করোনার ধাক্কা সামলাতে গত দুই বছরে বাংলাদেশকে ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলার ঋণসহায়তা দিয়েছে বহুপক্ষীয় সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ২০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান মার্সি টেম্বন এ তথ্য জানিয়েছেন। এই সহায়তা মহামারি কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
শুক্রবারও ২৫ কোটি ডলার বা ২ হাজার ১৫৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে উন্নয়ন সংস্থাটি। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মার্সি টেম্বন বলেছেন, ‘২০২০ সালের মার্চে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে জরুরি সহায়তা, টিকাদান এবং অন্যান্য সংকট পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা সমর্থনের জন্য বাংলাদেশকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। এ ঋণ সবুজায়ন, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করছে। এ ছাড়া কার্বন হ্রাসের পথ প্রশস্ত করতে এ-সংক্রান্ত নীতি এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো আরও শক্তিশালী করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে আরও ত্বরান্বিত করবে।’
শুক্রবার ২৫ কোটি ডলারের যে ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে, তা করোনার ফলে অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থান ধরে রাখতে এবং বাংলাদেশের আর্থিক খাত আরও শক্তিশালী করতে ব্যয় করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ঋণসহায়তায় বাংলাদেশের আর্থিক ও আর্থিক খাতের নীতি শক্তিশালী হবে। এ ছাড়া করোনার ফলে অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থান ধরে রাখতে এ অর্থ অগুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
‘বাংলাদেশকে ফাস্ট রিকভারি অ্যান্ড রেজিলেন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ প্রকল্পের আওতায় এ অর্থ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারকে কোভিড-১৯ মহামারি-পরবর্তী সময়ে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক। ভবিষ্যতের ধাক্কাগুলোর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং নীতিগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তার অংশ হিসেবে এ অর্থায়ন করছে সংস্থাটি।
এ অর্থ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে এবং প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সহায়ক হবে এবং রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সক্ষমতা বাড়াবে। এটি দক্ষতা উন্নত করতে এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান টেম্বন বলেন, ‘এ প্রকল্পটি জাতীয় ট্যারিফ নীতির উন্নয়নে সহায়তা করবে, যা বাণিজ্য কর আধুনিকীকরণে সহায়তা করবে। এর আওতায় অনাবাসিক ডিজিটাল পরিষেবা সংস্থাগুলোসহ বিদেশি সংস্থাগুলোর সক্ষমতাও বাড়ানো হবে। যেমন- অনুসন্ধান, সোশ্যাল মিডিয়া ও ক্লাউড পরিষেবা সংস্থাগুলোকে আধুনিক করা হবে, ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়ার কাজও সহজ করা হবে।
‘এ অর্থায়ন ব্যাংক কাঠামো সংস্কারে ব্যবহার করা হবে। পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়ন ও দক্ষতা জোরদারের জন্য নতুন আইন প্রস্তুত করা হবে, যা ডিজিটাল ও মোবাইল আর্থিক পরিষেবাগুলোকেও উৎসাহিত করবে। প্রোগ্রামটি বিভিন্ন পাবলিক সেভিংস সুদের হারের সমন্বয় করবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এই প্রকল্প সরকারকে নগদ স্থানান্তর কর্মসূচি (মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবা) আরও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করবে। ভবিষ্যতের ধাক্কা মোকাবিলা এবং নগদভিত্তিক প্রোগ্রামের জন্য সরকার-টু-ব্যক্তি পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার সম্প্রসারণ করবে। জরুরি সহায়তার জন্য নতুন ও বিদ্যমান সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ জলবায়ু সম্পর্কিত সংকটগুলোয় আরও দ্রুত সহায়তা দেওয়ার কাজ সহজ করবে।
বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, ‘এই অর্থায়ন বাংলাদেশকে সবুজ ও টেকসই উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তা করবে। আর্থিক ও আর্থিক খাতের নীতিগুলোর প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এটি সহায়তা করবে। যখন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কভারেজ ও দক্ষতা বাড়ে, তখন অর্থনৈতিক ধাক্কা এমনিতেই মোকাবিলা করা সম্ভব। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দরিদ্র ও দুর্বলদেরও রক্ষা করা যায়।’