স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হবে। বুধবার বিকেল ৩টায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দিদার বলেন, ‘বুধবার বিকেল ৩টায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হসপিটালে নেয়া হতে পারে।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় দফায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে নিজের ঘরে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর নিজের বাসায় ফেরেন তিনি।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৮১ দিনের মাথায় সেদিন গুলশান-২-এ নিজের বাসা ফিরোজায় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রাত সাড়ে ৮টার কিছু সময় আগে তিনি বাসায় ফেরেন।
বিএনপি নেত্রীর হাসপাতাল এবং বাসার সামনে দলের নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা যায়। দুই জায়গাতেই তারা তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দেন।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ ৬ মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে বিএনপি নেত্রী বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছিলেন। এরপর ধাপে ধাপে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
বিএনপি নেত্রী এ নিয়ে চারবার গেলেন এই হাসপাতালটিতে। এর মধ্যে তিনবার তিনি ভর্তি হন সেখানে। প্রথমবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি সেখানে যান সিটি স্ক্যান করতে।
বিএনপি নেত্রী ওই বছরের ২৭ এপ্রিল প্রথমবারের মতো ভর্তি হন হাসপাতালটিতে। থাকেন ৫৩ দিন। বাসায় ফেরেন ১৯ জুন।
দ্বিতীয় দফায় একই বছরের ১২ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ২৬ দিন হাসপাতালে থাকার পর কেবল ৭ দিন তিনি ফিরোজায় কাটিয়েছেন।
তৃতীয় দফায় বিএনপি নেত্রী হাসপাতালটিতে ভর্তি হন গত ১৩ নভেম্বর। ৮১ দিনের মাথায় তিনি ঘরে ফেরেন।
খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার চিকিৎসক দল। বিএনপি নেত্রীকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে করোনার ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন তার চিকিৎসক ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী।
খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানা সময়ে নানা বক্তব্য দিয়েছে বিএনপি। তার জীবন সংকটাপন্ন, মুমূর্ষু বলে জানানো হয়েছে, তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়েছে, তার প্রধান অসুখ লিভার সিরোসিস। এর চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়।
হাসপাতাল থেকে মুক্তির আগে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা জানান কী ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী জানান, ১৩ নভেম্বর বিএনপি নেত্রীর খাদ্যনালির ওপরের অংশে রক্তক্ষরণ হয়েছিল, সেটির চিকিৎসা হয়েছিল ১৪ তারিখে। ৬টা ব্যান্ডিং করা হয়েছিল।
তারপরে ২৩ তারিখে ওনার আবার বড় রকমের রক্তক্ষরণ হয়। সেটি প্রচলিত এন্ডোস্কপ করে বন্ধ করা যায়নি। তখন ‘ক্যাপসুল এন্ডোস্কপ’ নামে একটি যন্ত্র বিদেশ থেকে আনিয়ে ২৪ ডিসেম্বর রক্তক্ষরণের উৎসটা বের করে ব্যবস্থা নেয়া হয়। গত ৩ জানুয়ারি সেই বিশেষ এন্ডোস্কপি করা হয়।
এরপর আপার চেম্বারে আরও ৫টি ব্যান্ড দিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়।
খালেদা জিয়ার টিউমার কেটে বাদ দেয়া হয়েছে বলেও জানান এই চিকিৎসক। বলেন, এই চিকিৎসাও শেষ করা যায়নি।
লিভারের রক্তক্ষরণ ও টিউমারের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার পরামর্শও দেন এই চিকিৎসক।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে দুর্নীতির দুই মামলার দণ্ড স্থগিত হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বিএনপি নেত্রী ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান।
সে সময় দুটি শর্তের কথা বলা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এগুলো হলো, ১. বিএনপি নেত্রী চিকিৎসা নেবেন তার বাসায়, ২. তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
তবে গত বছরের এপ্রিলে বিএনপি নেত্রী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম শর্তটি আর কার্যকর থাকেনি। তিনি চারবার এভারকেয়ারে যান এবং তিনবার সেখানে ভর্তি হন। তবে স্বজনদের আবেদন ও তার দলের নানা কর্মসূচিতেও সরকার তাকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি দেয়নি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়া খালেদা জিয়ার দণ্ড পরে আপিলে দ্বিগুণ হয়। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তার ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়।
উচ্চ আদালতে জামিন করাতে ব্যর্থ হওয়ার পর খালেদা জিয়ার স্বজনরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন নিয়ে যান।