রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে হাতিরঝিলে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) যে গেট, সেটি এখন বন্ধ। কারণ এর ভেতরে চলছে নির্মাণযজ্ঞ।
বন্ধ গেটের সামনের দিয়ে গেলে অনেকেরই চোখে পড়বে ভেতরে ভারী ভারী নির্মাণ যন্ত্র। কিন্তু ভিতরে কীসের কাজ চলছে?
এফডিসির প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকলে হাতের ডান পাশে ছিল একটি ফাঁকা জায়গা এবং কিছু আধাপাকা ঘর। সেখান থেকে আরও একটু এগিয়ে গেলে ডান দিকেই পড়ত তিন ও চার নম্বর শুটিং ফ্লোর।
এই পুরো অংশটির সব ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে এফডিসির মাল্টিপারপাস ভবন। শুটিং ফ্লোর দুটি ভেঙে ফেলা নিয়ে শিল্পীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও এফডিসি কর্তৃপক্ষ মনে করছেন এতে এফডিসি ও চলচ্চিত্রের উন্নয়ন হবে।
অভিনেতা আলমগীর জানিয়েছিলেন, এ ভবন নির্মাণ যদি শুধু এফডিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনের জন্য হয়ে থাকে, তাহলে দুঃখজনক। যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে সংস্কার করা যেতে পারে।
অন্যদিকে চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, ‘শুনেছি, এটা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে এটা তো ঠিক করতে হবে। স্মৃতি তো থাকবেই, কিন্তু পরিবর্তনও তো প্রয়োজন।’
এফডিসির এ মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয় ২০১৮ সালে। ২০২০ সালে শুরু হয় ভাঙার কাজ। সব ভাঙা শেষে এখন চলছে নতুন ভবনের ভিত্তি তৈরির জন্য মাটি খোড়ার কাজ। তিন তলা বেজমেন্টসহ ১২ তলা ভবন নির্মাণ হবে এখানে।
প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক কে এম আইয়ুব আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি এতে এফডিসির আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে, একই সঙ্গে চলচ্চিত্রের মানুষরাও উন্নত পরিবেশ পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এটাকে বিনোদনকেন্দ্রিক বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করব। এখানে পণ্য বিক্রির কোনো দোকান থাকছে না। মূলত এফডিসির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মকাণ্ড হবে এখানে। নিশ্চিত অর্থ আসার পরিকল্পনা এখানে করিনি আমরা।’
সহকারী প্রকল্প পরিচালক জানান, তিনটি বেজমেন্টের মধ্যে নিচের দুটিতে পার্কিং, প্রথম বেজমেন্টের কিছু অংশ ও গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকবে তিনটি শুটিং ফ্লোর। এগুলোর আকার হবে ৬০ ফিট বাই ৮০ ফিট; অনেকটা ৮-৯ নম্বর ফ্লোরের মতো। গ্রাউন্ড ফ্লোরে আরও থাকবে অভ্যর্ত্থনা কক্ষ, এক্সিবিশন প্লেস, গার্ডেন, লাউঞ্জ।
প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় থাকবে সিনেপ্লেক্স। মোট তিনটি থিয়েটার থাকবে সেখানে। এ ছাড়া ফুড কোর্ট, খোলা জায়গা এবং চিলড্রেন কর্নারও রয়েছে পরিকল্পনায়। এগুলো লিজ দিয়ে পরিচালনা করা হবে বলে জানান আইয়ুব আলী। তৃতীয় ও চতর্থ তলায় থাকবে সিনেপ্লেক্স-২। এখানে হবে দুটি থিয়েটার।
পঞ্চম তলায় হবে আড্ডার স্পেস, মিউজিয়াম, নাট্যমঞ্চ, সেমিনার হল, লাইব্রেরি, ডে কেয়ার। আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমাদের যারা সৃজনশীল মানুষ আছেন, তারা যেন এক জায়গায় বসে কথা বলতে পারেন, সে জন্য এগুলো রাখা হয়েছে।’
ষষ্ঠ তলায় হবে মাল্টিপারপাস হল। সেখানে থাকবে বল রুম, কনভেনশন সেন্টার এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সেন্টার।
সপ্তম ও অষ্টম তলায় ৬০ ফুট বাই ৮০ ফুটের শুটিং ফ্লোর। নবম তলায় জিমনেশিয়াম ও এফডিসির অফিস। দশম তলায় বুটিক হোটেল, আবাসাকি হোটেল। আর একাদশ তলায় থাকবে রেস্টুরেন্ট, খোলা জায়গা। ছাদে বসবে সোলার প্যানেল।
আইয়ুব আলী বলেন, ‘২২ জুলাই থেকে ২৩ জুনের মধ্যে বেজমেন্টসহ গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাঠামো দাঁড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। ভবন তৈরির পেছনে ব্যয় হবে ২৭৪ কোটি টাকা আর পুরো প্রকল্পে ব্যয় ৩২২ কোটি টাকা।’
৯৪ কাঠার জায়গার ৬০ ভাগে হবে ভবন আর বাকি জায়গা ব্যবহৃত হবে সৌন্দর্য বর্ধনে।
আইয়ুব আলী বলেন, ‘ভবনটির মুখ থাকবে কাওরানবাজার রেল ক্রসিং বা প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের দিকে। একটা অভিন্ন ফটক থাকবে। সেখান দিয়ে সবাই ঢুকবেন, যার প্রয়োজন এফডিসির ভেতরে যাবেন, যার প্রয়োজন মাল্টিপারপাস ভবনে যাবেন। সিকিউরিটি থাকবে, যারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন।’
তবে এতে করে বহিরাগতদের পরিচয় নিশ্চিত করা যাবে কি না তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি সহকারী প্রকল্প পরিচালক। তবে ভবনটিতে উঠলে পুরো এফডিসি দেখতে পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
এফডিসির জায়গায় আরও ভবন নির্মাণ হতে পারে বলে আভাস দেন কে এম আইয়ুব আলী।