প্রায় চার মাসের সর্বনিম্ন দর। এক দিনে কমেছে ১০৭ টাকা ৭০ পয়সা। তবু বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট বেনকিনজারের ক্রেতা নেই।
পুঁজিবাজারের টানা দরপতনের মধ্যে রোজায় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো কমপক্ষে তিন শ কোটি টাকা আর আড়াই শ ডিলার কমপক্ষে এক কোটি টাকা করে বিনিয়োগের ঘোষণার পর টানা দুই দিন লেনদেন কমল।
গত বুধবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে বৈঠকে রোজায় বড় বিনিয়োগের ঘোষণা আসার পর বৃহস্পতিবার লেনদেন এক হাজার ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
তবে রোজার প্রথম দিন লেনদেন পৌনে ৩০০ কোটি টাকা কমে যাওয়া, দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তুলনায় দর পতন হওয়া কোম্পানির সংখ্যা দেড় গুণ হওয়ার পর বাজার নিয়ে নতুন করে যে আস্থাহীনতার জন্ম হয়েছে, তার প্রভাব দেখা গেল সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার।
বিপুলসংখ্যক শেয়ারের দর কমেছে এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ পর্যন্ত। তবে এই দরেও কোনো ক্রেতা দেখা যায়নি বহু কোম্পানির।
দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ থাকার পরেও ৫৩ পয়েন্ট সূচকের পতন, লেনদেন তলানিতে নেমে আসার ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের হতাশা এখন ক্ষোভে পরিণত হয়েছে।
এক দিনেই দর পড়েছে ২৯৬টি কোম্পানির, বিপরীতে বেড়েছে কেবল ৪৬টির। আর দর ধরে রাখতে পারে ৩৯টির।
লেনদেন হয়েছে ৬২০ কোটি টাকার কিছু বেশি, যা আগের দিনের তুলনায় ২১৬ কোটি টাকা কম।
সোমবার পুঁজিবাজারের এই চিত্র বিনিয়োগকারীদেরকে ক্ষুব্ধ করেছে
গত ২০ মার্চ লেনদেন ৬১৬ কোটি টাকায় নেমে আসার পর এত কম টাকার শেয়ার হাতবদল হয়নি গত ১১ কর্মদিবসে।
দিনটিতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া আর্থিক খাতের কোম্পানি আইপিডিসিরও দর কমেছে দিনের সর্বোচ্চ সীমায়।
প্রধান খাতগুলোর মধ্যে এমন একটিও ছিল না, যেটিতে ভালো দিন গেছে। আগের দিন প্রায় সব কোম্পানির দর বৃদ্ধি পাওয়া আর্থিক খাতে কেবল একটির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬টির।
উদ্যোক্তা পরিচালকদেরকে মোট শেয়ারের ৬০ শতাংশ ধারণ করার নির্দেশ দেয়ার পর গত বুধবার বিমার শেয়ারে হুলুস্থুল দেখা দেয়ার পরের দিন থেকেই এই খাত দর হারাচ্ছে। এর মধ্যে আজ সাধারণ বিমা খাতে বেড়েছে কেবল একটি কোম্পানির দর, বিপরীতে কমেছে ৩৯টির। জীবন বিমা খাতে দর হারিয়েছে ১২টি, বেড়েছে একটির।
আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা আসতে থাকা ব্যাংক খাতেও বেড়েছে কেবল একটির দর বেড়েছে, ৭টি দর ধরে রাখতে পারে আর কমেছে বাকি ২৫টির দর।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতেও বেড়েছে হাতে গোণা দুই একটির দর।
পড়ছে মৌলভিত্তির কোম্পানির দরও
ঢালাও দরপতনের দিন ভালো ও মৌলভিত্তির কোম্পানি গ্রামীণ ফোন দর হারিয়েছে ১.১৬ শতাংশ। এই দরপতনে সূচক কমেছে ৮.৪৩ পয়েন্ট। বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর কারণে সূচক পড়েছে ৪.৭৯ পয়েন্ট। কোম্পানিটি দর হারিয়েছ ০.৯২ শতাংশ। আরেক বহুজাতিক কোম্পানি রবির দর পড়েছে ১.১৭ শতাংশ, সূচক পড়েছে ৩.৪৪ পয়েন্ট।
