বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বর্ণের দোকানে একের পর এক ডাকাতি, বারবার গ্রেপ্তার

  •    
  • ৫ এপ্রিল, ২০২২ ১৮:১০

র‌্যাবের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করতে এই চক্রটির কোনো না কোনো সদস্য সেখানে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি নেন। একটি ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা দোকানের পাশে অন্য একটি দোকান ভাড়া দেয়া হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রায় এক যুগ ধরে ছদ্মবেশে ব্যাংক ডাকাতি ও স্বর্ণালংকার লুট করে আসা একটি চক্রকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে র‌্যাব। বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ উদ্ধারের কথাও জানানো হয়েছে।

সোমবার র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪-এর দুটি দল মুন্সীগঞ্জ ও বরিশালে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে, যারা ডাকাতিতে জড়িত বলে জানানো হয়েছে।

যাদের ধরা হয়েছে, তারা হলেন কাউসার হোসেন, বাচ্চু মাস্টার, রাজা মিয়া ও মাসুদ খান। উদ্ধার করা হয় লুট করা ১৯ দশমিক ৭০ গ্রাম স্বর্ণ ও নগদ ৩ লাখ ২৯ হাজার ১৮০ টাকা।

এদের মধ্যে রাজা মিয়া এ চক্রটির হোতা বলে জানানো হয়েছে।

বাস শ্রমিক থেকে ডাকাত দলের সর্দার বনে যাওয়া র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি। ছবি: সংগৃহীত

গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলায় রাঙাপরী জুয়েলার্স নামে একটি স্বর্ণের দোকান থেকে প্রায় ৩০০ ভরি স্বর্ণ লুট হয়। এ ঘটনায় রাঙাপরী জুয়েলার্সের মালিক আবুল কালাম ভূঁইয়া ভাসানটেক থানায় মামলা করেন।

র‌্যাব ঘটনার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন ঘটে যাওয়া লুটের ঘটনা বিশ্লেষণ করে আসামি শনাক্ত করার চেষ্টা করে।

এরই ধারাবাহিকতায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করতে এ চক্রটির কোনো না কোনো সদস্য সেখানে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি নেন। একটি ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা দোকানের পাশে অন্য একটি দোকান ভাড়া দেয়া হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে।

ডাকাতি করতে দোকান ভাড়া

গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে র‌্যাব জানিয়েছে, এই স্বর্ণের দোকান লুটের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দেড় মাস আগে মার্কেটে ভুয়া পরিচয়ে একটি দোকান ভাড়া নেয়া হয়। দোকানে নামসর্বস্ব মালামাল রেখে চুরির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম মজুত করা হয়।

র‌্যাব জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজা মিয়া, কাউসার মাস্টারসহ আরও কয়েকজন রাত আনুমানিক ১২টায় মিরপুর-১৪ নম্বর গোলচত্বরে একত্রিত হন। মাসুদ তাদের রাত ১টায় মার্কেটে আসতে বলেন।

এর মধ্যে মাসুদ মার্কেটের অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীর খাবার ও পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক সেবন করিয়ে অজ্ঞান করেন।

চক্রের অন্যরা মার্কেটের সামনে এলে মাসুদ ও তার এক সহযোগী গেটের তালা খুলে তাদের কাউসারের ভাড়া করা দোকানে নিয়ে যান।

রাত আনুমানিক ২টার সময় রাজা মিয়াসহ আরও দু-তিনজন স্বর্ণের দোকানের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। তারা স্বর্ণলংকার ও নগদ টাকা লুট করে সেই ভাড়া করা দোকানে নিয়ে যান। ভোরে লুট করা মালামালসহ কেরানীগঞ্জে কাউসারের ভাড়া বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

একই কায়দায় আরও লুট

র‌্যাব জানায়, চক্রটি এর আগেও বিভিন্ন স্বর্ণের দোকান ও ব্যাংকের বুথে লুটে জড়িত ছিল। মামলায় র‌্যাবের হাতে একাধিকবার আটকের পর বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে।

