বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অর্কিডের রাজ্যে

  •    
  • ১ এপ্রিল, ২০২২ ০৮:২১

গবেষণা ও প্রদর্শনের কাজে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অর্কিডগুলো সংগ্রহ করেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক ড. কামরুল হুদা ও তার সহযোগী গবেষকরা। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া এই অধ্যাপকের ধ্যান-জ্ঞান ছিল অর্কিড নিয়ে। এখানকার বেশির ভাগ প্রজাতির অর্কিডই কামরুল হুদার নিজের সংগ্রহ করা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উদ্ভিদ উদ্যানের উত্তর-পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি অর্কিড হাউস। বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড এখানে সাজানো আছে।

গবেষণা ও প্রদর্শনের কাজে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অর্কিডগুলো সংগ্রহ করেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক ড. কামরুল হুদা ও তার সহযোগী গবেষকরা। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া এই অধ্যাপকের ধ্যান-জ্ঞান ছিল অর্কিড নিয়ে। এখানকার বেশির ভাগ প্রজাতির অর্কিডই কামরুল হুদার নিজের সংগ্রহ করা।

ক্যাম্পাসে যে বাসায় অধ্যাপক কামরুল থাকতেন, সে বাসার ছাদেই তিনি তৈরি করেন অর্কিডের সংগ্রহশালা। তিনি ও তার ছাত্ররা সেগুলো নিয়ে কাজ করতেন। তার মৃত্যুর পর তার সংগ্রহের সব অর্কিডের নতুন স্থান হয় উদ্ভিদ উদ্যানের অর্কিড হাউসে। বর্তমান অর্কিড হাউসটি অধ্যাপক কামরুল হুদার নামে নামকরণের বিষয়ে একটি নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ।

অর্কিড হাউসটি ঘুরে কথা হয় অধ্যাপক ড. কামরুল হুদার গবেষণা সহযোগী ও এটির রক্ষণাবেক্ষণে থাকা উদ্ভিদ উদ্যানের সহকারী উদ্ভিদতত্ত্ববিদ ওয়াহিদুল আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, কয়েক প্রজাতির অর্কিড এখানে আছে এবং দুর্গম জায়গাগুলো ঘুরে এই অর্কিডগুলো তারা সংগ্রহ করেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্কিড হাউসে ১২০ প্রজাতির অর্কিড সংগ্রহে আছে। ছবি: নিউজবাংলা

ওয়াহিদুল বলেন, ‘চবির অর্কিড হাউসে ১২০ প্রজাতির অর্কিড সংগ্রহে আছে। এর মধ্যে ১০ প্রজাতি হাইব্রিড, বাকিগুলো সব দেশীয় প্রজাতির অর্কিড। এই অর্কিডগুলো দেখতে চমৎকার। কোনোটিতে রঙিন ফুল ফোটে, কোনোটি আবার ঔষধি গুণ রয়েছে। এদের বেশির ভাগই (প্রায় ৯০ প্রজাতি) বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির অর্কিড। আছে দুর্লভ প্রজাতির অর্কিডও। এই অর্কিডগুলো বেশির ভাগই অধ্যাপক কামরুল হুদার বাসায় সংগৃহীত ছিল। সংখ্যা হিসাবে এখানে প্রায় হাজারের ওপরে অর্কিড আছে।

‘বেশির ভাগ রেয়ার অর্কিডগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে পার্বত্য অঞ্চল রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেটের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ থেকে পাওয়া। অধ্যাপক কামরুল হুদা ও তার টিম মিলে অর্কিডগুলো বান্দরবানের থানচি, ক্রেওক্রাডংয়ের চূড়া, খাগড়াছড়ির বাঘাইছড়ি, সাজেক, উখিয়া, টেকনাফসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে এগুলো সংগ্রহ করেছেন। এর বাইরেও সুন্দরবনে আমরা বেশ কিছু অর্কিড পেয়েছি যেগুলো নিউ রেকর্ড। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকেও চার প্রজাতির রেয়ার অর্কিড পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক কামরুল স্যারের সঙ্গে কাজ করে একুশটা নতুন প্রজাতির অর্কিড আমরা আবিষ্কার করেছি, যেগুলোর পেপার পাবলিশ হয়েছে। অপ্রকাশিত রয়েছে আরও ১২টির মতো।’

অর্কিড সংরক্ষণের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্কিডের জন্য প্রয়োজন একটু আলো-ছায়া ও আর্দ্র পরিবেশ। অর্কিড সরাসরি সূর্যের তাপ সহ্য কর‍তে পারে না। এ জন্য ছায়াযুক্ত আর্দ্র পরিবেশে এখানের অর্কিডগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া অর্কিড বিভিন্ন গাছেও আমরা সংস্থাপন করে রেখেছি।’

অর্কিডগুলো সংগ্রহ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক ড. কামরুল হুদা ও তার সহযোগীরা। ছবি: নিউজবাংলা

