ক্যানসারে আক্রান্ত তরুণ কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের শরীরে অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। থাইরয়েড সার্জারির পর তিনি স্থিতিশীল আছেন বলেও জানা গেছে।
গদ্যকার কুশল ইশতিয়াকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শুক্রবার কুশল ইশতিয়াক লিখেছেন, ‘ইমতিয়াজ ভাইয়ের সার্জারি শেষ হয়েছে। ভাবীর কাছ থেকে জানা গেল, উনি ভালোই আছেন। সুস্থ আছেন। সার্জারির মাধ্যমে থাইরয়েডের রিমুভালও ভালো হয়েছে। অর্থাৎ অপারেশন সফল বলা যায়।’
শুক্রবার দুপুরের পর ভারতের চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে তার শরীরে অস্ত্রোপচার শুরু হয়।
অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কবি মুজিব মেহদী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পাঠকের ভালোবাসা নিশ্চয়ই তাকে ক্যানসারের মুখ থেকে ছিনিয়ে আনবে, যাতে সে তার মাকে টোকিও শহরটা কিনে দিতে পারে।’
শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ার খবরটি বৃহস্পতিবার ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ইমতিয়াজ মাহমুদ নিজেই জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘ক্যানসারের বিষয়টা ডাক্তার নিশ্চিত করেছেন। কাল সার্জারি।’
ওই পোস্টের কমেন্টে তিনি আরও লিখেছেন, ‘পুনশ্চ: এই অসুখ বিষয়ে দয়া করে কেউ মেসেঞ্জারে নক করবেন না। তেমন কিছু জানানোর মনে করলে আমি জানাব।’
অন্যদের কমেন্ট করার সুযোগটিও তিনি বন্ধ করে রেখেছেন।
বুধবার আরেক পোস্টেও এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ।
তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘চেন্নাইয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম তিন মাস আগে। নানা ধরনের জটিলতা ছিল। ফুসফুস, হার্ট ইত্যাদি বিষয়ক। এর বাইরে মাইনর একটা সমস্যা ছিল, কণ্ঠস্বরে। কয়েক বছর ধরেই কথা বলতে সমস্যা হচ্ছিল।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘ভাবছিলাম, কথা না বলতে না বলতে হয়তো এমন হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে সিটি স্ক্যান থেকে জানা গেল থাইরয়েডের সমস্যা। তারা বায়োপসি করতে দিল। রিপোর্টে ক্যানসারের আশঙ্কা; সার্জারির পরামর্শ।’
কবির শরীরে ক্যানসার শনাক্ত হওয়ায় ব্যথিত হয়েছেন সমসাময়িক কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্যনুরাগী ও তার অসংখ্য ভক্ত।
কবির দ্রুত সুস্থতা কামনা করে ফেসবুকে পোস্টও দিচ্ছেন তারা।
কবি ও লেখক শোয়াইব জিবরান লিখেছেন, ‘সুস্থ হয়ে যাবেন, কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ। আমাদের প্রার্থনায় আমরা বিশ্বাস রাখি।’
শোয়াইব জিবরানের পোস্টে কবির সুস্থতা কামনা করেছেন বাংলা সাহিত্যের আরেক শক্তিমান কবি নির্মলেন্দু গুণ।
লেখক সুমন রহমান লিখেছেন, ‘গতকাল ইমতিয়াজ মাহমুদ যখন আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান, তখন তিনি তার বায়োপসি রিপোর্টের জন্য চেন্নাই হাসপাতালে অপেক্ষা করছিলেন। আজকে তার স্ট্যাটাস পড়ার পর বুঝলাম। এর পর থেকে আমি বেচাইন হয়ে আছি। কোনো দিন দেখা হয়নি, অথচ কত মমতায় মাখা এই যোগাযোগ!’
ইমতিয়াজ মাহমুদকে ‘বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন’ আখ্যা দিয়ে সুমন রহমান লিখেছেন, ‘আর ভেতরে ভেতরে নিজের ব্যাপারে কত নিরাসক্ত, আর অন্যের ব্যাপারে কত মমতাময়!’
থাইরয়েড ক্যানসার থেকে মুক্ত হয়ে কবি অচিরেই ফিরে আসবেন বলে আশাবাদ রেখেছেন তিনি।
এমন খবরে বিষণ্ণ হয়েছেন সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক ফারুক ওয়াসিফ।
ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘মানুষটা বড় প্রতিষ্ঠান আর করপোরেটদের উপেক্ষার মধ্যে দিয়ে লেখার জোরেই পাঠকের মনে দাগ কেটেছেন। তার নিজস্ব স্বর ও ভঙ্গিমা বাংলাদেশে কবিতাকে আবারও জনপ্রিয় করে তুলেছে। আমি মনে করি, ইমতিয়াজ একজনই।’
ফারুক আরও লেখেন, ‘আগামীকাল তার ক্যানসারের সার্জারি হবে ভারতের চেন্নাইয়ে। আশা করি, নিরোগ হয়ে ফিরে আসবেন নিজের নির্জনতায়। আমাদের অনেকের ভালবাসা আপনার সঙ্গে আছে, ইমতিয়াজ।’
কবি সাখাওয়াত টিপু লিখেছেন, ‘কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের অসুস্থতার খবর শুনে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। সে আমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাবানদের একজন। ছাত্রাবস্থা থেকে ইমতিয়াজকে চিনি। কবিতা নিয়ে কত কথা, কত স্মৃতি! খুব সংবেদনশীল একজন মানুষ ও কবি। প্রতিবার ভাবি বরিশাল যাব, তার সাথে দেখা হবে! আর যাওয়া হয় না। ইমতিয়াজ মাহমুদ সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক, আমার প্রার্থনা এটুকুই!’
ইমতিয়াজ মাহমুদের জন্ম ১৯৮০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতক করেছেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিতে কাজ করেছেন বছরখানেক। ২০০৬ সাল থেকে তিনি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এখন পর্যন্ত তার আটটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রকাশিত পেন্টাকল কাব্যগ্রন্থের জন্য কলকাতার কৃত্তিবাস পুরস্কার পেয়েছেন ইমতিয়াজ মাহমুদ।