রমজানের প্রথম দিন থেকেই গ্যাস সংকটে ভুগছে রাজধানীবাসী। সোমবারও এ সমস্যার সমাধান হয়নি। নগরীর কোনো কোনো এলাকায় সরবরাহ লাইনে গ্যাস পাচ্ছেন না আবাসিক গ্রাহকরা। আবার অনেক এলাকায় লাইনে গ্যাস থাকলেও চাপ খুবই কম।
লাইনে গ্যাস না থাকায় প্রাত্যহিক রান্নাবান্না করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে গৃহিণীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রান্নাঘরে কাটিয়েও প্রয়োজনীয় রান্নাটুকু সারতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এমন প্রচণ্ড গরমের মাঝে বাজারি খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে রোজাদার নগরবাসীকে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ত্যক্ত-বিরক্ত নগরবাসী তাদের রাগ-ক্ষোভ আর অসন্তোষ উগরে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
রোববার সকাল থেকে সরবরাহ লাইনে গ্যাস নেই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকেও গ্যাস না আসায় কোনো রান্না হয়নি। ওদিকে অপেক্ষায় থেকে ইফতারের সময় হয়ে যায়। উপায়ান্তর না দেখে ফুডপান্ডায় অর্ডার করে খাবার কিনে আনেন গৃহিণী হোসনে আরা আতিয়া। তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ইফতার আর রাতের খাবারের জোগানটা হয়েছে।
মিরপুরের শেওড়াপাড়ার এই গৃহিণী বলেন, ‘রাত ১১টার পর গ্যাস আসে। তাও চাপ কম। গভীর রাতে গ্যাস পেয়ে কিছু রান্নাবান্না করে রেখেছি। সেটা দিয়ে আজকের দিন চালিয়ে নিচ্ছি। আশপাশের কয়েকটি পরিবার অবশ্য এলপিজি সিলিন্ডার কিনে বিকল্প ব্যবস্থা করে নিয়েছে।’
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ এপ্রিলের আগে কাটছে না এই সংকট।
শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
রোজার সময় অনেকেই বাইরের খাবার খেতে চান না। আবার ইফতার পর্বে বাহারি খাবারেরও একটা চাহিদা থাকে। স্বভাবতই গৃহিণীরা সেসব খাবার তৈরিতে দুপুরের পরই রান্নাঘরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু গ্যাস সংকটে বাহারি খাবার তো দূরের কথা, অতি প্রয়োজনের খাবারটুকুও তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।
আতিয়া জানালেন, ‘শেওড়াপাড়ার বেশ কয়েকজন গ্যাসের সিলিন্ডার কিনে রান্নাবান্না চালিয়ে নিচ্ছেন।’
বাড্ডা এলাকার গৃহিণী মুবাশশিরিন বলেন, ‘গতকাল সারা দিন গ্যাস ছিল না। রান্নাবান্না সম্ভব হয়নি। বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়েছে। আজ সরবরাহ লাইনে গ্যাস পাচ্ছি। তবে চাপ খুবই কম। ফলে রান্না করতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে।’
নাখালপাড়ার গৃহিণী খাদিজা বেগম বলেন, ‘দুদিন ধরে গ্যাসের চাপ খুব কম। প্রথম রোজা থেকে এই অবস্থায় আছি। বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নিভু নিভু হয়ে জ্বলে। আজও একই অবস্থা।
রোজায় এই যন্ত্রণা তো সহ্য করা যায় না। কারণ এই সময়টায় ইফতারি তৈরি করাসহ রান্নাঘরে নানা কাজ থাকে।’
বনশ্রী এলাকার চিত্রও একই রকম। ওই এলাকার বাসিন্দা খুরশীদা আলম খুশি বলেন, ‘এখন গ্যাস আছে। কিন্তু চাপ খুবই কম। ফলে ইফতারি তৈরিসহ ঘরের কাজকর্ম করতে খুবই ঝামেলা হচ্ছে।’
মিরপুর ১ নম্বরের বাসিন্দা বিবি আমিনা খুবই বিরক্ত। কারণ গ্যাস সংকটে পুরো পরিবারের খাদ্য ব্যবস্থাপনা এলোমেলো হয়ে গেছে। চুলা না জ্বলায় ঘরে কোনো খাবারই তৈরি করতে পারছেন না। এই গৃহিণী বলেন, ‘গতকাল দুপুর থেকেই গ্যাস নেই। ইফতারি তৈরি করা যায়নি। রাতের দিকে গ্যাসের চাপ কিছুটা থাকায় কোনোমতে সেহরির খাবারটা তৈরি করতে পেরেছিলাম।’
মিরপুর রূপনগরের নাফিয়াতুজ জাহান বলেন, ‘বিকেল ৪টা থেকে সরবরাহ লাইনে গ্যাস মিললেও চাপ খুবই কম। নিভু নিভু চুলায় কিছু রান্না করাও কঠিন। তার পরও চালিয়ে তো নিতে হবে। তাই চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
ধানমন্ডি ১৫ নম্বরের দিকেও গ্যাস সরবরাহ মোটামুটি পর্যায়ে আছে বলে জানালেন উম্মে হাবিবা প্রমি। তিনি বলেন, ‘গ্যাস নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তবে যা আছে তাতে রান্নার কাজটা চালিয়ে নিতে পারছি।’
জিগাতলার চিত্রটা আবার ভিন্ন। স্থানীয় বাসিন্দা মিত্রা হাসান বলেন, ‘গতকাল থেকে গ্যাসের চাপ খুবই কম। তাতে কোনোভাবেই রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নিরুপায় হয়ে আত্মীয়ের বাসা থেকে একটি ইন্ডাকশন চুলা এনে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি।’
মোহাম্মদপুরের অবস্থা মন্দের ভালো। গ্যাসের চাপ নিয়ে আদাবরের নাসরিন আরা বলেন, ‘স্বাভাবিকের চেয়ে গ্যাসের চাপ কম। তবে কাজ চালিয়ে নেয়া যাচ্ছে।’
ইস্কাটন ও মগবাজার এলাকায় গ্যাস সংকটের খবর পাওয়া যায়নি। তবে পার্শ্ববর্তী মালিবাগেই আবার গ্যাসের চাপ কম।
ওই এলাকার বাসিন্দা হাসান লিটন বলেন, ‘দুদিন ধরেই গ্যাসের চাপ কম। ৩০ মিনিটের রান্নার কাজ সারতে ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে।‘
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইয়াসিফ আকবর বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল গ্যাসের চাপ। তবে আজ (সোমবার) গ্যাসের চাপ কম।’
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনে হঠাৎ করে সমস্যা তৈরি হওয়ায় তার প্রভাব পড়ে সারা দেশে, বিশেষত রাজধানীর গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে বিবিয়ানা অন্যতম। শেভরন পরিচালিত এই গ্যাসক্ষেত্রের ছয়টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগানের সংকট তৈরি হয়েছে। সংকট কাটিয়ে গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।