সরল বিশ্বাসের কাজে মাফ পাওয়ার সুযোগ রেখে ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বিল-২০২১’ সংসদে পাস হয়েছে। পাশাপাশি এতে দণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে।
তবে বিলে ‘সরল বিশ্বাস’ শব্দের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা না থাকায় তা দুর্নীতি বাড়াবে বলে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা।
সোমবার স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিলটি সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন।
পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সালে প্রণীত আইনগুলো বাতিল করা হচ্ছে। এ জন্য মোংলা পোর্ট অথরিটি অর্ডিন্যান্স- ১৯৭৬ এর পরিবর্তে নতুন এই আইন করা হচ্ছে।
বিলে বলা হয়েছে, বন্দরের কোনো স্থাপনা নির্মাণ, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি বিধি অনুসারে ঠিকাদার হিসাবে নিয়োগ করা যাবে।
আগের আইনে এটা ছিল না। এ বিলে মোংলা বন্দরের স্থাপনা ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়ার বিধান রেখে বিলে সরল বিশ্বাসের কর্মকাণ্ডে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, প্রয়োজনে দেশের যে কোনো স্থানে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কার্যালয় স্থাপন করা যাবে।
বিলে কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। বন্দরের বিভিন্ন এলাকা ও স্থানকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা যাবে।
এ ছাড়া বন্দরে পণ্য বোঝাই, সংরক্ষণ, খালাস ও সরবরাহের জন্য প্রয়োজনে প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করে অপারেটর নিয়োগের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
গত বছরের ৩ এপ্রিল বিলটি সংসদে ওঠানোর পর দুই মাসের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
ওই বছরের জুনে কমিটি বিলের প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করে। পরে সেপ্টেম্বর মাসে বিলটি আবারও সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
পাস হওয়া বিলে উল্লেখ করা হয়, কোনো ব্যক্তি বা জাহাজ বন্দর সীমানা দূষিত করলে, প্রথম অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যূন এক বছর, অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অন্যূন ৫০ হাজার টাকা, অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড; পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যূন দুই বছর, অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন দুই লাখ টাকা, অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
বিলে বলা হয়, টোল, রেট, মাশুল ইত্যাদি ফাঁকি দিলে ছয় মাসের জেল অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এই আইনের অধীন যে অপরাধ হবে সেগুলো ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বিচার হবে, মোবাইল কোর্টেরও বিধান রাখা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, বন্দর কর্তৃপক্ষ এক লাখ টাকা পর্যন্ত আদায়যোগ্য টোল, রেট, ফি ও মাশুল সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করতে পারবে।
বিলে ‘সরল বিশ্বাসে’ কৃতকার্য রক্ষণ করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে— এই আইনের অধীনে সরল বিশ্বাসে করা কোনো কাজের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তার জন্য কর্তৃপক্ষ, বা এর চেয়ারম্যান, কোনো সদস্য, কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা করা যাবে না; বা অন্য কোনো আইনগত কার্যধারাও গ্রহণ করা যাবে না।
এর ব্যাখ্যায় বলা হয়- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ‘সরল বিশ্বাস’ বলতে অবহেলার সাথে করা হোক বা না হোক প্রকৃতপক্ষে সততার সাথে করা হলে কোনো কিছু ‘সরল বিশ্বাস’ বলে গণ্য হবে।
বিলে সরল বিশ্বাস শব্দটি রাখায় বিএনপির রুমিন ফারহানা, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুসহ অনেকেই সমালোচনা করেন।
তারা বলেন, এতে করে দুর্নীতি আরও বাড়বে। এ ছাড়া সরল বিশ্বাস বলতে কী বুঝানো হয়েছে তার সংজ্ঞা বিলে নেই।