বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মেগা প্রকল্পের লগ্নি ফেরত না এলে এ দেশও শ্রীলঙ্কা হবে’

  •    
  • ২ এপ্রিল, ২০২২ ১৬:৫৪

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা থেকে এবং আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখনই মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। এসব প্রকল্পে আমরা যে অর্থ বিনিয়োগ করছি, তা যদি সময়মতো ফেরত না আসে, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে।’

দেশের প্রয়োজনে বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের পাশাপাশি কম গুরুত্বপূর্ণ অনেক মেগা প্রকল্পও নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব প্রকল্পে করা বিনিয়োগ দ্রুত সময়ে ফেরত না এলে বাংলাদেশকেও শ্রীলঙ্কার পরিণতি বরণ করতে হতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

শনিবার ইনস্টিটিউট অফ চাটার্ড অ্যাকাউনটেন্টস অফ বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর কারওয়ানবাজারে আইসিএবি কার্যালয়ে আয়োজিত এ আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা থেকে এবং আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখনই মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। এসব প্রকল্পে আমরা যে অর্থ বিনিয়োগ করছি, তা যদি সময়মতো ফেরত না আসে, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে।

‘আমাদের অনেকগুলো মেগা প্রকল্প হচ্ছে, যেগুলোর প্রয়োজন আছে। কিন্তু এমন অনেকগুলো আছে, যেগুলোর এই মুহূর্তে আসলে কোনো উপযোগিতা বা প্রয়োজন নেই। পদ্মাসেতু আমাদের দরকার আছে, যদিও এখানে ব্যয় বেড়েছে অনেক। কিন্তু ওই রুটে পদ্মা রেল সেতুর খুব একটা প্রয়োজন নেই। কারণ পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে ওই এলাকা থেকে সহজেই পণ্য ঢাকায় আসবে, আবার নৌ পথ রয়েছে। এখানে রেলপথে যে এক্সট্রা ভ্যালু এডিশন হওয়ার কথা, সে সুযোগ নেই। যে বিশাল বিনিয়োগ হচ্ছে, সেটা ফেরত আসার সুযোগ নেই।

‘আমাদের ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইন হচ্ছে, তা দরকার আছে। এই পথে আরো বিনিয়োগ দরকার। কারণ এটা আমাদের অর্থনীতির লাইফ লাইন। কিন্তু আমাদের বিশাল টাকা খরচ করে মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত রেললাইন বসানোর কোনো দরকার নেই। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের এমন কোনো বাণিজ্য হবে না, যা দিয়ে এই বিনিয়োগ ফেরত আসতে পারে।

‘রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে আমাদের ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য আমার আড়াই বিলিয়ন ডলারের জায়গায় ১৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছি। এই প্রকল্প হয়তো আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে কাজে আসবে। কিন্তু আমাদের টাকা তো এখন দরকার। এ টাকা দিয়ে যদি আমরা আমাদের সবগুলো হাইওয়ে ফোরলেন করে ফেলতাম, সড়কগুলো আরো চওড়া করতে পারতাম, তাহলে রেট অফ রিটার্ন অনেকগুণ বেশি পেতাম। অর্থনীতিতে আরও দ্রুত উপকার পাওয়া যেত।

‘তবে যেটা হয়ে গেছে, সেটা হয়ে গেছে, সেখানে তো কিছু করার নাই। সামনের মেগা প্রকল্প নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। কারণ এইভাবে যদি আমরা মেগা প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের কোনো অর্থ ফিরে না পাই, তাহলে আমাদের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতোই হবে।

‘তবে বাংলাদেশে এখনও ভালো অবস্থায় আছে। এই ভালো অবস্থায় থাকার সময়েই ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে। প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি সাবধান হতে হবে।’

শনিবার ইনস্টিটিউট অফ চাটার্ড অ্যাকাউনটেন্টস অফ বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় বক্তব্য দেন পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। ছবি: নিউজবাংলা

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘আমাদের এখন যে পরিমাণ রপ্তানি হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি আমদানি হচ্ছে, আবার রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। ফলে ব্যালান্স অফ পেমেন্টের ঘাটতি বাড়ছে। এখন যেভাবে চলছে, সেই হিসেব অব্যাহত থাকলে বছর শেষে এটি ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। কিন্তু ইতিহাসে কখনোই আমাদের ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের ঘাটতি ৮ থেকে ৯ বিলিয়নের বেশি হয়নি। এই আয় ও ব্যয়ের হিসেবে এখনই সচেতন হতে হবে।’

মনসুর বলেন, ‘আমাদের ব্যয়গুলোর ক্ষেত্রে আরও সংযত হতে হবে। দেশের প্রত্যেক সেক্রেটারির জন্য একজন করে বডিগার্ড দিতে হয়, কেন জানি না। পৃথিবীর কোনো দেশের সচিবদের জন্য এরকম বডিগার্ড নেই। প্রত্যেক সচিবসহ বড় কর্মকর্তাদের চকচকে নতুন গাড়ি দিতে হয়, না হলে নাকি স্ট্যাটাস থাকে না। পৃথিবীর অন্য দেশগুলো নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে বা দেশীয় কোম্পানিগুলোর গাড়ি দিয়েই এই প্রয়োজন মেটায়। মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করার প্রবণতা আমাদের দেশে বেশি। কিন্তু যে হারে ব্যয় সে রকম সামর্থ্য আমাদের নেই। আর সামর্থ্য নেই বলেই সংযত হতে হবে।’

মনসুর বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান অবস্থায় ব্যাংকের ডিপোজিট কমছে, এতে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাও কমে যাবে। বর্তমানে ব্যাংক খাতে মুনাফা কমছে। এক সময় ব্যাংক খাতের রিটার্ন অফ অ্যাসেট ছিল ১ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। রিটার্ন অফ ইকুইটি যেখানে ছিল ২৪ শতাংশ, তা এখন নেমে দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশ। তাহলে দেশে এতো ব্যাংক কেন হচ্ছে? কেন নতুন নতুন ব্যাংকের জন্য সবাই দাঁড়িয়ে আছে? কারণ এখন যারা ব্যাংক চাচ্ছে, তারা ব্যক্তিস্বার্থে চাচ্ছে, ব্যাংক খাতের স্বার্থ বা অর্থনীতির স্বার্থে চাচ্ছে না। এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।’

দেশের কর ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন রিটার্ন দাখিল থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিস ম্যানুয়ালি ডিজিটাল হয়েছে। আমরা ডিজিটাল ফরম পূরণ করি, সেই ফরম নিজের কাছে আবার পায়ের জুতার তলা ক্ষয় করা ছাড়া আসে না। এটা কেন হবে। আমাকে কেন কর অফিসে যেতে হবে। কর্মকর্তা কেন আমাকে চিনতে হবে। করদাতার পরিচয় হবে নাম্বারের মাধ্যমে। এ জন্য দেশের কর আদায় কর্তৃপক্ষ ও কর নীতির কর্তৃপক্ষ আলাদা হতে হবে। কারণ পুলিশকে তো আর বিচার করার ক্ষমতা দেয়া যায় না। করের ক্ষেত্রে তাই হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা আগামী বাজেটকে সামনে রেখে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন।

এ বিভাগের আরো খবর