চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে মারধরের হুমকির অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ওই নেতার নাম রাজু মুন্সি। তিনি শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিক্সটি-নাইনের নেতা ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী।
অভিযুক্ত রাজু নাট্যকলা বিভাগের প্রভাষক তানভীর হাসানকে ফোনে ও সরাসরি হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষক। হুমকির একটি ফোন রেকর্ডও নিউজবাংলার হাতে এসেছে।
এ নিয়ে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষক।
এ বিষয়ে নাট্যকলা বিভাগের প্রভাষক তানভীর হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলা বিভাগের পরীক্ষায় অতিথি শিক্ষক হিসেবে হলে গার্ড দেয়ার সময় একটা ছেলের নকল ধরেছিলাম। ওই ছেলের নাম এনজয় বড়ুয়া। ওই ছেলের সূত্র ধরে আমাকে মারধরের হুমকি দেয় রাজু মুন্সি।
‘সে আমাকে সরাসরি ও ফোন কলে হুমকি দেয়। একই সঙ্গে আমার বিভাগ ভাঙচুর করবে বলেও হুমকি দেয়। সে বলে, সে নাকি আমাকে মারধরের জন্য টাকা পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রাজু বলছে, সে নাকি আমাকে শিক্ষক বানিয়েছে। উদ্ভট কথাবার্তা বলেছে। আজকে দুপুরে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে রাজু এসব হুমকি দিয়েছে। এ সময় এনজয় বড়ুয়াও তার সঙ্গে ছিল, তবে সে চুপ ছিল। আমি প্রক্টরকে জানিয়েছি। আগামীকাল রেজিস্ট্রারকেও জানাব। শিক্ষক সমিতিকেও জানাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা শুধু আমার জন্য হুমকি না। পুরো শিক্ষক সমাজের জন্যও হুমকি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাজু মুন্সিকে একাধিকবার ফোনে কল দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে পরিচয় জানিয়ে এসএমএস করা হলেও তিনি জবাব দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, ‘নাট্যকলার এক শিক্ষককে হুমকির একটি দরখাস্ত আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে আমরা কঠোর মনোভাব পোষণ করছি। শিক্ষককে কোনো ছাত্র হুমকি দিতে পারে না। আমরা ব্যবস্থা নেব।’
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘আমি বিষয়টা শুনেছি। তিনি শিক্ষক হওয়ার আগে ওরা দুজন সিনিয়র-জুনিয়র ছিলেন, ওই কারণে তাদের মধ্যে একটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। তারপরও সে যেহেতু শিক্ষক তার সম্মানের কথা বিবেচনা করে কী করা যায় সে বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে।’
হুমকির রেকর্ডে যা শোনা যায়
শিক্ষক: তুমি সুপারিশ করছ বলতে তোমার কথা বলার অ্যাপ্রোচ এমন কেন?
ছাত্রলীগ নেতা: আমার অ্যাপ্রোচ এর থেকে বাজে। আমি ভিসি ম্যামের রুমে। বিচার দিবেন নাকি ভিসি ম্যামের কাছে? ফোন ধরাই দিব?
শিক্ষক: কী?
ছাত্রলীগ নেতা: আমি ভিসি ম্যামের রুমে। বিচার দিবেন আমার বিরুদ্ধে?
শিক্ষক: না, বুঝি নাই তোমার কথা বলার অ্যাপ্রোচ এমন কেন?
ছাত্রলীগ নেতা: আমার কথা এর থেকে বাজে। অ্যাপ্রোচ! আপনি আমাকে চেনেন না। আমি… কথার চেয়ে হাত বেশি চলে যে। আপনি টিচার হইছেন তো কী হইছে? একটু রেকর্ডিং করে রাখেন না। আপনি টিচার হইছেন তো কী হইছেন? কথা থেকে আমার হাত বেশি চলে তো।
শিক্ষক: তুমি কী বলতে চাইছো কিছুই বুঝি নাই।
ছাত্রলীগ নেতা: আপনি তো কোনো কিছু বুঝবেন না। টিচার হয়ে গেছেন না, এখন কোনো কিছু বুঝবেন না তো! আমি দেখা করতেছি আপনার সঙ্গে। তখন সব বুঝবেন।
শিক্ষক: মানে কী দেখা করবা, কী বলতে চাইছো। কিছুই বুঝি নাই। তুমি একটু স্পেসিফিক বলবা?
ছাত্রলীগ নেতা: আপনাকে টিচার করা হইছে কী জন্য? আমাদের পোলাপানকে রক্ষা করার জন্য না? নাকি এগুলাকে খালি ধরে ধরে উল্টাপাল্টা ইয়া করার জন্য?
শিক্ষক: উল্টাপাল্টা ইয়া করার জন্য মানে কী? আর আমাকে তুমি টিচার বানাইছো? কাকে কী বলো? তোমার মাথামুথা ঠিক আছে?
ছাত্রলীগ নেতা: আরে ফোন রাখেন মিয়া। আমি দেখা করতেছি আপনি কই?
শিক্ষক: আমি কোথায় তোমার জানার দরকার নাই। কারে কী বলতেছো? মাথা তোমার ঠিক আছে?
ছাত্রলীগ নেতা: আরে আমার মাথা ঠিক আছে। আপনার মাথা ঠিক নাই যে। টিচার হওয়ার আগে ঠ্যাং ধরে বসে থাকতেন। আর টিচার হয়ে ভুলে গেছেন।
ছাত্রলীগ নেতা: কিছু না। আপনারে মারার জন্য সুপারিশ পাইছি, বুঝছেন না? ক্যাম্পাসে আসলে পিটাব।
আপনাকে পিটাইলে টাকা দিবে আমাকে। রেকর্ডিং করে এগুলা ভিসি ম্যামরে শুনায়েন। আবোল-তাবোল পোলাপানরে টিচার বানিয়ে রাখছে! আপনার ডিপার্টমেন্টে ভাঙচুর করবো এখন।
শিক্ষক: কী করবা আমার ডিপার্টমেন্টে?
ছাত্রলীগ নেতা: ডিপার্টমেন্টে তালা লাগাব।
শিক্ষক: তুমি আমার ডিপার্টমেন্টে তালা লাগাবা কেন?
ছাত্রলীগ নেতা: আমার ইচ্ছা হইছে তাই। উল্টাপাল্টা কথা বলছেন যে! আপনি কই? ডিপার্টমেন্টে থাকলে..’