লাফার্জ হোলসিম, বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, স্কয়ার ফার্মা, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি, ইস্টার্ন ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের কারণেও সূচক পড়েছে সবচেয়ে বেশি।
সব মিলিয়ে এই ১০ টি কোম্পানির কারণে সূচক পড়েছে ২৮.২৫ পয়েন্ট।
অন্যদিকে সূচকে ৫.৪৮ পয়েন্ট যোগ করেছে ১০টি কোম্পানি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১.৮২ পয়েন্ট বেড়েছে বিকন ফার্মার দর ১.৮৬ শতাংশ বাড়ার কারণে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১.৪১ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে রেনাটা।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশেই করুণ চিত্র
এই তালিকায় আগের দুই দিনের মতোই প্রথম স্থানে নতুন তালিকাভুক্ত জেএমআই হসপিটাল। আগের দিন শেয়ার দর ছিল ২৪ টাকা ২০ পয়সা। দর বাড়ার সুযোগ ছিল ২ টাকা ৪০ পয়সা পর্যন্ত। বেড়েছেও এতটাই, শতকরা হিসেবে ৯.৯১ শতাংশ।
এ ছাড়া কোনো একটি কোম্পানিও দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁতে পারেনি, যে বিষয়টি ধস পরিস্থিতি ছাড়া সেভাবে পুঁজিবাজারে দেখা যায়নি।
নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ছাড়া সবচেয়ে বেশি ৫.৩৮ শতাংশ বেড়েছে আরএফএলের শেয়ারদর। আগের দিন সর্বোচ্চ দরপতন হয়ে ক্রেতা উধাও হয়ে যাওয়া জেমিনি সি ফুডের দর বেড়েছে ৪.৬৬ শতাংশ।
শীর্ষ দশের অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এপেক্স ট্যানারির দর চার শতাংশের বেশি, ভিএসএফ থ্রেড ও প্রাইম ফাইন্যান্সের দর তিন শতাংশের বেশি, জি কিউ বলপেন, এনভয় টেক্সটাইল ও এএসমিএল প্রাণের দর দুই শতাংশের বেশি এবং বিকন ফার্মার দর এক শতাংশের বেশি বেড়েছে।
অন্য সেব কোম্পানির দর বেড়েছে, তার মধ্যে ১৯টির দর এক শতাংশের বেশি এবং ৩২টির দর এক শতাংশের কম বেড়েছে।
শতাধিক কোম্পানি দর পতনের সর্বোচ্চ সীমায়
সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হিসেবে এক দিনে যত কমা সম্ভব ততটাই দর কমেছে এক শরও বেশি কোম্পানির দর। আরও বিপুল সংখ্যক কোম্পানির দর কমেছে যতটা কমা সম্ভব তার কাছাকাছি।
এসব কোম্পানির বেশিরভাগেরই এক পর্যায়ে ক্রেতা শূন্য হয়ে যায়্
দর পতনের সীমা ২ শতাংশ উছিয়ে নেয়া হচ্ছে- একটি গণমাধ্যমে এমন একটি সংবাদ প্রকাশের পর গত ২০ মার্চ ৬৭ পয়েন্ট সূচক পতনের দিন এই চিত্র দেখা গিয়েছিল।
দরপতনের শীর্ষ তালিকায় ছিল ফরচুন সুজ ও সাভার রিফ্রাকটরিজ, যার দর কমেছে ২ শতাংশ করে।
এর পরের অবস্থানই বহুজাতিক কোম্পানি রেকট বেনকিনজারের, যেটি গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ার প্রতি ১৬৫ টাকা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের পর ১০৭ টাকারও বেশি দর কমে যাওয়া এবং ক্রেতা শূন্য হয়ে যাওয়ার পর যারা লভ্যাংশ নিয়েছেন, তাদের আদৌ কোনো মুনাফা থাকবে কি না, এ নিয়ে এখনই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সোনালী পেপার, শ্যামপুর সুগার, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি লাইফ, পেপার প্রসেসিং, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সসহ আরও অনেক কোম্পানির দশা একই রকম।