বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সংলাপ: বিতর্ক এড়াতে ইসিকে কম কথা বলার পরামর্শ

  •    
  • ৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৮:৫৭

‘ইসির সাফল্য-ব্যর্থতা আগামী নির্বাচনের ওপর নির্ভর করবে। শতভাগ ভোটদানের নিশ্চয়তা ইসিকে দিতে হবে। সারা দেশে একদিনে নির্বাচন না করে ভাগ করে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করা যায় কি-না তা ভেবে দেখা যেতে পারে।’

নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) গণমাধ্যমের সঙ্গে কম কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও দৈনিক আজকের পত্রিকা সম্পাদক ড. গোলাম রহমান। নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘গণমাধ্যমের সঙ্গে যত কম কথা বলবেন তত ভুল কম হবে।’

রাজধানীর আগারগাওঁয়ে নির্বাচন ভবনে বুধবার সংলাপে অংশ নিয়ে আজকের পত্রিকা সম্পাদক এমন পরামর্শ দেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে ইসির তৃতীয় দফা সংলাপে ২৩ সম্পাদকসহ ৩৪ জন সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে সংলাপে অংশ নেন ২৩ জন। বাকি ১১জন ইসির এই আমন্ত্রণে সাড়া দেননি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। সিইসির এ বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনানুষ্ঠানিক বার্তা পাঠিয়েছেন ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মান্টিটস্কি। সিইসির বক্তব্যকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান হিসেবে দেখছে রুশ দূতাবাস। এবার ইসিকে কম কথা বলার পরামর্শ দিলেন সম্পাদক গোলাম রহমান।

এদিকে আনুষ্ঠানিক কোনো কমিশন সভা না করেই গত মাসে দু’দফা সংলাপে বসে ইসি। তবে সম্পাদকদের সঙ্গে সংলাপে বসার আগের দিন নিজেদের প্রথম কমিশন সভায় বসে তারা।

গোলাম রহমান বলেন, ‘কী ধরনের সংকট আসতে পারে তা কিন্তু আপনারা নিজেরাও জানেন। তর্ক-বিতর্ক যাই থাকুক, সব দল অংশ নিলে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সুযোগ থাকে। গত নির্বাচনে সব দল অংশ নিলো। আমরা দেখলাম বেলা ১২টা পর্যন্ত ভাল নির্বাচন হলো। তাই দলগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।’

জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দলগুলোর ফান্ড কিভাবে আসে? এমন নানা প্রশ্ন আসে। সুতরাং সবকিছু মিলিয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। কমিশনকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। দলগুলোকে কিভাবে আস্থায় আনা যায় সে কৌশল আপনাদের নিতে হবে।’

ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা না করার প্রস্তাব

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ না দেয়ার প্রস্তাব এসেছে ইসির সংলাপে। এক্ষেত্রে ইসির নিজস্ব লোকবলকে এ দায়িত্বে নিয়োজিত করার কথা বলা হয়েছে।

সংলাপে অংশ নিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন এমন প্রস্তাব তোলেন।

তিনি বলেন, ‘ইসির সাফল্য-ব্যর্থতা আগামী নির্বাচনের ওপর নির্ভর করবে। তাই বাধাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। শতভাগ ভোটদানের নিশ্চয়তা ইসিকে দিতে হবে। আগের ইসির কী ভুল ছিল, আর তার আগের ইসি কী ভাল কাজ করেছে, তা চিহ্নিত করতে হবে।

‘সারা দেশে একদিনে নির্বাচন না করে ভাগ করে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করা যায় কি-না তা ভেবে দেখা যেতে পারে। ভারতে যেমনটা হয়, এক মাস পর ভোটের ফল প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে এখনো চিন্তা করা যায় না যে ভোটগ্রহণের এক মাস পর ফল প্রকাশ হবে।’

দলগুলো হেরে গেলে ভোটের ফল মেনে নিতে চায় না মন্তব্য করে জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বলেন, ‘যদি গণতন্ত্র চাই, তাহলে নির্বাচনে হারলে তা মেনে নিতে হবে। যারা নিজেদের অবস্থান জানে, তারা আগে থেকেই ভাবতে থাকে কিভাবে এই হারটা ঠেকানো যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘জেলা প্রশাসক কেন রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন। ইসির নিজস্ব লোকবল না থাকলে আগামী দুই বছরে সেই লোকবল আনতে হবে। প্রশাসনের কোনো লোক নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবে না। কয়েক ভাগে ভাগ করে নির্বাচন করলে ইসির লোকবল দিয়েই নির্বাচন করা সম্ভব।

