বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পা দিয়ে লেখে সে, কৃত্রিম হাত পেলে কমত কষ্ট

  •    
  • ৫ এপ্রিল, ২০২২ ১৩:২১

উত্তর চরমানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, ‘হোসেন প্রতিভাবান ছাত্র। দু হাত বিহীন পা দিয়ে লিখলেও অনেকের চেয়ে তার লেখা অনেক সুন্দর। হোসেন পারিবারিক ও মানসিকভাবে সাহস পেলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবে।’ 

দুই হাত নেই, পা দিয়েই লেখে সে। তবে সেটি বেশ কষ্টসাধ্য। এই কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো; যদি কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা করা যেত। এমন সংকটে কেউ এগিয়ে আসে কি না এখন ‍শুধু সে অপেক্ষায় ভোলার চরফ্যাশনের স্কুলছাত্র মো. হোসেন।

চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চার্চ কলোনির দরিদ্র কৃষক শাহাবুদ্দিন ও রহিমা দম্পতির ছেলে ১৩ বছর বয়সী হোসেন। তিনি একই উপজেলার উত্তর চরমানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ আর মনের জোর থাকায় অভাবের সংসারেও দু হাতবিহীন ছেলেকে পড়ালেখা করাতে হাল ছাড়েননি তার বাবা-মা। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে ডান পা দিয়ে লিখছে হোসেন।

জানা যায়, ২০১৫ সালে উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরকচ্ছপিয়া গণস্বাস্থ্য পাঠশালায় প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত হোসেন। ওই বছরের ১০ আগস্ট সকালে

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নির্মাণাধীন দোতলা ভবনে উঠে খেলাধূলা করার একপর্যায়ে ভবনের পাশে অরক্ষিত বৈদ্যুতিক খুঁটির ১১ হাজার ভোল্টের তারের সঙ্গে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় সে।

পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হলে জীবন রক্ষার্থে হোসেনের দু হাত কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত দেন চিকিৎসকরা।

হোসেনের মা রহিমা বেগম বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর হোসেন এলাকার অন্য ছেলেপেলেদের সঙ্গে স্কুলে যেত। স্কুলে যাওয়া-আসার এক পর্যায়ে শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় ডান পা দিয়ে হোসেন লেখা শুরু করে। এভাবে সে পঞ্চম শ্রেণি পরীক্ষায় পাস করে।

উপজেলার উত্তর চরমানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা

‘প্রাইমারি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করলে তাকে যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি করাতে নিয়ে গেলাম, তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে ভর্তি করতে চাননি। এমনটাও বলছেন যার হাত নেই সে লিখবে কিভাবে?’

তিনি বলেন, ‘হোসেন দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে পা দিয়ে লিখে পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় পাস করেছে, এ কথা বলে প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করা হলে তিনি তাকে স্কুলে ভর্তি করেন। আমার ছেলে পড়াশোনায় অনেক মেধাবী। পাশাপাশি পড়াশোনার প্রতি তার অনেক আগ্রহ রয়েছে।’

হোসেন বলেন, ‘বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় আমি পড়াশোনা করতে পারছি। বর্তমান জীবনে দু হাত ছাড়া আমার চলাফেরায় অনেক কষ্ট হয়। কৃত্রিম ‍দুটি হাত হলে আমি নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ নিজেই করতে পারতাম। আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরি করে বাবা মায়ের পাশে দাঁড়াতে চাই।’

আর হোসেনের বাবা শাহাবুউদ্দিন বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পড়াশোনা করার সময় ছাদের ওপর থাকা ১১ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক তার জড়িয়ে হোসেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তাকে ঢাকায় নেয়া হলে জীবন বাচাঁনোর জন্য দুহাত কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত দেন চিকিৎসকরা।

‘হোসেনের এই দুর্ঘটনার চিকিৎসা করাতে আমার প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমি একজন গরিব কৃষক, দিন আনি দিন খাই। ছেলের এই দুর্ঘটনায় জমি জমা বিক্রি কইরা চিকিৎসা চালাতে হইছে। এখন আমি সম্পন্ন শূন্য।’

তিনি বলেন, ‘আমার পাঁচ ছেলে-মেয়ে। অভাবের সংসারে তাগো পড়াশোনা করানোর খরচ জোগাতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। টিভি চ্যানেলে দেখি কত মানুষের আলগা (কৃত্রিম) হাত-পা লাগায়, তা দিয়াই স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করে। আমার পোলাডারে যদি এমন আলগা দুইডা হাত লাগান যাইতো। তয় হোসেন আগের মতো চলাফেরা ও পড়াশোনা করতে পারত।’

দূর্ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ হোসেনের খোঁজ খবর নিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি এবং আজ পযর্ন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা বা অনুদান দেয়নি।

উত্তর চরমানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, ‘হোসেন প্রতিভাবান ছাত্র। দু হাত বিহীন পা দিয়ে লিখলেও অনেকের চেয়ে তার লেখা অনেক সুন্দর। আমাদের বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকরা হোসেনের প্রতি আন্তরিক। হোসেন পারিবারিক ও মানসিকভাবে সাহস পেলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবে।’

এ বিভাগের আরো খবর