বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

র‍্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আশাবাদী মোমেন

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৫ এপ্রিল, ২০২২ ২০:৩৯

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন জানান, বৈঠকে চমৎকার আলোচনা হয়েছে। ব্লিঙ্কেন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা এবং ঢাকার সঙ্গে একত্রে কাজ করতে ওয়াশিংটনের ইচ্ছার কথা জানান।

গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ এনে র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে শেষে তিনি গণমাধ্যমে এমন আশা ব্যক্ত করেন।

বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, বৈঠকে নির্বাচন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তরসহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।

মোমেন বলেন, ‘ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে চমৎকার আলোচনা হয়েছে। ব্লিঙ্কেন তার সূচনা বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র- বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা এবং ঢাকার সঙ্গে একত্রে কাজ করতে ওয়াশিংটনের ইচ্ছার কথা জানান।

‘ব্লিঙ্কেন বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেল হয়ে উঠেছে। ওয়াশিংটন সত্যিই দুই দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব জোরদার করতে আগামী ৫০ বছর একসঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছে।’

মোমেন বলেন, ‘আমি ব্লিঙ্কেনকে বলেছি যে ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার ভূমিতে পরিণত হয়েছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তর, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল, রোহিঙ্গা ইস্যু, ইন্দো-প্যাসেফিক কৌশল, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াসহ ব্যাপক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

র‌্যাব প্রসঙ্গে আলোচনা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রকে র‌্যাব এবং এর কিছু বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছি। কারণ এই এলিট ফোর্স বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমন এবং মাদক পাচার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’

‘তাদের বলেছি যে আমরা সব প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি (মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্যা সমাধানের জন্য)।’

গত চার মাসে র‌্যাবের সঙ্গে কোনো বন্দুকযুদ্ধ ঘটেনি বলেও আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন মোমেন।

তিনি বলেন, ‘র‌্যাব হয়তো কখনও কখনও কিছু বাড়াবাড়ি করেছে। কিন্তু জবাবদিহিতার জন্য একটি নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে। এবং যারা অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।’

বাংলাদেশে যখন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল তখন আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ৩০০ জনেরও বেশি আহত হয় বলেও জানান মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের ক্ষেত্রে র‌্যাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে (জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন)।’

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি র‌্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন এবং এটিকে এফবিআইয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন বলেও জানান তিনি।

ড. মোমেন বলেন, ‘ব্লিঙ্কেন গত চার মাসে র‌্যাবের কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি খুব আশাবাদী যে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।’

বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া

একটি স্বচ্ছ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন ড. মোমেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা আছে। আমাদের একটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) আছে। তারা (কমিশন) স্বাধীন এবং নির্বাচনের সময় তারাই বস।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে।’

রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তর

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ও দণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিও বৈঠকে উত্থাপন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

একজন খুনিকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেয়া উচিত নয় বলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তর দুই দেশের ৫০ বছরের সম্পর্ক উদযাপনে একটি গেম চেঞ্জার হবে।’

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ

অবকাঠামো, আইটি ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।

বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকায় বিনিয়োগের নব্বই শতাংশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে। আমি চাই আপনারা বাংলাদেশে আইটি ও ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো খাতগুলোতে বিনিয়োগ করুন।

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ালে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি বাড়বে যা ওয়াশিংটনকে নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিকের উদ্বেগ নিরসনে সাহায্য করবে।’

মোমেন বলেন, ‘আমি বলেছি যে আমরা একটি মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, উন্মুক্ত এবং সুরক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চাই। এতে আপনাদের উপস্থিতি থাকলে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। যুক্তরাষ্ট্র বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’

জিএসপি পুনর্বহালের উদ্যোগ

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা ২০১৩ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এই বাজার সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বাংলাদেশে শ্রম পরিস্থিতির আরও উন্নতি হলে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করবে বলে জানিয়েছেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।

রোহিঙ্গা ইস্যু

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সহিংসতাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান এ কে আব্দুল মোমেন।

সংকট সমাধানে আসেম ও কোয়াড সদস্যদের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা-নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে সরাসরি বিমানের ফ্লাইট চালুতে উদ্যোগ নেয়ারও আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তার সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হানিফ, নাইম রাজ্জাক, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আমেরিকা) তৌফিক ইসলাম শাতিল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর