ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে এক সপ্তাহে ৪৫৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। সীমিত শয্যায় আর সংকুলান হচ্ছে না, হাসপাতালের বারান্দা ভরে গেছে রোগীতে।
মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালের সিনিয়র নার্স দিপালী রাণী দাস এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া রোগীর ব্যাপক চাপ রয়েছে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। হাসপাতালের শয্যার চেয়ে ডায়রিয়া রোগী বেশি। তাই রোগীদের জন্য বারান্দায় বিছানা দিয়ে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা চলছে। জেলার গ্রামাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত দুই বছরে এত ডায়রিয়া রোগীর চাপ দেখেনি তারা। সারা বছর দৈনিক ১০০-২০০ ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। বর্ষা শুরু হওয়ার আগে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। সাধারণত মার্চের শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহে রোগীর চাপ চূড়ান্তভাবে বাড়ে। এ বছর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।
হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা আছে ৩০টি। গত জানুয়ারিতে ১ হাজার ৫১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৯৯ ও মার্চে ১ হাজার ৮৫৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। গত শুক্রবার ৯১ জন ও শনিবার সকাল পর্যন্ত ১৬৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, চলতি বছরের মার্চে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। রোগীদের বেশির ভাগ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের।
স্টাফ নার্স দিপালী রাণী দাস জানান, হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৪৫৭ রোগী আসেন। তার মধ্যে বেশির ভাগই বয়স্ক। ৩০ মার্চ ভর্তি হন ৩৮ জন, ৩১ মার্চ ৬০ জন, ১ এপ্রিল ৭৫ জন, ২ এপ্রিল ৮০ জন, ৩ এপ্রিল ৭৭ জন, ৪ এপ্রিল ৮৮ জন। মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩৯ জন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন।
অধিকাংশ রোগী নাসিরনগর, বিজয়নগর, কসবা, নবীনগর এলাকা থেকে আসছেন বলে জানান তিনি।
হাসপাতালে সকালে ভর্তি হন রুহুল আমিন। তিনি এসেছেন নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রাম থেকে। রুহুল বলেন, ‘দুদিন ধরে জ্বর, বমি ও তীব্র পেটে ব্যথা হচ্ছে। সকালে এসে ভর্তি হয়েছি। এখন পর্যন্ত দুটি স্যালাইন চলছে। শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ‘হাসপাতালে শয্যার তুলনায় ডায়রিয়া রোগীর চাপ অনেক বেশি। অনেকে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিশুর চেয়ে বয়স্ক এবং নারীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।’
পানি ফুটিয়ে বা বড়ি দিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করার পরামর্শ দিয়ে ডা. মোহাম্মদ ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ‘হাত না ধুয়ে কোনো খাবার খাওয়া উচিত হবে না। রাস্তার পাশের খাবার ও বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।’