র‌্যাব কমান্ডার আল মঈন বলেন, ‘চক্রটির অপরাধের ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, তারা প্রথমে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদপত্র ব্যবহার করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে দোকানের নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে যোগ দেয় ও দোকান ভাড়া নেয়।

‘পরে স্বর্ণালংকার লুট করার পর তারা আত্মগোপনে চলে যায় ও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা কিছুদিন পর নতুন লক্ষ্য ঠিক করার জন্য আবার যোগাযোগ করে।’

ডাকাত দলটি ২০১৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার ভল্ট ভেঙে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা লুট করে বলেও জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, তখন তারা ব্যাংকের পাশের একটি ঘর একটি এনজিওর নামে মিথ্যা পরিচয়ে ভাড়া নেয়। ভল্ট লুটের এক সপ্তাহ আগে থেকে স্কু ড্রাইভার ও শাবল দিয়ে দেয়াল কেটে ব্যাংকের ভল্টে ঢুকে টাকা লুট করে পালিয়ে যায়।

পরে র‌্যাবের অভিযানে রাজা মিয়াসহ সাতজন গ্রেপ্তার হন। রাজা মিয়া তখন তিন বছর জেল খাটেন।

কারাগার থেকে বের হওয়ার পর ২০১৮ সালে চক্রটি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে দুটি স্বর্ণের দোকান থেকে ৪৫৫ ভরি স্বর্ণ ও ২ লাখ টাকা লুট করে বলেও জানান র‌্যাব কর্মকর্তা। তখন গ্রেপ্তার হন তিনজন।

২০২০ সালে ডেমরার হাজি হোসেন প্লাজায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে তারা আরও ২৩০ ভরি স্বর্ণ ও দেড় লাখ টাকা লুট করে বলেও জানানো হয় ব্রিফিংয়ে।

ওই ডাকাতির আনুমানিক দুই মাস আগে চক্রের তিন সদস্য মিথ্যা পরিচয়ে একটি নিরাপত্তা কোম্পানির গার্ড হিসেবে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে যোগ নেন।

জিজ্ঞাসাবাদে চারজন জানান, তাদের চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮ থেকে ১০ জন।

বাস শ্রমিক থেকে ডাকাত দলের সর্দার

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, রাজা মিয়া ১৯৯০ সালে বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০২ সালের দিকে ডাকাত চক্রটির সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। পরে বাসে কাজ করার বদলে তিনি অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। এর উদ্দেশ্য মূলত লুট বা ডাকাতির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মার্কেট রেকি করা।

রাজা মিয়া একজন দক্ষ তালা-চাবির মেকার বলেও জানানো হয় ব্রিফিংয়ে। তিনি অর্ধশতাধিক চুরি-ডাকাতিতে জড়িত বলেও র‌্যাবের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

রাজার সঙ্গে গ্রেপ্তার কাউসার হোসেন মাধ্যমিক পাস করে করে একটি প্রকল্পে চাকরি নেন। ২০০৯ সাল থেকে ঢাকায় এক আইনজীবীর অফিস সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

২০১৮ সালে মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাতি ও স্বর্ণালংকার লুট চক্রের এক সদস্য আদালতে এলে তার সঙ্গে কাউসারের পরিচয়, পরে বন্ধুত্ব।

ওই বছর সিদ্ধিরগঞ্জের স্বর্ণালংকার লুটে অংশ নেয়ার মাধ্যমে কাউসারের অপরাধ জগতে প্রবেশ বলেও জানানো হয়েছে। সে সময় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাগারেও যান।

ভুয়া কাগজপত্র তৈরিতে দক্ষতার কারণে চক্রের অন্য সদস্যরা তাকে ‘মাস্টার’ উপাধি দেন।

মাসুদ ঢাকার চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ক্লিনার ও বয় হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১০ সালের এই চক্রের সঙ্গে তার পরিচয়।

২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন তিনি। দুই বছর পর সিদ্ধিরগঞ্জের হাজি আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেটের দুটি স্বর্ণের দোকানের প্রায় দুই কেজি স্বর্ণ লুটের মামলায় তিনি কারাগারে যান। তার নামে চুরির তিনটি মামলা রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর