বললাম, জিয়াউর রহমানের নামও থাক, কারণ সেই আসল খুনি।
‘তখন আমাকে এটাই বলা হয়েছিল, যেহেতু সে এখন মৃত, তাকে আসামি করে লাভ নাই। তখনকার স্বরাষ্ট্রসচিব আমাকে এটাই বলেছিলেন, আসামি করা যাবে না। তিনিও বললেন, নামটা দেয়া ঠিক হবে না, যেহেতু তিনি মৃত। সে কারণে মামলায় জিয়ার নামটা দেয়া হয়নি।'
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের অনুসারীরা এখনও আজকেও এই সংসদে। বিএনপি নেতা হারুনুর রশীদ যে বক্তব্য দিলেন তাতেই তাদের মানসিকতা ফুটে উঠেছে। তার বক্তব্যে প্রমাণিত, তারা স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করে না, এদের অন্তরে এখনও পেয়ারে পাকিস্তান রয়ে গেছে। পাকিস্তানের গোলামিটাই তারা পছন্দ করে, ওটাই তাদের প্রিয়। হারুন সাহেবের বক্তব্যে তাদের হৃদয়ে যে পেয়ারে পাকিস্তান সেটিই প্রমাণিত হয়েছে।’
জয় বাংলা নিয়ে পাকিস্তানিরা যা করেছে, জিয়াও তাই করেছে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার মুখে ছিল জয় বাংলা স্লোগান। এই স্লোগান আলাদা উদ্দীপনা সৃষ্টি করত।...মুক্তিযুদ্ধকালীন আমরা যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে বন্দি ছিলাম, তখন সব সময় জয় বাংলা স্লোগান দিতাম। মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরে বাঙালি জয় বাংলা স্লোগানে উদ্দীপ্ত ছিল।
‘কিন্তু ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর জয় বাংলা স্লোগান একরকম নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তখন এই স্লোগান দিতে গিয়ে আমাদের ছাত্রলীগের কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। এই স্লোগান দিলেই নানান ধরনের কথা বলত, অপপ্রচার করত। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে কথাগুলো বলত, যেসব ব্যঙ্গ করত, ‘৭৫-এর পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই একই কাজ করেছে।’
জয় বাংলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘সিরাজুল আলম খান যে স্লোগান দিয়েছেন, সেটাও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে। এরপর সেই স্লোগান হয়ে যায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান।’
জয় বাংলা স্লোগান জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে ফেলতে পারবে না।’