রাজধানীতে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা নির্মাণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের ত্রুটিকে যানজট নিরসনের একটি বাধা হিসেবে তুলে ধরেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
উদাহরণ হিসেবে মেয়র দেখিয়েছেন বনানী এলাকার সেতু ভবন ও বিআরটিএ কার্যালয় নির্মাণকে। তার দৃষ্টিতে এই দুটি ভবনের কারণে এ এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় কাজগুলো করা যাচ্ছে না।
দ্বিতল সড়কের পিলারের কারণে মূল সড়ক সংকুচিত হয়ে যাওয়া, মেট্রোরেলের স্টেশনে ওঠার সিঁড়ি ফুটপাতে তৈরিসহ নানা বিষয় তুলে ধরে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা গ্রহণের আগে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনারও তাগিদ দেন তিনি।
শুক্রবার গুলশানে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানান ঢাকার উত্তর অংশের মেয়র।
গুলশান-২-এ বিচারপতি সাহাবুদ্দীন পার্কে নারী উন্নয়নে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা শক্তি ফাউন্ডেশনের ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে সংহতি জানাতে গিয়েছিলেন তিনি।
মেয়র বলেন, ‘রাজধানীর যানজট কিন্তু একদিনে সমাধান করা যাবে না। এই যানজট তৈরি হয়েছে ধীরে ধীরে। আমরাই সেটা তৈরি করেছি। নানা ধরনের উন্নয়নকাজ এই যানজটের জন্য দায়ী।’
সেতু ভবন, বিআরটিএ ভবন এখানে কেন?
বনানীতে সেতু ভবন নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আতিকুল বলেন, ‘এই সেতু ভবনটা কেন হলো? যে সেতু ভবন পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, বড় বড় ব্রিজ বানাচ্ছে, কিন্তু এই সেতু ভবনের যারা প্ল্যান করেছে, অর্থাৎ ওনারা কিন্তু জনগণকে কীভাবে সুবিধা দেবেন, সেটা কিন্তু আমার মনে হয় না ঠিকমতো চিন্তা করেছেন। কারণ তারা শুধু প্রজেক্ট চিন্তাই করেন। এটা কিন্তু একটা ভুল। আমরা আর কত ভুল করব?’
তিনি বলেন, ‘ঠিক সেতু ভবনটার আরেকটু সামনে বিআরটিএ ভবন রয়েছে। বনানী কবরস্থানে ঢোকার সময় এয়ারপোর্ট রোডের বাম দিকে আরেকটা বৈদেশিক ফান্ড আসবে সেতুর জন্য। সেখানে কিন্তু বিল্ডিং করে ফেলছি।’
মেয়র বলেন, ‘আজ যদি এই সেতু ভবন না থাকত, বিআরটিএ না থাকত, তাহলে আমরা এ রোডটাকে সম্প্রসারণ করে টোটাল এয়ারপোর্ট রোডের কানেক্টিভিটিটাকে দাঁড় করাতে পারতাম।’
ভবন দুটি সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ করে আতিকুল বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব- সেতু ভবনে যারা জড়িত আছেন, বিআরএটিতে যারা জড়িত আছেন, নগরবাসীর স্বার্থে আপনারা এই সেতু ভবনটিকে সরিয়ে ফেলুন। এতে নগরবাসী উপকৃত হবে।
‘ঠিক এ রকম করে ছোট অনেক কাজ আছে। এগুলো করলে কিন্তু সুবিধা বাড়ে। যানজট কমে। নগরবাসীও স্বস্তি পায়।’
রাজধানীর বনানীতে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যালয় সেতু ভবন। ফাইল ছবিউন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় জোর
মূল সড়কে পিলার করে দ্বিতল সড়ক নির্মাণের অসুবিধা তুলে ধরে মেয়র বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসের পিলারের কারণে ওই রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যায়, ছোট হয়ে যায়।’
বিভিন্ন উন্নত দেশে রাস্তার ওপর এলভিটেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যখন কোনো ধরনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করব, তখন রাস্তা যেন বন্ধ না হয় তার জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড করব।’
মেট্রোরেল স্টেশনে ওঠার সিঁড়িগুলোও ফুটপাতের ওপর পড়ায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র। বলেন, ‘যারা প্ল্যানগুলো করছে, তারা যদি প্রজেক্টের চিন্তা না করে নগরবাসীর স্বার্থে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলাপ করেন, তাহলে নগরবাসী অনেক ভোগান্তি থেকে রেহাই পায়।’
যানজট দূর সহজ কাজ নয়
যানজট নিয়ে মেয়র বলেন, তার কাছে এমন কোনো জাদু নেই যা দিয়ে এক মাসের মধ্যে যানজট নিরসন করে ফেলা যাবে। তিনি বলেন, ‘এই যানজট যুগে যুগে বছরে বছরে সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি জানান, তাদের চাওয়া হলো নগরবাসী বাসে চড়বে। বলেন, ‘মেগা সিটিতে মেট্রোরেল যেমন আছে, ওইরূপভাবে নগর পরিবহন ব্যবস্থাও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। এখন থেকেই আমাদের চিন্তা করতে হবে।’
নগরে নৌরুট বাড়ানোর ঘোষণা
রাজধানীর নৌপথের পরিকল্পনা তুলে ধরে উত্তরের মেয়র বলেন, ‘নেচার বেইজ সল্যুশন আমাদের আনতে হবে। আল্লাহ-তায়ালার প্রকৃতির দান কিন্তু এই নদী-নালা-খাল। আমি গতকাল লাউতলা খাল থেকে রামচন্দ্রপুর দিয়ে নৌকা চালিয়ে বুড়িগঙ্গা গিয়েছিলাম। এতে আমার মোট সময় লেগেছে মোট ১৭ মিনিট। ওই খাল যখন পরিষ্কার হয়ে যাবে, তখন সময় কমে আসবে। লাউতলা খাল থেকে এমনি যদি বুড়িগঙ্গা যান তাহলে সেখানে লাগত ৪৫ মিনিট। সুতরাং আমাদের অল্টারনেটিভ নেচার বেইজড সল্যুশনে যেতে হবে।’
রামপুরার টিভি সেন্টারের সামনে হাতিরঝিল দিয়ে নৌপথ কালাচাঁদপুর অর্থাৎ ইউনাইটেড হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন মেয়র। বলেন, ‘এগুলো করলে কিন্তু খুব বড় কাজ না। অত বেশি টাকাও লাগবে না। তবে এগুলোর মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’