বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কুয়েট ছাত্র অন্তুর মৃত্যুর দায় কার?

  •    
  • ৫ এপ্রিল, ২০২২ ২১:৪৩

সৌরভ বৈরাগী বলেন, ‘অন্তুদের পরিবারের অবস্থা ভালো নয়। তাই অন্তু প্রায়ই অর্থকষ্টে থাকত। অন্তু একটি টিউশনি করাত। তবে এক মাস আগে ওই টিউশনিটি থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়। এতে সে কিছুটা ভেঙে পড়েছিল।’

‘দাদা তুই আমাদের একমাত্র ভরসা ছিলি। এভাবে কেন চলে গেলে। আমরা এখন কী নিয়ে বাঁচব।’

ভাই অন্তু রায়ের পোশাক জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন চৈতী রায়।

অন্তু খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়তেন। সোমবার ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করেন পরিবারের সদস্যরা।

অন্তুদের এই বাড়ি খুলনা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে। পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় রাস্তার ধারে ছোট বাড়িতে মঙ্গলবার সকালে যান নিউজবাংলার প্রতিবেদক। বাড়িতে ঢুকেই শুনতে পান কান্নার আওয়াজ। ছোট বোনটি যখন কাঁদছিল দিনমজুর বাবা দেবব্রত রায় তখন ঘরের বারান্দায় মলিন মুখে বসেছিলেন। একমাত্র ছেলের শোকে মা গীতা রায় ছিলেন পাগলপ্রায়।

অন্তুদের বাড়িটি খুব ছোট, মাত্র দুটি কক্ষ ও একটি বারান্দা। মাটির টালি ও টিনে দেয়া হয়েছে ঘরের ছাউনি। বোন চৈতী জানান, একটি রুমে থাকত অন্তু, আরেকটিতে সে। আর বারান্দায় থাকেন মা-বাবা। অন্তু বাইরে থাকলে তার বাবা-মা অন্তুর রুমে রাতে ঘুমাতেন।’

বারান্দায় বাবা-মার থাকতে কষ্ট হয় বলে অন্তু প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতেন। ঘটনার আগের দিন রাতে (রোববার) বাড়ির পাশের একটি চিংড়ি ঘেরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু সৌরভ বৈরাগীর সঙ্গে ছিলেন অন্তু।

বন্ধুর সঙ্গে কী কথা হয়েছিল এই প্রশ্নের উত্তরে সৌরভ বলেন, ‘প্রথম দুই বছর অন্তু বাড়ি থেকেই কুয়েটে ক্লাস করতে যেত। এরপর সে হলে সিট পায়। কিন্তু কিছুদিন হলো নানা অজুহাতে সে বাড়ি চলে আসত, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত চাইত না। কী কারণে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাচ্ছে না, তা আমি একাধিকবার জিজ্ঞাসা করেছি। তবে সে কিছুই বলেনি।’

তিনি বলেন, ‘গত রোববার (২৭ মার্চ) অন্তুর অ্যাকাডেমিক ভাইভা ছিল। তার বন্ধুদের কাছ থেকে জেনে আমি অন্তুকে ভাইভা দিতে যেতে বলি। কিন্তু সে কিছুতে কুয়েটে যেতে রাজি হচ্ছিল না।’

সৌরভ বৈরাগী বলেন, ‘অন্তুদের পরিবারের অবস্থা ভালো নয়। তাই অন্তু প্রায়ই অর্থকষ্টে থাকত। অন্তু একটি টিউশনি করাত। তবে এক মাস আগে ওই টিউশনিটি থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়। এতে সে কিছুটা ভেঙে পড়েছিল।’অন্তুর অর্থকষ্টে থাকার বিষয়টি সামনে এনেছেন তার হলের (ড. এম রশীদ হল) সঙ্গীরাও। এই হল পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজেদুল কবীর বাপ্পী বলেন, ‘অন্তু কয়েকজনের সঙ্গে অর্থকষ্টের কথা শেয়ার করেছিল। মুরসালিন আলম নামের তার এক বন্ধু অন্তুর জন্য দুটি টিউশনির ব্যবস্থা করেছিল। শিগগিরই অন্তু তাদের পড়াতে যেতে প্রস্তুতি নিয়েছিল।’

তিনি বলেন, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি হলের ১১৮ নম্বর কক্ষের একটি সিট তাকে বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে এক শিক্ষক মৃত্যুর ঘটনায় কুয়েট বন্ধ হলে অন্তু বাড়িতে চলে যায়। সর্বশেষ রোববার (৩ এপ্রিল) সে আবারও হলে ওঠে। ডাইনিং চালু করার আবেদন করে। এর পর পরই আবার বাড়িতে চলে যায়।

কুয়েট হল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর হলের ডাইনিংয়ের খাবার বাবদ অন্তুর কাছে কর্তৃপক্ষের বকেয়া ছিল ৬ হাজার ৬৫৫ টাকা।

এ ছাড়া মার্চের ২৮ তারিখে কুয়েটের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কোর্স রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছিল। বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে ৭ এপ্রিলের মধ্যে ১ হাজার ৮৫০ টাকা পরিশোধ করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে বলা হয়েছিল।

যা বলছে পরিবার

অন্তুর মা গীতা রায় বলেন, ‘ছেলে আমার কাছে টাকা চেয়েছিল। আমি ধার করে তাকে ৩ হাজার টাকা এনে দিয়েছিলাম। সে বলেছিল ওই টাকা দিয়ে কোনো রকমে চালিয়ে নেবে।’

তিনি বলেন, ‘ছেলে প্রায় আফসোস করত, কবে লেখাপড়া শেষ হবে। আর কবে একটা চাকরি করে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। আমি তাকে সন্ত্বনা দিতাম, চিন্তা করিস না। একদিন তুই মানুষের মতো মানুষ হবি।’

অন্তু রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় ডুমুরিয়া থানায় সোমবার একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন তার চাচা প্রবীর রায়।

তিনি বলেন, ‘অন্তুর বাবা-মা দুজনই পরের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করেন। তারা যা আয় করেন তার একটি বড় অংশ চলে যেতে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার পেছনে।’

পুলিশ যা বলছে

ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মতর্কা (ওসি) ওবায়দুর রহমান বলছেন, ‘আমরা অন্তুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ওই রিপোর্ট পেলে বিষয়টি চূড়ান্তভাবে বলা যাবে, অন্তুকে হত্যা করা হয়েছে না কি তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু অন্তুর শীরের কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। হত্যার কোনো আলামতও নেই। তাই আমরা ধারণা করছি তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’

ওসি বলেন, ‘ডুমুরিয়ায় আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি। আমরা আত্মহত্যার প্রবণতা কমানোর জন্য কমিউনিটিং পুলিশের উদ্যোগে নিয়মিত সভা সেমিনার করছি।’

তিনি জানান, ২০২২ সালের শুরু থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ২৪ জন আত্মহত্যা করেছেন। এর আগে ২০২১ সালে ৭৬ জন, ২০২০ সালে ৭৪ জন, ২০১৯ সালে ৬৫ ও ২০১৮ সালে ৫৬ জন আত্মহত্যা করেছেন।

এ বিষয়ে সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনোবিজ্ঞান প্রভাস চন্দ্র অধিকারী বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি আলাদা আলাদা কারণে আত্মহত্যা করে থাকেন। তবে আত্মহত্যার পেছনে দায়ী মূলত নিজের ওপর অনাস্থা ও অবিশ্বাস।’

এ বিভাগের আরো খবর