তালিকায় নাম নাম থাকলেও সরকারি সহায়তা পাচ্ছে না বরিশাল বিভাগের অর্ধলক্ষাধিক জেলে পরিবার। তবে গত বছরের তুলনায় এবার সরকারি সহায়তা না পাওয়া জেলেদের সংখ্যা অনেকাংশেই কমে এসেছে।
এবার ইলিশের অভয়াশ্রমে চলমান দুই মাসের মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞায় সরকারি সহায়তার চাল পাচ্ছেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ১০২ জন জেলে। গত বছরের তুলনায় সহায়তা পাওয়া জেলের সংখ্যা বাড়লেও তালিকায় নাম থাকার পরও চাল পাচ্ছে না প্রায় ৬২ হাজার জেলে পরিবার।
গত বছর জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মোট ২ লাখ ১ হাজার ৭১ জন জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। অথচ সরকারি তালিকায় এই ছয় জেলায় জেলের সংখ্যা ৩ লাখ ১১ হাজার ৫১ জন। সেই হিসাবে গত বছর সরকারি সহায়তা পাননি ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি জেলে। চলতি বছর চাল না পাওয়া জেলেদের সংখ্যা অনেকাংশেই কমে এসেছে।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির একাধিক নেতা জানান, সাগরপারের এই জেলায় কম করে হলেও দেড় লাখ জেলে রয়েছেন। অথচ পুরো জেলা মিলিয়ে সরকারি তালিকায় জায়গা পেয়েছেন মাত্র ৩৯ হাজার ৮০০ জন। তবে তারাও ঠিকমতো সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না।
পাথরঘাটা জেলে সমিতির নেতা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উপজেলায় মাত্র সাড়ে ১২ হাজার জেলের নাম উঠেছে সরকারি তালিকায়। আসলে এখানে ২৫ হাজারেরও বেশি জেলে। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত ১২ হাজার জেলে যদি ঠিকমতো চাল পেতন তাহলেও দুঃখ ছিল না। নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে অনেক দিন, এখনও সবার ঘরে চাল পৌঁছায়নি। জেলেদেরও তো বাঁচতে হবে পরিবার নিয়ে। সহায়তা না পেলে কীভাবে বাঁচবেন?’
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতি মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি আ. জব্বার কাকন বলেন, ‘তালিকায় নাম থাকার পরও সহায়তা না পাওয়াই শুধু নয়, এমন অনেক জেলে রয়েছেন যাদের নাম এখনও তালিকাতেই ওঠেনি। এই উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার জেলে। অথচ তালিকায় উঠেছে ২৮ হাজারের নাম। বাকি ১২ হাজার জেলে কখনই কোনো সুবিধা পান না সরকারের কাছ থেকে।’
বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের জেলেপল্লির বাসিন্দা মারুফ জোদ্দার বলেন, ‘তালিকায় মোর নাম থাকলেও মুই চাউল পাই নাই কোনো সময়। নিষেধাজ্ঞা তো হারা বছরই চলে। সরকারের সহায়তা না পাইলে কেমনে চলমু। খালের মধ্যে দেশি মাছ ধরলেও পুলিশ কোস্টগার্ড ধাওয়ায় মোগো। পরিবার লইয়া বাঁচতে তো হইবে মোগো।’
ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাছের উৎপাদন বাড়াতে প্রায় বছরজুড়েই নানা নিষেধাজ্ঞা দেয় মৎস্য বিভাগ। নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে নামতে পারেন না জেলেরা। কর্মহীন সেই সময়ে জেলেদের জীবন ধারণের অন্যতম উপায় সরকারি সহায়তা। তালিকায় নাম না থাকা এবং থাকার পরও বরাদ্দ না থাকায় জেলেরা যখন সেই সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন তখন আইন ভেঙে নদীতে জাল ফেলা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার থাকে না।’
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘আসলে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী চাল বিতরণ করি আমরা। চাহিদা এবং বরাদ্দের তারতম্যে কিছু সমস্যা তৈরি হয়। দুই পর্যায়ে প্রতি পরিবারে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। তবে আমরা বলে দিয়েছি প্রথম পর্যায়ে যারা চাল পাচ্ছে তাদের মধ্যে বাছাই করে দ্বিতীয় পর্যায়ে না দিয়ে যারা পায়নি তাদের দিতে। এতে সবার সহায়তাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। তালিকা তো একটা চলমান প্রক্রিয়া। যাদের নাম ওঠেনি পরে উঠবে। আবার কেউ মারা গেলে নাম বাদ যাবে। আসলে প্রথম যখন এই তালিকা তৈরি করা হয়, তখন অনেকেই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়নি।’