বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিশু-মাতৃমৃত্যু, বাল্যবিয়ে না কমায় উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা

  •    
  • ২ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:৩৯

অধ্যাপক ডা. রওনক জাহান বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে গত ৫০ বছরে অনেক অর্জন থাকলেও মাতৃ, শিশুমৃত্যু, বাল্য বিয়ে, অল্প বয়সে গর্ভপাতের হার কমাতে পারছি না। আমরা একটি জায়গাতে আবধ্য রয়েছি। স্বাস্থ্যখাতে দুই-একটি বিষয়ে আমরা সফতলা দেখাতে পারলেও নারীস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যুর হার, নারীর প্রতি সহিংসতার এগুলোতে আমার এগোতো পারছি না। বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে।’

স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের স্বাস্থ্যখাতে বেশ কিছু অর্জনের কথা স্বীকার করলেও মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না কমায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, নারীর ক্ষমতায়নে দেশ অনেক ভালো করছে, কিন্তু শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার আমরা কমাতে পারছি না।

২০১১ সালের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে শিশু ও মাতৃমৃত্যু কমানোর যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা পূরণ না হওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বিকাশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে শনিবার এমন শঙ্কার কথা জানান বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রওনক জাহান বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে গত ৫০ বছরে অনেক অর্জন থাকলেও মাতৃ, শিশুমৃত্যু, বাল্য বিয়ে, অল্প বয়সে গর্ভপাতের হার কমাতে পারছি না। আমরা একটি জায়গাতে আবধ্য রয়েছি। স্বাস্থ্যখাতে দুই-একটি বিষয়ে আমরা সফতলা দেখাতে পারলেও নারীস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যুর হার, নারীর প্রতি সহিংসতার এগুলোতে আমার এগোতো পারছি না। বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিটা অনুষ্ঠানে বলা হয় স্বাস্থ্যবাজেট বাড়ানোর জন্য, অথচ যেটুকু রবাদ্দ দেয়া হয় সেটিও খরচ করতে পারে না মন্ত্রণালয়। আমাদের আরেকটি বড় দুর্বলতা স্বাস্থ্যখাতে অব্যবস্থাপনা। বছরের পর বছর ধরে আমরা সুপারিশ দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি। গত ২৫ বছর ধরে এমন সুপারিশ করা হলেও চিকিৎসক, জনবল, ওষুধ সংকট কাটাতে পারেনি।’

বাংলাদেশের যে অর্জন সেটি আমরা কেবল দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করি। পাশের দেশ নেপালও আমাদের অনেক ছোট মনে করে। থাইল্যান্ডসহ ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আমরা কতটা এগোতে পেরেছি, সেটি দেখা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘থাইল্যান্ড গত ৬০ বছরে সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পেরেছে। কীভাবে পেরেছে সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের সঙ্গে কেন তুলনা করি না আমরা?’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, স্বাস্থ্যখাতে ৫০ বছরে স্বাস্থ্য খাতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পাকিস্তানে সময় যে ব্যবস্থাপনা ছিল তার চেয়ে অনেকগুণ আগ্রগতি হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা দিয়েছে। ধনী মানুষ অসুস্থ হলে বেসরকারি ব্যবস্থাপনা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে আসতে পারে, গবীর মানুষ সরকারি হাসপাতালে তেমন সেবা পায় না বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে গবেষণায় জোর দেয়ার দাবি জানান তিনি।

প্রবীণ এই বিশেষজ্ঞ বলেন,’ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসকারি সংস্থাগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সির (সিডা) স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর আমাদের জন্য একটি মাইলফলক। এই বই স্বাস্থ্যখাতের একটি দলিল। আমাদের মাতৃ ও শিশুমৃত্যু কমলেও বেশকিছু দিন ধরে এক স্থানে রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যে যে বৈষম্য বাড়ছে, সেটি খুবই দুঃখজনক।’

তিনি মনে করেন, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় মেটাতে গিয়ে অনেকে মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। গড় আয়ু বাড়লেও স্বাস্থ্যসেবা ভালো না হওয়ায় শেষ সময়ে গিয়ে বয়স্করা বোঝা হয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য স্বাস্থ্য কমিশন জরুরি।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও বর্তমান সময়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘অনেক দেশ জিডিপির ২-৩ শতাংশ ব্যয় করে স্বাস্থ্য খাতে, আমাদের ১ শতাংশেরও কম। তার পরও আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এগিয়েছে, যেটি ইতিবাচক।’

দেশে খাতটিতে এখনও অনেক অব্যবস্থাপনা রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। সেই সঙ্গে দেশে পুষ্টি সমস্যা, বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কথাগুলোও তুলে ধরেন। এজন্য মানুষের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান সাবেক এই মন্ত্রী।

প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যে মোট ব্যয়ের ১৫ শতাংশ হওয়া দরকার, কিন্তু আমরা একেবারে পিছিয়ে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা নেই বললেই চলে। আবার হাসপাতালগুলোতে নানা অব্যবস্থাপনা। অনেক দামি দামি জিনিসপত্র কেনা হয়, কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় না, আছে নিয়োগে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ। এগুলো দূর করতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর