বিভিন্ন সময়ে ভারতে আটক মানসিক ভারসাম্যহীন পাঁচজন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। তারা ভারতে পাচার হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া সীমান্ত চেকপাস্ট দিয়ে শুক্রবার দুপুরে দেশে প্রবেশ করেন তারা।
আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশিরা হলেন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপেজলার সন্তোষ দেব, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বিজয় চুন্নু, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ময়না বেগম, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার রোজনা বেগম এবং কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কুলসুম বেগম।
পরিবার ও সহকারী হাইকমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পাঁচ বাংলাদেশি মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বিভিন্ন সময় আটক হন। এরপর আদালতের নির্দেশে আগরতলার মডার্ন সাইক্রিয়াটিস্ট হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। সুস্থ হওয়ার পর তাদের নাগিরকত্ব যাচাই করা হয়।
এরপর স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যোগাযোগ করে তাদের দেশে ফেরানোর জন্য ভারত সরকারের অনাপত্তি সংগ্রহ করে আগরতলার সহকারী হাইকিমশন।
হরিয়ে যাওয়ার রাঙ্গুনিয়া থেকে সন্তোষকে নিতে এসেছেন তার ছেলে অপু দেব। ৭ বছর পর বাবাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘বাবা যখন হারিয়ে যান, তখন আমার বয়স ১০ বছর। বাবার মানসিক সমস্যা আছে। হঠাৎ এক দিন তিনি ঘর থেকে বের হয়ে যান। তারপর অনেক খোঁজাখোঁজির পরও পাওয়া যায়নি।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাওয়া বিজয় চুন্নুকে নিতে এসে স্বজন জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চুন্নু মিয়া আগে বাস চালাতেন। হঠাৎ করেই তার মাথায় সমস্যা হয় এবং পাগলামি করতেন। অনেক চিকিৎসার পরও কোনো কাজ হয়নি। আজকে থেকে ৪ বছর আগে বাড়ি থেকে হঠাৎ হারিয়ে যায়। কয়েকদিন আগে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি তিনি ইন্ডিয়া চলে গেছেন।’
তেমনটাই বর্ণনা দেন ময়না বেগম, কুলসুম বেগম ও রোজনা বেগমের স্বজনরা। দীর্ঘদিন পর তাদের পেয়ে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পাঁচ বাংলাদেশিকে হস্তান্তরের সময় আগরতলা-আখাউড়া স্থলবন্দরে ত্রিপুরার বাংলাদেশের সহকারী হাইকিমশনার আরিফ মোহাম্মদ, প্রথম সচিব আসাদুজ্জামান ও রেজাউল হক, আখাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম, ওসি ইমিগ্রেশন আবু বকর, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের সময় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে জরুরি সহায়তা হিসেবে খাবার, কাউন্সিলিং সেবা ও ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়।