রংপুরে দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকাগামী বাস ও কোচ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাসচালকদের ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে এ ধর্মঘট শুরু করেন পরিবহন শ্রমিকরা। তবে ধর্মঘট প্রত্যাহারে কার্যত কোনো উদ্যোগ নেই। কবে প্রত্যাহার হবে তাও জানে না মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন ও স্থানীয় প্রশাসন।
বুধবার কামারপাড়া কোচ স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় অর্ধশত বাস স্ট্যান্ডে পড়ে আছে। অধিকাংশ কাউন্টার বন্ধ। এসব বাসের শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। তবে, আন্তজেলা ও আন্তবিভাগ মিনিবাস চলাচল করছে।
চালক ও সহযোগীদের ভাষ্য , বেতন ভাতা বৃদ্ধি, নিয়োগপত্র প্রদান, হয়রানি বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে তাদের এই ধর্মঘট। দাবি পূরণের বিষয়ে মঙ্গলবার ঢাকায় একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা হয়নি।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার সহযোগী লিটন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার ঢাকায় নেতাদের বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠক হয়নি। সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।’সোহেল নামে আরেক কাউন্টার সহযোগি বলেন, ‘অনেক কথাই বলা যায় না। আমরা চাই যে দাবিগুলো উঠছে, সেগুলো পূরণ হোক। কারণ একদিন বসে থাকলে মালিকপক্ষ আমাদের খোরাকি দেয় না। চাকরি করি কিন্তু একদিন অসুস্থ হলে বেতন দিবে, সেটা হয় না।’
ধর্মঘটের নামে যাত্রী ভোগান্তির কথা বলছেন সাধারণ যাত্রীরা। কামারপাড়া স্ট্যান্ডে এসে গাড়ি না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শহিদুল ইসলাম নামে এক যাত্রী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মডার্ণ মোড় থেকে ঘুরে আবার স্টান্ডে আসলাম। কোথাও গাড়ি নাই। একজন বলল ভাঙি ভাঙি ঢাকায় যাবার। এটা কোনো কথা? রংপুর থাকি বগুড়া তারপর নাটোর, তারপর সিরাজগঞ্জ এমন করি ঢাকা যাওয়া সম্ভব?’
যাত্রী আসলাম মিয়া বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ এই সুযোগ নেওছে মাইক্রোওয়ালারা। ১২ শ থাকি ১৫ শ টাকা চাওছে। আমরা গরীব মানুষ। এত টাকা দিয়ে কী যাওয়া যায়?’
কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড শ্রমিক ইউনিয়নের উপকমিটির সাধারণ সম্পাদক মিঠ মিয়াু বলেন, ‘আমি ধর্মঘট ডাক দেই নাই। মালিকরা কী কারণে পরিবহনগুলো বন্ধ রেখেছে, সেটি আমরা জানি না। আমরা শুনছি আইজ বৈঠক হবে। তাও ঠিকমতো জানি না।’
বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন রংপুর বিভাগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ বলেন, ‘মালিকপক্ষ থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা বাস বন্ধ করি নাই। একদিন বাস বন্ধ করলে আমাদের শ্রমিকদের কষ্ট হয়, আমরা কেন বাস বন্ধ করতে যাব? বাস বন্ধ করার কোনো ইস্যু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে আমরা সরকারের কাছে নিয়োগপত্র, হয়রানি বন্ধসহ বিভিন্ন দাবি তুলেছিলাম। সেটি আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। সুতরাং এই ধর্মঘট আমরা ডাকিনি।’
এ বিষয়ে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আফতাবুজ্জামান লিপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ধর্মঘটের সঙ্গে মালিক সমিতির কোনো সম্পর্ক নেই। এই গাড়িগুলো বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আওতায়। তারাই বিষয়টি দেখতেছে।’
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় কথা বলেছি। শ্রমিকরা বলছে, তারা ধর্মঘট করেনি। আবার মালিকপক্ষও বলে তারা বাস বন্ধ করেনি। বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে, দ্রুত সমাধান হবে।’