যশোরের শারীরিক প্রতিবন্ধী লিতুন জিরার পড়াশোনা ও চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রোববার সকালে লিতুনের পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
লেখক বলেন, ‘হাত-পা ছাড়া জন্ম নেয়া লিতুন মুখ দিয়ে লিখে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পায়। সে এখন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। অদম্য মেধাবী লিতুন ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
‘আজকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের হাতে অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। লিতুনের মতো অদম্য মেধাবীরা হাজারও মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।’
লিতুনের বাড়ি মনিরামপুরের শেখপাড়া খানপুর গ্রামে। তার বাবা হাবিবুর রহমান শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ আর মহিলা কলেজের প্রভাষক ও মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে লিতুন ছোট।
জন্ম থেকেই লিতুনের দুই পা নেই। কনুইয়ের নিচ থেকে দুই হাতও নেই। তবে শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা লিতুনকে থামাতে পারেনি। ডান হাতের বাহু দিয়ে গালের সঙ্গে কলম চেপে লিখে সে পড়াশোনা চালিয়ে আসছে।
পড়াশোনায় সফলতার পাশাপাশি টানা দুইবার সে রচনা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছে। খুলনা বেতারে নিয়মিত গান ও কবিতা আবৃত্তিও করে।
গত ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে লিতুন চিঠি লেখেন। চিঠি পেয়ে মেয়েটির খোঁজ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আর্থিক সহায়তা পেয়ে লিতুন বলেন, ‘আমার স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। স্বপ্ন পূরণে আমি ও আমার পরিবার সংগ্রাম করে যাচ্ছি। সেই সংগ্রামে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাশে পেয়েছি। বাবাই আমাকে বিষয়টা প্রথম জানায়। আমরা প্রতিবন্ধীদের প্রতি খুবই আন্তরিক একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি।’
বাবা হাবিবুর বলেন, ‘লিতুন খুবই মেধাবী। ছোটবেলা থেকেই উদ্যমী। কিছু করার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। সেই আগ্রহ আর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সে অনেক দূর এগিয়েছে। পিএসসিতে জিপিএ ফাইভের সঙ্গে বৃত্তি পেয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা আশা করি সে ধরে রাখবে। ও যত দূর পড়তে চায়, আমি তত দূর পড়াব।’
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লিতুনের প্রচুর খরচ। সে নিজে চলাফেরা করতে পারে না। তাই একটা হুইলচেয়ার দরকার। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অর্থসহায়তা দিয়ে তার জন্য হুইলচেয়ার কেনা হবে। টাকাটা মূলত ভবিষ্যতে লিতুনের পড়াশোনার কাজে লাগানো হবে।’
এর আগে যশোরের আরেক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার নূরার পাশে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী। জন্ম থেকেই দুই হাত ও এক পা না থাকা তামান্না জেএসসি ও এসএসসিতে ভালো ফল করার পর এইচিএসসিতেও জিপিএ ফাইভ পান।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে বিষয়টি।