ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীরা হিজাব ও নিকাব পরার কারণে ক্লাসরুম এবং আবাসিক হলে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছে একটি সংগঠন। তাদের দাবি, তারা ‘হিজাবফোবিয়া’ বা হিজাববিদ্বেষের শিকার।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে ‘প্রটেস্ট সেল অ্যাগেইনস্ট হিজাবফোবিয়া ইন ডিইউ’ একটি সংগঠনের ব্যানারে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের হিজাব-নিকাব পরা শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকরা চাইছেন, হিজাব ও নিকাব পরার কারণে যদি কাউকে অপমান, বিদ্রূপ বা তাচ্ছিল্য করা হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। হল এবং অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোয় ছাত্রীদের নামাজের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখারও দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী তাসফিহা তাহসিন।
তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন হিজাব ও নিকাব পরা ছাত্রী কী কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় সেটি নিয়ে আমরা ‘প্রটেস্ট সেল অ্যাগেইনস্ট হিজাবফোবিয়া ইন ডিইউ’-এর ব্যানারে কাজ করছি। অনলাইন ও অফলাইনে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছি। সম্প্রতি আমরা একটি জরিপও চালিয়েছি। এ দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় আমরা জানতে পেরেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব-নিকাব পরার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়।”
তিনি বলেন, ‘ক্লাসমেট, বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র, কর্মকর্তা, কর্মচারী, এমনকি ক্লাসরুমে শিক্ষকরা পর্যন্ত হিজাব ও নিকাব পরা ছাত্রীর প্রতি বিরূপ আচরণ করেন। কেউ বিদ্রূপ করে, কেউ বাজে মন্তব্য করে। নিকাব পরার কারণে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছে এমন ঘটনাও আমরা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের করা জরিপের একটি প্রশ্নে হিজাব-নিকাবের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বা হলে কোনো বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছেন কি না জানতে চাওয়া হয়। এই জরিপে ২২১ জন ছাত্রী অংশ নেন। এর মধ্যে এই প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বলেছেন ৭৩ জন আর না বলেছেন ১৪৮ জন। অর্থাৎ প্রতি তিনজন পর্দানশীল ছাত্রীর একজন বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।’
তাসফিহা বলেন, ‘আমাদের আরেকটি প্রশ্ন ছিল এ রকম- হিজাব-নিকাবের কারণে কোনো শিক্ষক, কর্মচারী বা সহপাঠীর বিরূপ মন্তব্যের শিকার হয়েছে কি না। প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বলেছেন ৮০ জন আর না বলেছেন ১৪১ জন। অর্থাৎ প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের থেকেও বেশি ছাত্রী পর্দা করার কারণে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা ও ভাইভায় নিকাব খুলতে যেন কোনো শিক্ষক কোনো ছাত্রীকে বাধ্য না করে। এর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাতে একজন ছাত্রীকে তার চেহারা দেখানো ছাড়াও বৈজ্ঞানিকভাবে শনাক্ত করা যায়।
‘আর যদি সেটি সম্ভব না হয়, তবে যেন অন্তত একজন ম্যাডামের মাধ্যমে সেই ছাত্রীকে শনাক্ত করা হয়। এর পরও যেন কোনোমতেই একজন ছাত্রীকে গায়রে মাহরাম (ইসলামি বিধান অনুযায়ী যেসব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের দেখা-সাক্ষাৎ বৈধ নয়) শিক্ষকের সামনে চেহারা খুলতে বাধ্য না করা হয়। এটি তার ধর্মীয় অধিকার। এই অধিকার ক্ষুণ্ণ করা যাবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মসজিদসহ বিভিন্ন বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে মেয়েদের জন্য থাকা নামাজের জায়গার অব্যবস্থাপনা এবং সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রতিটি বিল্ডিং, অনুষদ, টিএসসি এবং হলগুলোয় ছাত্রীদের নামাজের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই দুটি দাবিই আমাদের মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। আমরা চাই, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে ও জাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ন্যায়নিষ্ঠতা ও ন্যায্যতার পক্ষে অবস্থান নেবে এবং আমাদের মৌলিক ও ধর্মীয় অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।