বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেতুর সরকারি চাকরি ছাড়ার পেছনে ‘পর্দার বরখেলাপ’

  •    
  • ২ এপ্রিল, ২০২২ ২১:৫৭

সেতু বলেন, ‘আমি যে চাকরিটা করি, সেখানে শুধু নারীরাই কাজ করেন না, সেখানে পুরুষরা চাকরি করেন। এ ছাড়া মাঠে গিয়ে অনেক সময় কাজ করতে হয়। যে কারণে অনেক সময় পর্দার খেলাপ হয়। এটা আমার ভালো লাগত না। কারণ পর্দা করতে আমি পছন্দ করি। ইসলামি আদর্শে জীবন গড়তে চাই। এ জন্য পর্দার বরখেলাপ হলে মন খারাপ থাকত।’

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সরকারি চাকরি ছেড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন জান্নাত ই হুর সেতু। সাবেক এই মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, তার চাকরি ছাড়ার অন্যতম কারণ কর্মস্থলে পর্দার বরখেলাপ। তবে শুরুতে তিনি বলেছিলেন, সন্তানদের সময় দিতে পুরোদমে গৃহিণী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার রাণীশিমুল গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে সেতু। ২০১১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিশারিজ ম্যানেজমেন্টে এমএস করেন। একই বছর ২৯তম বিসিএস (মৎস্য) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। সে বছরই সহপাঠী সানোয়ার রাসেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। রাসেল বর্তমানে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত।

দাম্পত্য জীবনে সেতু তিন কন্যাসন্তানের জননী। স্বামী, শাশুড়ি ও সন্তানদের নিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর নজরুল সেনা স্কুল রোড এলাকায় বসবাস করেন।

কর্মজীবন থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিতে গত জানুয়ারিতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন তিনি। সে অনুযায়ী, ৩১ মার্চ ছিল কর্মস্থলে তার শেষ দিন।

কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পর সেতুকে ফুলের তোড়া দিয়ে এবং কেক কেটে বরণ করা হয়। সেই ছবি নিজের ফেসবুকে আপলোড করেন স্বামী রাসেল। এর পরই বিষয়টি জানাজানি হয়।

ফেসবুক পোস্টে রাসেল লেখেন (স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো), ‘আজ ৩১ মার্চ ২০২২ খ্রিস্টাব্দ (খ্রিষ্টাব্দ)। আজকে আমার কলিগ Jannat Setu মৎস্য অধিদপ্তরে তার দীর্ঘ দশ বছরের কর্মজীবন থেকে স্বেচ্ছা (স্বেচ্ছায়) অবসর নিলেন। গৌরীপুরে আজকে (আজ) তার শেষ কর্মদিবস ছিল (ছিল)। বিসিএস পরীক্ষায় পাশ (পাস) করে চাকুরি (চাকরি) পাওয়া কঠিন, সেই চাকুরি হাসিমুখে ছেড়ে আসা কঠিনতম। তিনি যে এই কঠিনতম কাজটি খুব সহজেই করতে পেরেছেন!

‘জীবনের নতুন অধ্যায়ে পদার্পণ উপলক্ষ্যে (উপলক্ষে) আমার কন্যারা তাদের দাদুমণি এবং ফুপির সঙ্গে পরিকল্পনা করে তাদের মাকে সারপ্রাইজ রিসিপশন জানাল। তারা খুবই আনন্দিত, কেননা, আগামীকাল থেকে তাদের মাকে আরও অধিক সময় কাছে পাবে।

‘দ্বীন এবং সংসারের জন্য তার এই সেক্রিফাইস আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করুন। তার ইহকাল এবং আখিরাত বরকতময় করুন। আমীন (আমিন)।’

চাকরি ছাড়ার কারণ হিসেবে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় সেতু নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘আমাদের তিন কন্যাসন্তান। স্বামী-স্ত্রী দুজনই সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় তাদের ঠিকমতো সময় দিতে পারি না। ফলে সন্তানরা বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সবদিক চিন্তা করে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই।’

তার এই বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হয়। এর পরই কর্মজীবী নারীর এভাবে চাকরি ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয় নানা প্রশ্ন ও আলোচনা। এ অবস্থায় শনিবার সেতুর সঙ্গে আবারও কথা বলে নিউজবাংলা।

সেতু বলেন, ‘আমি যে চাকরিটা করি, সেখানে শুধু নারীরাই কাজ করেন না, সেখানে পুরুষরা চাকরি করেন। এ ছাড়া মাঠে গিয়ে অনেক সময় কাজ করতে হয়। যে কারণে অনেক সময় পর্দার খেলাপ হয়। এটা আমার ভালো লাগত না। কারণ, পর্দা করতে আমি পছন্দ করি। ইসলামি আদর্শে জীবন গড়তে চাই। এ জন্য পর্দার বরখেলাপ হলে মন খারাপ থাকত।’

তিনি বলেন, ‘আমার বড় মেয়ের বয়স ৯ বছর। মেজো মেয়ে ৫ বছর ও ছোট মেয়ের বয়স ১৮ মাস। বড় মেয়ের জন্মের পর আমার শাশুড়ি লালন-পালন করতেন। শ্বশুর মারা গেছেন। ছোট দুই বাচ্চাকে দেখাশোনা করতে শাশুড়ি অনেক কষ্ট করেন। তা ছাড়া আমার বাসায় ফিরতে ফিরতে বেশির ভাগ সময় সন্ধ্যা হয়ে যেত। সন্তানদের ঠিকমতো সময় দিতে পারতাম না। আমাদের তেমন আর্থিক সংকটও নেই। সবদিক চিন্তা করে চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।’

সেতুর স্বামী সানোয়ার রাসেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী খুব ধার্মিক। সব সময় পর্দা করে। কিন্তু কর্মস্থলে তার মতো করে পুরোপুরিভাবে পর্দা করে চলতে পারত না। সে চায়, ইসলামের পথে জীবনযাপন করতে। এ ছাড়া আমাদের সন্তানরাও মা-বাবার আদর থেকে অনেকটা বঞ্চিত হচ্ছিল। এই অবস্থায় সে চাকরি ছেড়েছে।

এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আপনার কোনো চাপ ছিল কি না- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একেক মেয়ে একেকভাবে জীবনযাপন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে বিষয়টা এমন না যে, মেয়েরা সরকারি চাকরি করতে পারবে না। এটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। আমার চাপ দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’

চাকরি ছাড়তে বাধা দিয়েছিলেন কি না- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই বাধা দেইনি। বলেছি, তোমার মন চাইলে ছাড়তে পারো। কারণ সে ইসলামিক পথে থাকতে চায়, থাকুক। এ ছাড়া সব সন্তানই চায় বাবা-মা বেশি সময় ধরে তাদের কাছাকাছি থাকুক। বিশেষ করে মাকে কাছে পেলেই সন্তানরা আনন্দে থাকে।’

অনেক পুরুষ তো চাকরি ছেড়ে সন্তান লালন-পালন করেন, আপনি এমন ভেবেছিলেন কি না- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আসলে মেয়েরাই তো বাড়িতে থাকে। আর আমি ছেড়ে দিলে ওর (স্ত্রীর) তো পর্দা করা হতো না। ছোট শিশুদের দেখাশোনা ও যত্ন আমার চেয়ে সে ভালো করতে পারবে। তাই তার সিদ্ধান্তে আমি বাধা হইনি।’

এ বিভাগের আরো খবর