বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রমজানে জবির ক্লাসের সময়সূচি কিছুটা পরিবর্তন, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

  •    
  • ১ এপ্রিল, ২০২২ ২০:১৭

শিক্ষার্থীরা বলছেন, রমজান মাস ছাড়াই সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ক্লাস শুরু হয়। এ মাসে সেই একই সময়। তাহলে আর পরিবর্তনের কি প্রয়োজন। এ ছাড়া বেলা ৩টায় ছুটি দিলে উত্তরা, গাজীপুর, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করা বিশ্ববিদ্যালয় বাসগুলোতেই ইফতার করতে হবে বলে মনে করছেন তারা। প্রশাসনের এ পরিবর্তনকে নিছক ছলনা বলে মন্তব্য করছেন তারা।

রমজানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ক্লাস ও অফিসের সময়সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তিত নতুন সময়সূচি অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের অফিস ও সব বিভাগ-ইনস্টিটিউটের ক্লাস চলবে।

এ ছাড়া ক্লাস শুরুর আগেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাস ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবে এবং শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাম্পাস ছেড়ে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান ও পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ্-আল্-মাসুদ শুক্রবার নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, সময়সূচির পরিবর্তনের বিষয়ে পৃথক বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে।

রেজিস্ট্রারের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বেলা ১টা ১৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত জোহরের নামাজের জন্য বিরতি থাকবে।

পরিবহন পুলের প্রশাসক সই করা আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রমজানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস এবং অফিসের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথম রোজা থেকে সব যানবাহন যাত্রা শুরুর স্থান থেকে ছেড়ে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের দিকে ক্যাম্পাসে পৌঁছাবে এবং বেলা ৩টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, যেসব রুটে দ্বিতীয় ট্রিপ চলাচলরত, সেসব রুটের বাস যথাস্থান থেকে যথাসময়ে জবির উদ্দেশে আসবে। তবে বেলা ১টা ১৫ মিনিটের ট্রিপ রমজান মাসব্যাপী বন্ধ থাকবে।

এর আগে দীর্ঘদিন করোনার কারণে বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস শুরু হয়। সে সময় জানানো হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ও ক্লাস সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে বেলা ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলবে।

পরিবর্তিত সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

অনেক শিক্ষার্থীরা বলছেন, রমজান মাস ছাড়াই সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ক্লাস শুরু হয়। এ মাসে সেই একই সময়। তাহলে আর পরিবর্তনের কি প্রয়োজন। এ ছাড়া ৩টায় ছুটি দিলে উত্তরা, গাজীপুর, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করা বিশ্ববিদ্যালয় বাসগুলোতেই ইফতার করতে হবে বলে মনে করছেন তারা। প্রশাসনের এ পরিবর্তনকে নিছক ছলনা বলে মন্তব্য করছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোজা রেখে এত সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লাসে আসা শিক্ষক, শিক্ষার্থী উভয়ের জন্যই কষ্টসাধ্য। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সুবিধা না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা বাসে করে আসে। আর বাস মিস করলে লোকালে এসে ক্লাস করা কতটা কষ্টকর তা শুধু ওই শিক্ষার্থীই বলতে পারবে।’

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বেলা ১টা ১৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত জোহরের নামাজের জন্য বিরতি। অথচ জোহরের নামাজের জামাত শুরু হয় বেলা ১টা ৩০ থেকে। প্রশাসন কী বুঝে এ সময়সূচি নির্ধারণ করেছে আমার বোধগম্য নয়।’

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কনিক স্বপ্নীল বলেন, ‘এবারের রমজানে প্রায় ১৫ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে। গ্রীষ্মের এই দাবদাহে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ক্লাসে এসে ও বেলা ৩টায় ভার্সিটি বাসে বাড়ি যাওয়া শিক্ষার্থীদের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। ভোর ৪টা ১৫ মিনিটে সেহরি শেষে নামাজ পড়ে ঘুমানো, তারপর আবার ৬টা ৩০ মিনিটে বা ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে বাসা থেকে বের হওয়া ও বাসের জন্য অপেক্ষা করা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।’

অনলাইন ক্লাসের দাবি

কনিক স্বপ্নীল বলেন, ‘ইতোমধ্যে করোনার সময়ে আমরা সবাই অনলাইন ক্লাসে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন থাকবে, রমজানে আমাদের সশরীরে ক্লাসের পরিবর্তে অনলাইন ক্লাসের আওতায় আনা হোক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সারা বছর তো দুনিয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করছি। এই একটা মাসও যদি ভালোভাবে ইবাদত করতে না পারি এর থেকে বড় আফসোস আর কিছু হয় না। এটা নিয়ে বিবেচনা করা উচিত। কারণ রমজান মাস কোনো হেলা করার মাস না। প্রতিটা মুসলিমের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা মাস।’

রিজওয়ান রাজু নামে ফিন্যান্স বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনলাইন ক্লাস না হলে ভোগান্তির শিকার হতে হবে৷ এ বছর ঢাকার যানজট মারাত্মক পর্যায়ের বেড়েছে। ইফতারি বাসে করতে হবে অনেকেরই, পরের দিন আবার ক্লাস। সেখানে অনলাইন ক্লাসে কষ্ট তো লাঘব হবেই, পাশাপাশি ক্লাস রেকর্ড থাকার কারণে উপকৃতও হওয়া সম্ভব।’

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রমজানে অনলাইন ক্লাস। সবার এক মত হয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কথা বলা উচিত। প্রয়োজনে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত আবেদন জানাব।’

যা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর রমজানে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত অফিস ও ক্লাস হয়ে থাকে। যাদের সমস্যা তারা ছাত্রকল্যাণ পরিচালক, ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। ছুটির তালিকা, ক্লাস-পরীক্ষার সময়সূচি এসব অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল হয়ে সিন্ডিকেটে অনুমোদন হয়। এটি অ্যাকাডেমিক বিষয় তাই চেয়ারম্যান, ডিনদের সঙ্গে কথা বললে তারা মন্তব্য করতে পারবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদে ডিন অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান খন্দকার বলেন, ‘আমাদের অন্যান্য সময়ে অফিস হচ্ছে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা। এখান থেকে দেড় ঘণ্টা কমবে। তাহলে তো সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ৩টায় হয়। সরকারি অফিস ৯টা থেকে সাড়ে ৩টা আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সাড়ে ৮টা থেকে ৩টা।

‘আমার মনে হয় এর থেকে ভালো কোনো সমাধান নেই। একেক ব্যাচের ও ডিপার্টমেন্টের একেক সময় ক্লাস। সবার সাড়ে ৮ বা ৯টায় না। আর এই সময়সূচি প্রথমবার নয়, অনেক বছর ধরেই চলছে।’

এ বিভাগের আরো খবর