রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে দুই সাঁওতাল কৃষককে আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় গ্রেপ্তার গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে রিমান্ডে চায় পুলিশ। গোদাগাড়ী থানা পুলিশ তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পেতে আদালতে আবেদন জানিয়েছে।
রোববার দুপুরে রাজশাহীর আমলি আদালতে (গোদাগাড়ী) তাকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানালে বিচারক লিটন হোসেন কাল মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানির দিন ঠিক করেন।
এর আগে শনিবার গভীর রাতে উপজেলার চব্বিশনগর কদমশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বাড়ি উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে।
পাশের নিমঘুটু গ্রামের দুই সাঁওতাল কৃষককে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে তার নামে গোদাগাড়ী থানায় দুটি মামলা হয়েছে।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, শনিবার গভীর রাতে সাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করা হয়। সকালে তাকে রাজশাহীতে নিয়ে আসা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে তিন দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ডে পেলে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছে পুলিশ।
ওসি জানান, সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দুটি মামলা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ প্রথম মামলাটি করেন মৃত অভিনাথ মারান্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমরম। ২৬ মার্চ আরেকটি মামলা করেন রবি মারান্ডির ভাই সুশীল মারান্ডি।
গভীর নলকূপ থেকে জমিতে সেচের জন্য পানি না দিয়ে দিনের পর দিন ঘোরানোর অভিযোগ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মৃত অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমরমের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে রাজশাহীর আমলি আদালতে (গোদাগাড়ী) তোলা হয়।
পুলিশের আদালত পরিদর্শক (জেলা) আব্দুর রফিক জানান, গ্রেপ্তার সাখাওয়াতকে দুপুরে রাজশাহীর আমলি আদালতে তোলা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে তিন দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানির দিন রেখে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে সাখাওয়াতকে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়।
তদন্ত প্রতিবেদক এ সপ্তাহেই
দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কৃষি মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি চলতি সপ্তাহেই তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে পারে। কমিটির সদস্য রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক এমন আভাসই দিয়েছেন।
দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় গত ২৭ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলুকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক, বিএডিসির (নাটোর) নির্বাহী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) মো. সাজ্জাদ হোসেন এবং বিএমডিএর (নওগাঁ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সমশের আলী। সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়। ২৯ মার্চ সকালে কমিটির সদস্যরা প্রথমে ওই গ্রামে বিএমডিএর গভীর নলকূপটি পরিদর্শন করেন। পরে তারা দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে কয়েকজনের সাক্ষ্য নেন। এরপর অভিনাথ ও রবির জমি পরিদর্শনে যান।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা অভিনাথের বাড়িতে গিয়ে দুই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরিবারের সদস্যরা এদিনও অভিযোগ করেন, সেচের পানি না দেয়ার কারণেই দুই কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।
তবে ইউপি কার্যালয়ে সাক্ষ্য দেয়া স্থানীয় কয়েকজন তদন্ত দলের কাছে দাবি করেন, পানি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সাঁওতাল কৃষকরা দেশীয় মদ খেতেন। এ কারণেই তাদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
ওই দিন কমিটির সদস্য রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানান, ঘটনা তদন্তে এই টিম একাধিকবার ঘটনাস্থলে গেছে। অনেকেরই সাক্ষ্য নিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার প্রতিবেদন দেয়ার কথা।
তিনি বলেন, যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়েই প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করেন তিনি।