একসময় সারা বছরই দেখা যেত বিভিন্ন এলাকার খালে ভেসাল জাল পেতে চলছে মাছ ধরা। নানা বয়সী মানুষ এই জাল দিয়ে মাছ ধরতেন।
কেউ কেউ শখের বশে ধরতেন আবার কারো পেশাই ছিল ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরা। বর্ষাকাল ছিল মাছ ধরার ভরা মৌসুম।
তবে এখন আর সেই দিন নেই। বর্ষা মৌসুম ছাড়া তেমন দেখাই মেলে না এই জালের।
মাদারীপুর সদর উপজেলার স্থানীয়রা জানান, খাল সরু হয়ে যাওয়া, নাব্যতা সংকট, খালে জোয়ারের পানি না আসায় মাছ কমে গেছে। তাই জেলেরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন খাল থেকে মাছ ধরায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ভেসাল জাল।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়, মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলার ২৫ থেকে ৩০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামে একসময় ভেসাল জাল দিয়ে নিয়মিত মাছ ধরা হতো। এখন অল্প কিছু এলাকা ছাড়া ভেসাল জালের ব্যবহার তেমন দেখা যায় না।
সদর উপজেলার কুনিয়া এলাকার জেলে মৃত্যুঞ্জয় মালো নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন থেকে ১০-১২ বছর আগেও প্রায় সারা বছরই ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরতাম। এখন শীত আসার আগ থেকেই খালে পানি থাকে না। বর্ষার দুই-তিন মাস শুধু ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরা যায়। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অনেকেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।’
স্থানীয় জেলেরা জানান, ছয় থেকে আটটি বড় বাঁশ আর এক ইঞ্চি ছিদ্রের নেট দিয়ে ভেসাল জাল বানানো হয়। অন্য জালের তুলনায় এই জাল বানাতে খরচ কম। ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। দাম কম হওয়ায় অল্প পানিতে মাছ ধরতে এই জাল বেশ জনপ্রিয়।
কুনিয়া এলাকার কপিল মালো বলেন, ‘খালে একটু-আধটু পানি থাকলেও, মাছ নেই। বর্ষা শেষ হতে না হতেই ক্যান্টেন জাল, ছেকনা জাল দিয়ে সব ধরে ফেলে। এরপর ভেসাল জাল বাইলেও কোনো মাছ পাওয়া যায় না। এ কারণে ভেসাল জালের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই।
‘তা ছাড়া খাল সেচ দেয়ায় মা মাছও ধরা পড়ে যায়। এ কারণে মাছ বাড়তে পারছে না খালে।’
মাদারীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ওঝাঁ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভেসাল প্রাচীন পদ্ধতির জাল। এই জালের জন্য তেমন কোনো প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে এক ধরনের ভেসাল জাল আছে যা মশারি দিয়ে তৈরি হয়। এই জাল দিয়ে মাছের ডিম ও রেণুপোনাও উঠে আসে। এগুলো নিষিদ্ধ।’