বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেজি দরে বিক্রি, তাহলে এক বা দুই কেজি নয় কেন

  •    
  • ৬ এপ্রিল, ২০২২ ০৮:৫১

কেজি হিসাবে কিনলে ক্রেতার চোখে দেখে অনুমান করে কিনে ঠকার সুযোগ নেই। তবে কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী, ফলটি পাইকারি বাজারে গোটা হিসাবে বিক্রি হয় বলে খুচরায় কেজি দরে বিক্রির সুযোগ নেই।

বিক্রেতা বিক্রি করবেন কেজি দরে, তবে দুই কেজি চাইলে দেবেন না।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবনের উল্টোপাশে তরমুজ সাজিয়ে বসেছেন মোহাম্মাদ আমান। দাম জানতে চাইলে বলেন, ‘পিস ৩০০, কেজি ৪০ টাকা।’

দুই কেজি দেন- শুনে আমান বলেন, ‘পিসই বেচি। এহন অনেকেই কেজিতে চায়। কেজিতে নিতে হইলেও মনে করেন যে আস্তা নিতে হইব।’

যে তরমুজটির দাম ৩০০ টাকা হেঁকেছেন, সেটি মেপে সাড়ে সাত কেজি পাওয়া গেল। ৪০ টাকা কেজি দরে ফলটির দাম দাঁড়ায় ৩০০ টাকাই।

আপনারা তরমুজ কীভাবে কেনেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পিসই কিন্যা আনি। পিস বেচি। যেডা এট্টু ছোড হেইগুলা কেজিতে নেয়।’

যখন আলাপ চলছিল ঠিক তখনই এক ক্রেতা এসে জানতে চাইলেন, তরমুজের কেজি কত? আমান বললেন, ‘৩০০ টাকা পিস নিতে পারবেন এক দাম।’

আরেকটু সামনে এগিয়ে দেখা গেল ডিজিটাল স্কেল মেশিনে মেপে তরমুজ বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা। তার নাম সুমন হোসেন। দাম চাইলেন ‘৩০ টাকা কেজি।’

দুই কেজি দেন- তখন আবার বেঁকে বসলেন সুমন। বলেন, ‘এডা তো গোডাটাই নিতে হইব। কাডি (কেটে) বিক্রি করা যাইত নঁ।’

তরমুজ কীভাবে কিনে আনেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঠিকা কিনি আনি শত (১০০ পিস)।’

পিস হিসাবে কিনে কেজি দরে বিক্রি করা তো আইনে বাধা- এ কথা বললে সুমন বলেন, ‘আইনের কথা কইয়া লাভ আছেনি? আইন তো আছেই।’

পিস হিসাবে বিক্রি করে লাভ নাকি কেজিতে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনিশ, বিশ আরি। কহনো কেজিতে কহনও ঠিকায় লাভ।’

কেজি-আস্ত বিতর্ক চলছেই

কয়েক বছর ধরে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি নিয়ে তুমুল যে বিতর্ক, সেটি আরও একটি মৌসুমে দেখা যাচ্ছে।

কেজি হিসাবে কিনলে ক্রেতার চোখে দেখে অনুমান করে কিনে ঠকার সুযোগ নেই। তবে কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী ফলটি পাইকারি বাজারে গোটা হিসাবে বিক্রি হয় বলে খুচরায় কেজি দরে বিক্রির সুযোগ নেই।

বড় আকারের একমাত্র ফল হিসেবে কেজি দরে বিক্রির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তরমুজের ক্ষেত্রে। আবার অন্য যেসব ফল কেজি হিসাবে বিক্রি হয়, সেগুলো ক্রেতা চাইলে এক কেজি, দুই কেজি বা যেকোনো একক নিতে পারেন। কিন্তু এখানে তা নয়। কেজি হিসাবে বিক্রি করছেন বিক্রেতা, কিন্তু ক্রেতাকে নিতে হবে আস্ত ফলটাই।

পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে খুচরা বিক্রেতার মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করা ঠেকানোর কোনো কার্যকর উপায় এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবার খুচরা বিক্রেতাদের বেশভূষা ক্রেতাদের অনেক ক্ষেত্রেই তাদের প্রতি সমব্যথী করে তোলে।

ফলের ক্ষেত্রে পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে দামের পার্থক্য হতে পারবে, সেটিও আইনে বলা আছে। অন্য ফলের তুলনায় তরমুজে মুনাফা করা যাবে কম- এটাও আইনের বিধান। এ ক্ষেত্রেও আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে।

সোমবার রাজধানীর বাদামতলী আড়ত, কারওয়ান বাজারের পাইকারি ও খুচরা বাজার এবং বাড্ডার মহল্লার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় সব জায়গায় কেজি দরেই বিক্রি হয়। তবে আড়তে বিক্রি হয় গোটা হিসাবে।

আকারভেদে তরমুজ তিন কেজি থেকে ১২ কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের দেখা গেছে। খুচরায় বিক্রেতারা দাম চাইছেন ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে।

ছোট ফলের দাম কম, আর আকারে বড় হলে কারওয়ান বাজারে দর ৩৫ থেকে ৪০ আর মহল্লার বাজারে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।

বাদামতলীর যে চিত্র

রাজধানীর ফলের আড়ত পুরান ঢাকার বাদামতলী। বিক্রেতাদের যেন দম ফেলার সময় নেই।

বায়তুল আমান জামে মসজিদের সামনে রাখা হয়েছে সারি সারি তরমুজের স্তূপ। কোথাও নামছে ট্রাক থেকে। কোথাও খুচরা বিক্রেতারা সেখান থেকে ফল কিনে মিনি ট্রাকে তুলছেন।

