রমজানের শুরুটা হয়েছে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে। সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়েই নগরীর কর্মব্যস্ত মানুষ ছুটেছেন কর্মস্থলে। দিনের শুরুটা ভালোই ছিল। যানজটে খুব একটা যন্ত্রণায় পড়তে হয়নি কর্মমুখী মানুষকে। কিন্তু বেলা গড়ানোর পর ঘরমুখী মানুষকে পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। চিরচেনা যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানীর রাজপথ।
পবিত্র রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারের সময় বিবেচনায় সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
সে হিসাবে ইফতারের প্রায় তিন ঘণ্টা আগেই কর্মস্থল থেকে ঘরমুখী হয় মানুষ। কিন্তু যানজটে পথে আটকা পড়ে থাকায় তাদেরকে পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। দুপুর ৩টার পর থেকে সচিবালয়ের সামনে আব্দুল গনি রোড ও আশপাশ এলাকায় গাড়ির জট লেগে যায়।
রোববার বিকেলে যানজটে স্থবির হাতিরঝিল। ছবি: নিউজবাংলা
মৎস্য ভবনের দিকে গাড়িগুলো চলছিল থেমে থেমে। এ ছাড়া হেয়ার রোডের পুরো রাস্তা জুড়ে ছিল স্থবিরতা। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানা ও সরকারি কার্যালয়ের গাড়িগুলো দীর্ঘ সময় ধরে যানজটে আটকা আছে। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল লাগোয়া কাকরাইলমুখী রাস্তা ছিল তুলনামূলক ফাঁকা। তবে কাকরাইল মোড় থেকে শান্তিনগর ও মালিবাগমুখী যানবাহনকে পড়তে হয় যানজটে।
রাজধানীতে একাধিক পয়েন্টে ফ্লাইওভারেও ছিল গাড়ির দীর্ঘ লাইন। মগবাজার ও মালিবাগ ফ্লাইওভারে ওঠা গাড়িগুলো এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতেও অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে।
পুরান ঢাকার চিত্রও ভিন্ন কিছু নয়। রমজান সামনে রেখে চকবাজারের শাহী মসজিদ এলাকায় বসেছে ঐতিহ্যবাহী ইফতারের পসরা। ফলে উর্দু রোড, চকবাজার সার্কুলার রোড, ছোট কাটরা ও বড় কাটরায় অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হয়।
রাজধানীর প্রগতি সরণিতে নতুনবাজার মুখী সড়ক কিছুটা ফাঁকা দেখা গেলেও বিপরীতমুখী সড়কে ছিল যানজট। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ধীরগতিতে চলছিল গাড়িগুলো।
রাজধানীর শাহবাগ থেকে বিমানবন্দর অভিমুখী সড়কেও তীব্র যানজট। দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের।
যানজটে আটকা পড়ে গরমে ঘেমে একাকার হতে হচ্ছে গণপরিবহনের যাত্রীদের। মিরপুরগামী আরিফ হোসেন বললেন, ‘অফিস শেষে বাসায় ফিরছি। কারওয়ান বাজার থেকে ১৭ মিনিটে ফার্মগেট পর্যন্ত এসেছি। সামনের পথটুকুতেও এমন অবস্থা থাকলে ইফতারের আগে বাসায় ফেরা কঠিন হবে।’
রোববার বিকেলে শ্যামলী এলাকায়ও ছিল যানজট। ছবি: নিউজবাংলা
এদিকে ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যানজট আরও তীব্রতর হতে থাকে। হাতিরঝিলকে নিরাপদ মনে করে যারা প্রবেশ করেছেন, তাদেরকেও পড়তে হয়েছে ভোগান্তি।
হাতিরঝিলের কুনিপাড়া অংশের সামনে কথা হলো মোটরসাইকেল আরোহী আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বিরক্তিভরা কণ্ঠে বলেন, ‘আপনি নিজেই তো দেখছেন ৩০ মিনিট ধরে একই জায়গায় থেমে আছি। আজ প্রথম রোজা। তাই হয়তো সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাচ্ছে। আর এজন্য যানজট পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে।’
একই কথা বললেন আরেক মোটর সাইকেল আরোহী জুনায়েদ মৃধা। তিনি বলেন, ‘যানজটের কথা আর কী বলব? এটা তো আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে রোজার মাসে পুলিশের এদিকে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত।’
মিরপুর রোডের চিত্রটাও ব্যতিক্রম কিছু ছিল না। অফিস ছুটির পর বলতে গেলে মিরপুর জুড়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। অবশ্য বিকাল ৫টার পর যানজট পরিস্থিতি অনেকটা কমে এসেছে।
তেঁজগাও বিভাগের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘কিছুটা চাপ আছে। তবে গাড়ি রানিং আছে।’ যানজটের কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘প্রথম রোজা হওয়ায় পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে সবাই দ্রুত বাসায় ফেরার চেষ্টা করছে। তাই চাপ তো একটু থাকবেই।’
তবে সার্বিক পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ট্রাফিক বিভাগ চেষ্টা করছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।