ঈদের আগে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং অবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালুর দাবিতে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে খুলনায়।
সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে জেলা প্রেস ক্লাবের শহীদ সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে রোববার দুপুর ১২টায় এ কর্মসূচি হয়।
সংগঠনের আহ্বায়ক কুদরত-ই-খুদা এ বলেন, ‘২০২০ সালের ২ জুলাই ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল একযোগে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক শিল্পের মধ্যে বিশ্ববাজার বিবেচনায় সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প পাটশিল্প। একে দেশি-বিদেশি বড় পুঁজিপতিদের মুনাফার ক্ষেত্রে পরিণত করার প্রথম ধাপ হিসেবে এই পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
‘বিজেএমসি, অর্থ ও পাট মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও ভ্রান্তনীতির কারণে পাটকলগুলোর লোকসান হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে প্রায় সব সরকারই এই লোকসান প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রেখে এসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। অথচ এখনও এসব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার ভিত্তিতে পরিচালনা করে লাভ করার সুযোগ আছে।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)-এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী মাত্র ১২ শ কোটি টাকা ব্যয় করে এসব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করা সম্ভব। পাটশিল্প বিকাশের মধ্য দিয়ে আমাদের বেকার সমস্যা অনেকটা লাঘব করা যাবে। একই সঙ্গে বর্তমান বিশ্ববাজার বিবেচনায় দেশের অর্থনীতিতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
‘কিন্তু সরকার লিজ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিমালিকদের বরাদ্দ দিয়ে এসব পাটকল পরিচালনা করার প্রক্রিয়া নিয়ে এগুচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বিকাশের কথা বিবেচনা করলে সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবে।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার ফলে স্থায়ী বদলি ও দৈনিকভিত্তিকসহ প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে। গত ২১ মাস তারা অমানবিক জীবন-যাপন করছে। শুধু পাটকল শ্রমিকেরাই নয়, পাটশিল্প সংশ্লিষ্ট প্রায় তিন কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর কালো ছায়া নেমে এসেছে। সরকার তিন মাসের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের ঘোষণা দিলেও এখনও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে শিশু ও বৃদ্ধরা। তাদের খাদ্য, চিকিৎসা ও রক্ষণাবেক্ষণে অক্ষম হয়ে পড়েছেন এই বেকার শ্রমিকরা। আবার শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারের কথা বলতেও দিচ্ছে না সরকার। শ্রমিকরা রাজপথে কর্মসূচি দিলে তাতে বাধা দেয়া হচ্ছে।’
পাটকল সংগঠনের আহ্বায়ক কুদরত-ই-খুদা আরও বলেন, ‘এক মাস পর ঈদুল ফিতর। একদিকে বেকারত্ব আর অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে এই রোজার মাসে শ্রমিকদের পানি খেয়ে সেহরি ও ইফতার করার বিকল্প নেই।
এ সময় শ্রমিকদের পক্ষে ৫ দফা দাবি জানিয়ে ঈদের আগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানান এই শ্রমিক নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোট খুলনা জেলা সমন্বয়ক মিজানুর রহমান বাবু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ জেলা আহবায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী খুলনা জেলা সভাপতি মো.মোজাম্মেল হক খান, সিপিবি নেতা এইচ এম শাহাদাৎ, শেখ আবদুল হান্নান, সুতপা বেদজ্ঞ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ জেলা সদস্য মোস্তফা খালিদ খসরুসহ অনেকে।