সাধারণত ময়না, টিয়া পাখিরাই পোষ মানলে মানুষের ভাষায় কিছু শব্দ উচ্চারণ করতে পারে। তাই বলে শালিক! এমন অসাধ্য ব্যাপার কেউ শুনেছে কখনও?
এই আসাধ্য কাজটি করে দেখালেন কুষ্টিয়ার যুবক রোহান। সম্প্রতি তিনি পোষ মানিয়েছেন দুটি শালিক পাখিকে। শিখিয়েছেন কথা বলাও। মিঠু আর ময়না নামের এই শালিক দুটি এখন তার পরিবারের সদস্যদের মতোই।
রোহানের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডে। একটি পাকা ভবন ও একটি টিনের ঝুপড়ি ঘর তাদের। রোহান কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। বাবা না থাকায় পড়ালেখার ফাঁকে তাকে শ্রমিকের কাজ করতে হয়।
রোহানের মা রিজিয়া বেগম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই রোহান পশুপাখি পছন্দ করে। মুরগির বাচ্চা, হাঁসের বাচ্চাদের আদর করত।’
তিনি জানান, কয়েক বছর আগে ঝড়ের কবলে পড়ে একটি গাছ ভেঙে গেলে শালিক পাখির তিনটি ছানা মাটিতে পড়ে যায়। রোহান এদের বাড়িতে নিয়ে আসে।
রিজিয়া বলেন, ‘রোহান তখন আরও ছোট। আমি না বললেও সে মানেনি। বলেছিল, পাখিগুলোকে কথা বলা শেখাবে। ইউটিউব দেখে পাখি পোষার কৌশলও রপ্ত করে সে। নাম দেয় মিঠু, ময়না আর ডন।’
শালিক পাখি পোষা নিয়ে অনেকে কটু কথা বললেও রোহানের ভালোবাসা কমেনি। পরম যত্নে ধীরে ধীরে এরা রোহানদের পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠে। বিড়ালের থাবায় একটি পাখি আহত হলে তাকে চিকিৎসা করায় রোহান। ডন নামের ওই পাখিটি এখন খুব একটা বের হয় না।
তবে রোহানের সার্বক্ষণিক সহচর মিঠু আর ময়না নামের শালিক দুটি। রাতে এরা খাঁচায় থাকে। আর দিনে বাড়িঘরে স্বাভাবিক বিচরণ ওদের।
সাইকেল চালালে ওরা রোহানের ঘাড়ে গিয়ে বসে। রোহানের সঙ্গে সাইকেলে ঘুরে বেড়ায় এ পাড়া থেকে ওপাড়ায়।
কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়টি হলো- মানুষের অনুকরণে এদের কথা বলতে শিখে যাওয়া!
শালিক দুটি রোহানের সঙ্গে সাইকেলে ঘুরে বেড়ায় এ পাড়া থেকে ওপাড়ায়রোহান জানান, নিজের খরচের টাকা বাঁচিয়ে পাখির খাবার কেনেন তিনি। পাখি দুটিই তার আনন্দের সঙ্গী। তিনি বলেন, ‘বাবা নেই। পরিবারের খরচ চালাতে রাজমিস্ত্রির কাজ করি। পাখিগুলো আমার পরিবারেরই সদস্য।’
রোহানের পরিবারের অন্য সবার সঙ্গেও বেশ ভাব শালিক দুটির। তাদের নাম ধরে ডাকে। শালিক পোষ মেনেছে, মানুষের কথা অনুকরণ করছে এসব দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রতিবেশীরা। আসেন দর্শনার্থীরাও। তাদের সঙ্গে খুব স্বাভাবিক আচরণ করে শালিক দুটি। উড়ে গিয়ে হাতে কিংবা কাঁধে বসে।
রোহানের শালিক পাখিরা সারা দিন মুক্ত থাকে, ইচ্ছেমতো যেখানে সেখানে উড়ে বেড়ায়। তবে চলে যায় না বাড়ি ছেড়ে...।