অর্কিড নিয়ে কথা হয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি সরাসরি কাজ করেছেন অধ্যাপক কামরুল হুদার সঙ্গে। অর্কিডের ওপর এ বছর তাদের (কামরুল হুদা ও তার লেখা) একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এর পুরোটাই বলতে গেলে অধ্যাপক ড. কামরুল হুদা স্যারের হাতে গড়া। এগুলো স্যারের বাসায় ছিল। বর্তমানে উদ্ভিদ উদ্যানের সংগ্রহে আছে। অর্কিড হাউসটি অধ্যাপক ড. কামরুল হুদার নামে নামকরণ করা হবে।

‘কামরুল হুদা স্যার বাংলাদেশে ১৮৮ প্রজাতির অর্কিড আইডেন্টিফাই করেছেন। স্যারের কালেশনে সবগুলো না থাকলেও তার কন্টিনিউয়াস ফিল্ড এক্সপ্লোরেশন ছিল।’

এ শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের ফাইটোকেমিক্যাল ল্যাবরেটরি আছে। সেখানে অর্কিড নিয়ে তিনি (কামরুল হুদা) বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন যে আমাদের অর্কিডের নির্যাস দিয়ে কীভাবে ওষুধ তৈরি করা যায়। অর্কিডের বিভিন্ন অংশ কাঁচামাল হিসেবে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিকে সরবরাহ করতে পারলে সেখান থেকে ওষুধ তৈরি করা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা মানবদেহে কাজ করার আগে ইঁদুরের দেহে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করতাম। আমরা সেখানে দেখতাম এটার কোনো ইফেক্ট আছে কি না। কোন অর্কিডের কোন অংশ কার্যকরী। এ ধরনের কাজগুলো স্যার বেঁচে থাকাকালীন চলমান ছিল। এখনও কয়েকজন গবেষক কাজ করছেন এ বিষয় নিয়ে।’

অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, ‘আমরা টিস্যু কালচার ল্যাবে কাজ করি। এই অর্কিডগুলো অ্যাভেইল্যাবল না, রেয়ার। অনেক দুর্গম এরিয়াতে থাকে। তাই আমরা এই অর্কিডগুলোকে টিস্যু কালচার করে ল্যাবে সংরক্ষণ ও আবাদ করি। রেয়ার অর্কিডগুলো যেখানে-সেখানে পাওয়া যাবে না। পরবর্তী সময়ে ওষুধশিল্পের জন্য সংরক্ষণে আমরা ল্যাবে এগুলোকে কালচার করে রাখি। মূলত যে প্রজাতিগুলো রেয়ার বা হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো আমরা কালচারের জন্য প্রায়োরিটি দিই।

অর্কিডের বাণিজ্যিক চাহিদাও আছে। ছবি: নিউজবাংলা

‘অর্কিডে মেডিসিন ভ্যালু থাকায় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিও আগ্রহ দেখাচ্ছে। আগে অর্কিডকে শুধু বাহারি ফুলের জন্য বিবেচনা করা হতো। এসব কিছুর পথপ্রদর্শক ছিলেন অধ্যাপক কামরুল হুদা। অধ্যাপক কামরুল হুদা বিশ্বব্যাপী অর্কিড সংরক্ষণের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ ন্যাচার স্পেসিস সারভাইবাল কমিশনের (আইইউসিএনএসএসসি) সদস্য ছিলেন।’

আবুল কাশেম বলেন, ‘অর্কিডের বাণিজ্যিক চাহিদাও আছে। অর্কিডের ফুল খুবই বাহারি ও বৈচিত্র্যময়। অনেক চমৎকার ফুল ফোটে। অন্যান্য সপুষ্পক উদ্ভিদ থেকে ভিন্ন অর্কিডের ফুল। বিভিন্ন নার্সারিও অর্কিডের কাট ফ্লাওয়ার (একক ফুল) কিংবা পুরো অর্কিডই বিক্রি করে। যদি অর্কিডশিল্প ভালোভাবে গড়ে ওঠে তাহলে বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।’

অর্কিডের বৈশিষ্ট্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্কিডের মধ্যে বেশির ভাগই পরাশ্রয়ী। এগুলো অন্য গাছের ওপর জন্মে। এগুলোকে সংরক্ষণের জন্য মাটি তেমন লাগে না। অর্কিড সানলাইট থেকে নিজের খাবার তৈরি করে, অর্কিডের যে বস্তুর ওপর লেগে থাকে, সেখান থেকে নিউট্রেশন কালেক্ট করে, একটা ঝুলন্ত শিকড় থাকে সেটা দিয়ে বায়ুমণ্ডল থেকে জলীয়বাষ্প নিয়ে থাকে। এর বাইরেও কিছু অর্কিড আছে মাটিতে জন্মে। এক প্রজাতির অর্কিড আছে পানিতে জন্মে।’

বিলুপ্তির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মূলত মানব সৃষ্ট কারণে অর্কিড হারাচ্ছে। গাছ কাটা, বহুবর্ষজীবী গাছ কাটা, নগরায়নের প্রভাব, অর্কিড না চেনা এইসব কারণে অর্কিড বিলুপ্ত হচ্ছে। কেউ যখন গাছ কাটে তখন সে তো জানে না এই গাছে একটা অর্কিড আছে। আর হতে পারে এটা শুধু এক প্রজাতিই আছে। ফলে গাছ কাটায় অর্কিডটাও হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অর্কিডের বংশবিস্তারও একটু স্লো। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও একটা কারণ।’

এ বিভাগের আরো খবর