‘সংসদের ৩০০ আসন নিয়ে ইসির গবেষণা থাকা উচিত। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা টিএন সেশন (ভারতের সর্বজনবিদিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার) চাই, নূরুল হুদা চাই না।’

‘মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পাওয়ার সুযোগ আছে’

নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে ইংরেজি দৈনিক নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, ‘আপনারা ব্যক্তিগত জীবনে যা অর্জন করতে চেয়েছিলেন তা পেয়েছেন। এখন নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন, এই পদগুলো বোনাস। তাই জীবনে আর হারানোর কিছু নেই। মানুষের শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা পাওয়ার সুযোগ আছে।

‘আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল সত্তরের নির্বাচনের ফল পাকিস্তান মানেনি বলে। বিচারপতি সাত্তার কমিশনের অধীনে যেমন নির্বাচন হয়েছিল, তেমন নির্বাচন যদি করতে না পারি তাহলে সেটা আমরা, রাজনৈতিক দলগুলো, নির্বাচন কমিশন- সবার জন্য লজ্জার।’

নূরুল কবীর বলেন, ‘সংবিধানে বলা আছে যে নির্বাচনের সময় নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করবে। তাই আপনারা চাইলে নির্বাহী বিভাগকে আপনাদের কথা মানতে বাধ্য করতে পারেন। সেটা করবেন কি-না তা আপানাদের সিদ্ধান্ত। যে বাছাই কমিটির মধ্য দিয়ে কমিশনের নিয়োগ হয়েছে, সেই কমিটির প্রতি মানুষের আস্থা নেই। কাজেই আপনাদের আস্থা অর্জন করতে হবে।’

‘ইসির ভাবমূর্তি শূন্যের কোটায় নেমে গিয়েছিল’

নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি শূন্যের কোটায় চলে গিয়েছিল মন্তব্য করে ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা। যে কোনো একটি নির্বাচন তাদের জন্য এসিড টেস্ট হবে। তারা প্রথমেই কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এটাকে আমরা ব্যর্থতা হিসেবে দেখছি।

‘কমিশনের মধ্যেই বিভক্তি- এরকম যেন না হয়। ইসি যেন একক ইউনিট হিসেবে কাজ করে। আরেকটি বিষয় হলো সব দলকে নির্বাচনে আনা। এটি কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু গত কমিশনের সে চেষ্টাও ছিল না। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানিয়েছেন, এটা লজ্জার বিষয়। কাজেই নির্বাচন কমিশনের এখানেও একটি রোল আছে।’

তিনি বলেন, ‘কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এটা ইসির এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। যে সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক ইসির দায়িত্ব হবে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেয়া। তবে যেখানে রাজনৈতিক সমঝোতা নেই, আস্থা নেই; সেখানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা খুবই দুরূহ কাজ।‘

অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী ইসিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘সংবিধানের আওতায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাই জানেন আপনাদের দায়িত্ব কী। দায়িত্ব পালনে কোথাও কোথাও বাধা আসতে পারে তা-ও আপনারা জানেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আরপিওতে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) ক্ষমতা দেয়া আছে, সংবিধানেও আছে। সেটা প্রয়োগ করতে হবে।

‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকটি নির্বাচন হবে। এমনকি উপনির্বাচনও হতে পারে। সেই নির্বাচন হচ্ছে লিটমাস টেস্ট। ভাল করতে পারলে যাদের এখন নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর অনাস্থা রয়েছে, সেগুলো থাকবে বলে মনে হয় না। সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে রাজনৈতিক অচলায়তন দূর হবে।’

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন এর আগে ১৩ মার্চ প্রথম দফায় ৩০ শিক্ষাবিদকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তাতে ১৭ জনই সাড়া দেননি। দ্বিতীয় দফার সংলাপে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও পরে একজনকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। ওই পর্যায়ে ৩৯ বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে সংলাপে অংশ নেন ১৯ জন।

এ বিভাগের আরো খবর