সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে দাবি করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, তার পরেও তারা সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের কথা বলেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হতে চান না মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, লক্ষ্য বিএনপির নেতৃত্বে দেশকে ‘সঠিক পথে ফেরানো’।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির আয়োজনে এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনার বিষয় চিল ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন ও আলোচিত জাতীয় সরকার।’
ভোটের পরে জাতীয় সরকার গঠনের চিন্তা নিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতির প্রয়োজনে ভোটাধিকার ও রাষ্ট্র মেরামত করতে একটি ফর্মুলা জাতির সামনে তুলে ধরেছেন, যা সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে। তারপরও সবাইকে নিয়ে সরকার গঠনের কথা বলেছে বিএনপি।
‘তারেক রহমান ক্ষমতার জন্য ক্ষুধার্ত নয়, তিনি বিএনপির নেতৃত্বে দেশটাকে গণতান্ত্রিক ট্র্যাকে আনতে চান, জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে চান।’
দুর্নীতির একাধিক মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমান ‘ত্যাগ করার মানসিকতা নিয়ে’ পথ চলছেন উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, ‘উনি প্রধানমন্ত্রী হবেন-এ কথা তো বলেননি। উনি বলেননি কোয়ালিশন সরকার; উনি বলেছেন জাতীয় সরকার। এই সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সঠিক ট্রাকে আনবে।’
ভোটের আগে জাতীয় সরকারের দাবি না তোলার পরামর্শ দিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার হলে তো সব দল নিয়ে হয়। আমার তো মনে হয় শেখ হাসিনাও এই জাতীয় সরকার মেনে নেবেন। ...আবার যদি শেখ হাসিনার অধীনেই জাতীয় সরকার হয় তাহলে সে তো সরকারের অতীতের সব অপকর্ম এই জাতীয় সরকার দিয়ে জায়েজ করে নেবে।’
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান যে ফর্মুলা দিয়েছেন, তা ট্রাম্পের ওপর ওভার ট্রাম্প। তিনিও বলেছেন জাতীয় সরকার হবে; তবে তা নির্বাচনের পরে। আমাদের সবার মূল লক্ষ্য হচ্ছে অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন।’
আওয়ামী লীগ লুটপাট করে অর্থনীতিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে অভিযোগ করে গয়েশ্বর বলেন, ‘উন্নয়নের কথা বলে ৭০ ভাগ টাকা তারা লুট করেছে। তারা গত ১২ বছরে ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।’
পাকিস্তান আমলের সামরিক সরকারের চেয়েও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভয়াবহ বলেও মন্তব্য করেন গয়েশ্বর। দাবি করেন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমানের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছিল ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৭ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ শপথ নেয়ার পর দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে জিয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারকে রাজনীতিতে নামার আহ্বান
পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির কমিশনার শফিকুল ইসলামকে বাহিনীর পোশাক খুলে ও পদত্যাগ করে রাজনীতি করার আহ্বানও জানিয়েছেন গয়েশ্বর।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ কমিশনারের কথা শুনতাম, ভালোই লাগত। আইজিপি স্যারের বাড়ি গোপালগঞ্জ, সেটা না-হয় আলাদা কথা। আমি তাদের সবিনয়ে বলব, আপনাদের রাজনীতি নিয়ে ভাবনার, বক্তব্য দেয়ার, রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকতেই পারে। ইউনির্ফম খুলে, পদত্যাগ করে মুজিব কোর্ট পড়ে নেমে যান। কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ইউনির্ফম পড়া অবস্থায়, আপনারা রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারেন কি না তা আপনাদের সার্ভিস রুলসে আছে কি না পড়ে দেখেন।’
এ সময় গয়েশ্বর কথা বলেন আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য নিয়ে।
বিএনপি হঠাৎ করেই তাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বক্তব্য দিয়ে আসছে।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে পুলিশের এক আলোচনায় ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের একটা পার্টির সিনিয়র নেতারা বলা শুরু করেছেন, তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা। এটা হাস্যকর। যাকে তার স্বামী পরিত্যক্ত করেছিল পাকিস্তানের ওখানে কী করছ...। সেটা আর না বলি। কিন্তু সত্য জিনিস যেটা সেটা কিন্তু দিবালোকের মতো স্পষ্ট।’
একই দিন আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘মেবারের রাজা রতন সিং বাবরকে ভারত আক্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আমরা দেখি এই ভূত এখনও যায়নি। আমাদের নেতারা চিঠি লেখে জিএসপি সুবিধা বন্ধ করার জন্য, লবিস্ট নিয়োগ করে দেশের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার জন্য।
‘রাজনীতি করেন জনগণের জন্য। আবার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। জনগণকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ নেন। আপনারা কারা? হু আর ইউ? কী চান আপনারা?’
এই দুটি বক্তব্য আসার পর থেকে পুলিশের এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্রমাগতভাবে বক্তব্য দিয়ে আসছেন বিএনপি নেতারা।