বরিশালের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টা-পাল্টি হামলায় অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন।রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী বাসস্ট্যান্ড এলাকার দোকানি মো. ফয়সাল জানান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ও সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী শ্রমিকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে এ বিষয়ে সরাসারি কিছু বলতে রাজি হয়নি পুলিশ।আহতরা হলেন বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহামুদ, শ্রমিক মো. মানিক, মো. শামীম, মো. নাসির। তারা সবাই পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অনুসারী।
আহত অন্যরা হলেন মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাসের সমর্থক মো. কালাম ও দিপু সিকদার।
শ্রমিক নেতা সুলতান মাহামুদ বলেন, ‘আমি আমার ব্যক্তিগত অফিসে বসা ছিলাম। হঠাৎ করে কথিত শ্রমিক নেতা রইজ আহম্মেদ মান্না, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ, মুনিম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিবসহ দুইশতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী শর্টগান ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলা করে।
‘এতে আমিসহ কয়েকজন শ্রমিক আহত হই। তারা সব মেয়র সাদিকের কথায় আমার ওপর হামলা চালিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সাদিক রূপাতলী বাস টার্মিনাল কন্ট্রোলে নিতে পারছে না আমার কারণে। এ জন্য আমার ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। আমার অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখেছে। কালকে সাদিক আমাকে নিতে লোক পাঠিয়েছিল, আমি যাইনি। আমি জাহিদ ফারুখের লোক বলে সাদিক এই হামলা করিয়েছে।’
সুলতান বলেন, ‘আমি এবং আমার অনুসারীরা কেউ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার সাহস পাচ্ছি না, যে কারণে আমার নিজ বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছি। হাসপাতালে ভর্তি হলে আমাদের ওপর আবার হামলা করা হবে।’
সিটি মেয়রের অনুসারী বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা কারও ওপর হামলা করিনি। যাদের নাম বলছেন তারা তো টার্মিনালেই আসেনি। বরং সুলতান মাহামুদ আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে আমাদের দুই শ্রমিককে আহত করেছে। তাদের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।’
একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বাবু বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে টার্মিনালে ছিলাম, কিন্তু কোথাও কোনো ঝামেলার খবর শুনিনি। উল্টো আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। যেখানে আমাদের শ্রমিক পাচ্ছে, সেখানেই মারধর করা হচ্ছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘গণ্ডগোল দেখে আমি ব্যাংকের গেট আটকে দেই। কারা ভাঙচুর করছে সেটা বলতে পারব না।’
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার শারমিন সুলতানা রাখি বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে।’
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এনামুল হক বলেন, ‘এখানে একটি অফিস ভাঙচুর অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। যারাই এই অপরাধ করেছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজগুলো পর্যালোচনা করে দেখব আমরা। পুলিশের সামনে এই ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ ছিল তবে ঘটনাস্থলে নয়, তা ছাড়া পুলিশের কোনো গাফলতি নেই।’
দীর্ঘ সময় ধরেই রূপাতলী মিনিবাস টার্মিনাল দখল নিয়ে প্রতিমন্ত্রী ও মেয়র সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। শনিবার দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।