কোটা বাতিলের পর ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল অনেকটাই চমকে দিয়েছে চাকরিপ্রত্যাশীদের। এখন পর্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য প্রকাশ না হলেও আগের চারটি সাধারণ বিসিএসের মতোই এবারও বিজ্ঞানের ছাত্রদের জয়জয়কারের তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে।
এবার বিশেষ করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ পড়ুয়াদের পুলিশ, প্রশাসন, কর বা আরও কিছু ক্যাডারে চাকরির জন্য মনোনীত হওয়ার পর বাণিজ্য, সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিকের ছাত্ররা একটি প্রশ্ন তুলছেন, হঠাৎ করে কেন এভাবে সাফল্য পাচ্ছে।
বিসিএসে শিক্ষার্থীদের কত শতাংশ বিজ্ঞান থেকে পাস করা, কত শতাংশ অন্য বিভাগের, সেই তালিকা অবশ্য করে না বিসিএস পরীক্ষার তত্ত্বাবধানে থাকা সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসি।
তবে সংস্থাটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
একজন কর্মকর্তা বলছেন, ২০১৬ সালে ৩৫তম বিসিএস থেকেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর আগ পর্যন্ত বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও তাদের চাকরির পরীক্ষায় সেভাবে সাফল্য দেখা যায়নি।
পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নূর আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে সিলেবাস ও প্রশ্নপত্র প্রণয়ন পদ্ধতি মূল কারণ।’
সরকারি কর্মকমিশনের একাধিক কর্মকর্তার চোখেও বিষয়টি ধরা পড়েছে বলে তারা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন। তারা নাম প্রকাশ করবেন না বলে তাদের কিছু ধারণা এবং তথ্যও দিয়েছেন।
একজন কর্মকর্তা বলেন, বিসিএসের প্রিলিমিনারির নতুন পাঠ্যক্রম ও প্রশ্ন প্রণয়ন পদ্ধতির কারণেই চূড়ান্ত ফলে প্রাধান্য পাচ্ছেন বিজ্ঞানশিক্ষার্থীরা।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নতুন সিলেবাস প্রকাশ করে পিএসসি। ওই বছর থেকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ করা হয়। পরীক্ষার সময়ও এক ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে দুই ঘণ্টা করা হয়, যেটির প্রথম প্রয়োগ হয় ৩৫তম বিসিএসে।
সেবার সিলেবাসে বেশ কয়েকটি নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের নখদর্পণে।
পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘৩৫তম বিসিএসের আগে যে সিলেবাসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হতো আর এখনকার সিলেবাসের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। এ জন্যই মূলত বেশি সুবিধা পাচ্ছেন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা।’
সেটি কেমন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়া হতো, যেখানে প্রত্যেক বিষয়ে আলাদা মানবণ্টন ছিল না। মূলত সাধারণ বাংলা, সাধারণ ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশি বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি), সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং মানসিক দক্ষতা ও গাণিতিক যুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা হতো। আর এখন নেয়া হয় ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। যেখানে ৬০ নম্বরে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক বেশি সুবিধা পান। কারণ এ বিষয়ে তাদের আগে থেকেই দক্ষতা থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মূলত ৩৫তম বিসিএস থেকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেশি পরিমাণে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় টিকছেন। এতেই বোঝা যায়, এটি সিলেবাসের কারণেই। ফলে অন্য বিভাগের (বাণিজ্য, সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক) শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে চূড়ান্ত ফলে।’
একই ধরনের মত দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুর রহমান ভুঁইয়াও। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রিলিমিনারিতে ২০০ নম্বরের মধ্যে ৬০ নম্বর (সাধারণ বিজ্ঞান-১৫, কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তি- ১৫, গাণিতিক যুক্তি-১৫, মানসিক দক্ষতা-১৫) তো বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ সুবিধাজনক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিক মনজুর বলেন, ‘বলা যায়, প্রিলিমিনারির ৬০ নম্বরে তারা (বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী) বেশি নম্বর তুলছেন। এটাই তাদের সাফল্যের অন্যতম কারণ।’
এ ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণে প্রশ্ন পদ্ধতির পরিবর্তন চান তিনি। বলেন, ‘বিজ্ঞান ও গণিতের উচ্চতর স্তর থেকে প্রশ্ন করার কারণে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।’