ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডের পণ্য নিতে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় ভোগান্তি হচ্ছে।
টিসিবির খুলনা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ১ লাখ ৯১ হাজার ৭১৬টি পরিবার তাদের নিত্যপণ্য কিনেছে এ ধাপে। এর মধ্যে খুলনা মহানগরে ছিল ৮৫ হাজার ৮০২ পরিবার। বাকি ৯ উপজেলা মিলিয়ে ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৯১৪ পরিবার।
এ সব পরিবারের কাছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩২ কেজি তেল, সমপরিমাণ চিনি ও ডাল বিক্রি করা হয়েছে।
প্রতিটি পরিবারের কাছে টিসিবি ৪৬০ টাকায় দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি চিনি ও দুই কেজি মসুর ডাল বিক্রি করেছে। এর মধ্যে প্রতি লিটার তেলের দাম ছিল ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা ও প্রতি কেজি ডাল ৬৫ টাকা।
টিসিবির খুলনা অফিসের কার্যনির্বাহী রবিউল মোর্শেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, রমজান উপলক্ষে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে খুলনাতেও দুই ধাপে পণ্য বিক্রি করা হবে। ২০ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমাদের প্রথম ধাপে বিক্রি শেষ হয়েছে। ৭ এপ্রিল থেকে আমরা আবার দ্বিতীয় ধাপে পণ্য বিক্রি শুরু করব।
‘খুলনায় আমাদের পণ্য বিক্রির যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা শতভাগ পূরণ হয়েছে। কার্ড পেয়েও অনেকে পণ্য কিনতে আসেননি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সেই পণ্য সরকার নির্ধারিত দামেই অসচ্ছলদের মাঝে বিক্রি করে দিয়েছেন।’
যত টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার
খুলনা মহানগরীর খান জাহান আলী রোডের মুদি ব্যবসায়ী সরদার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘খুলনার বাজারে এখন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা, চিনি ৮০ টাকা কেজি ও ডাল ১০০ টাকা কেজি।’
আমরা গরিব মানুষ। ইনকাম করতে না পারলে আমাদের খাবার জোটে না। সকালে এসে প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। ট্রাক আসতে দেরি হওয়ায় বাড়ি থেকে মেয়েকে ডেকে আনি। মেয়েকেও দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
মহানগরের আরও দোকান ঘুরে মোটামুটি এই দামই পাওয়া গেছে। এই হিসাবে দুই কেজি করে সয়াবিন তেল, চিনি ও ডালের দাম ৬৮০ টাকা।
গ্রাহকের কাছে এই পরিমাণ পণ্য ৪৬০ টাকায় বিক্রি করতে প্রতি পরিবারের জন্য টিসিবিকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ২২০ টাকা। প্রথম ধাপে পণ্য বিক্রিতে মোট ভর্তুকির পরিমাণ ৪ কোটি ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৫২০ টাকা।
দেরিতে পণ্য বিক্রি শুরুর অভিযোগ
প্রথম ধাপে পণ্য বিক্রির শেষ দিন খুলনা শহরে টিসিবির অন্তত ১০টি পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছেন ফ্যামিলি কার্ডধারীরা। কোথাও কোথাও আগে পণ্য কিনতে চলছে হুড়োহুড়ি।
নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেয়ানা এলাকার ৬০ বছর বয়সী মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে এখানে টিসিবির ট্রাকের জন্য বসে ছিলাম। ট্রাক এসেছে ১১টার দিকে। তখন সবাই ট্রাক ঘিরে হুড়োহুড়ি শুরু করে।
‘আমি বৃদ্ধ মানুষ। ধাক্কাধাক্কি করে পণ্য কিনতে পারিনি। তাই দুপুর ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছিলাম। তারপর জিনিসপত্র কিনেছি।’
পণ্য কিনতে এসেছিল ১০ বছর বয়সী ফাইজাও। সে বলে, ‘বাবা সকালে মালামাল কিনতে এখানে এসেছিল। ট্রাক আসতে দেরি হওয়ায় আমাকে বাড়ি থেকে এনে এখানে দাঁড় করিয়ে গেছে। মালামাল কিনে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে। পরে বাবা এসে আমাকে নিয়ে যাবে।’
দুপুর দেড়টার দিকে ফাইজার বাবা কেরামত আলী রিকশা চালিয়ে মেয়েকে নিতে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ইনকাম করতে না পারলে আমাদের খাবার জোটে না। সকালে এসে প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। ট্রাক আসতে দেরি হওয়ায় বাড়ি থেকে মেয়েকে ডেকে আনি।
‘মেয়েকেও দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। ওই সময়টা রিকশা চালিয়ে প্রায় ১০০ টাকা পেয়েছি। সকালে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলে না হলে হয়তো আরও ১০০ টাকা বেশি আয় হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিসিবির পণ্য কিনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বাঁচানো যায়। তবে এর জন্য চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এই সময়ে অন্য কাজ করলে আরও বেশি টাকা আয় করা যায়।’
টিসিবির পণ্য পরিবেশক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘ওইদিন সকাল ৭টার সময় আমরা পণ্য আনতে নগরের বয়রা এলাকায় কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামে যাই। সেখানে অর্ধেক পণ্য মাপা ছিল। বাকিটা মেপে তারপর নিতে হয়েছে। তা ছাড়া খাদ্যগুদামের সামনে টিসিবির অনেক ট্রাক ছিল। তাই সিরিয়াল পেতেও দেরি হয়েছে।
‘ট্রাক নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছানোর পর সবাই ঘিরে ধরে। কেউ লাইনে দাঁড়াতে চায় না। কার্ড মিলিয়ে তারপর পণ্য দিতে হয়। তাতেও কিছুটা সময় দরকার। এসব কারণে পণ্য কিনতে মানুষের একটু ভোগান্তি হয়েছে।’