খানিক সামনে গেলেই দেখা মিলল তরমুজের আরেক স্তূপ। বুড়িগঙ্গা নদীর ঘাটে এসে ভিড়েছে ট্রলারবোঝাই তরমুজ। বেশ কয়েকজন শ্রমিককে দেখা গেল সেই তরমুজ তুলে তারা আড়তে নামাচ্ছেন।

অন্যদিকে তরমুজের চেয়ে আপেল, কমলা, আঙুর ও মাল্টার ক্রেতা-বিক্রেতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

সেখানকার বায়তুল আমান মসজিদের পাশে তরমুজের বিশাল সারি। হাজার হাজার ফল স্তূপ করে রাখা।

মা-বাবার দোয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ শত নেয়, কেউ হাজার নেয়। পিসের হিসাব। বড় সাইজ (১২ থেকে ১৫ কেজি ওজনের) হইলে দর হয় ৩৫ হাজার (প্রতি ১০০)। কোনোটার দর হয় ৩০ হাজার। আবার মাঝারি সাইজ ২৫ হাজার কোনোটার ২০ হাজার (আট থেকে ১০ কেজি)। ছোট সাইজের মধ্যে ১৫ হাজার ১০ হাজার আবার ৫ হাজারও আছে।’

একটি বড় আকারের তরমুজ দেখিয়ে এই দোকানি বলেন, ‘ওই মালডার ওজন আছে ১২ কেজি, দোকানে বেচবে ৬০০ টাকা। আমাগো বিক্রি আছে ৩০০ টাকা। হেরা দোকানে খুচরা নিলে কেজি ৫০ টাকা বেচে।’

তিনি জানান, এখানে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী আর চর কপালপাড়া থেকে তরমুজ আসছে। চাহিদা কেমন- এমন প্রশ্নে বলেন, ‘দুই দিনে প্রায় ২২০০ থেকে ২৩০০ পিস মাল বেচছি। বেচাবিক্রি ভালো আছে।’

আরেক তরমুজ বিক্রেতা নুরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দশ হাজার টাকা দর (ছোট আকারের ১০০)। আবার আড়তদারি আছে এক হাজার টাকা।’

পাশেই আকারে ছোট তরমুজ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা বিক্রি করতেছি পাঁচ হাজার টাকা দর। তার মানে ৫০ টাকা পিস। খরচ নিয়ে পড়ে ৫৫ টাকা।’

মেসার্স শাহজাহান ফুড এজেন্সির আড়তদার মোহাম্মাদ শাহজাহান বড় আকারের তরমুজ দেখিয়ে বলেন, ‘৩৩০ টাকা পিস পাইকারি। ওজন ১১ থেকে ১০ কেজি হবে। কেজি হিসাবে ৫০ টাকা বেচে। ১০ টাকা তো লাভ করতে হয়। খরচ আছে আরও। একটা তরমুজ নষ্ট হইয়া যাইতে পারে। ফাইটা যায়।’

‘কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী ফলের ক্ষেত্রে কেজিতে ১০ টাকা লাভ করতে পারবেন এমন বিধান রয়েছে। তবে তরমুজের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা আছে। কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকার বেশি লাভ করতে পারবেন না। আর কেজি বা পিস যেভাবেই কিনবেন সেভাবেই বেচতে হবে।’

খুচরা বিক্রেতা যা বলছেন

বাদামতলী থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে জনসন রোডে ইউসুফ কনফেকশনারির ফলের দোকানে বড় আকারের তরমুজ সাজিয়ে রেখেছেন মোহাম্মাদ হোসেন। দাম কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৫০ টাকা কেজি।’

পিস হিসাবে কিনে কেজি হিসাবে বিক্রি করা আইন অনুযায়ী অন্যায়- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘ঠিকাও বেচি আবার কেজিও বেচি। যে যেমনে লয়।’

কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের সঙ্গে ফুটপাতে তরমুজ নিয়ে বসেছেন এক বিক্রেতা। এক ক্রেতা কিনতে চাইলে দাম চাইলেন ৪০ টাকা কেজি।’

কেজি দরে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘পিস হিসাবেও বেচি, আবার কেজি হিসাবেও বেচি। যে যেমনে নেয়।’

আইনে কী বলে

কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী ফলের ক্ষেত্রে কেজিতে ১০ টাকা লাভ করতে পারবেন এমন বিধান রয়েছে। তবে তরমুজের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা আছে। কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকার বেশি লাভ করতে পারবেন না। আর কেজি বা পিস যেভাবে কিনবে, সেভাবেই বেচতে হবে।

দুই বছর ধরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জেলায় জেলায় অভিযান চালিয়ে তরমুজ বিক্রেতাদের জরিমানা করছে। এবারও কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। তবে পাড়া-মহল্লায় কেজিতে বিক্রি, এটাই স্বাভাবিক চিত্রে পরিণত হয়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেজি হিসাবে বিক্রি করলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

কোথায় এ রকম ঘটনা পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর।’

কতজনকে কত টাকা জরিমানা করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আমরা প্রতিদিন কম-বেশি জরিমানা করে থাকি।’

সর্বোচ্চ সাজা কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূল্যতালিকা না থাকলে ৫০ হাজার। কেজি দরে বিক্রি করলেও সর্বোচ্চ সাজা ৫০ হাজার টাকা।’

এ বিভাগের আরো খবর