আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ দুই বছর পর নিজ সংসদীয় আসন ফরিদপুরের ভাঙ্গা ঘুরে গেলেন।
বুধবার ৩০ মার্চ সকাল ৯টার দিকে কাজী জাফরউল্লাহ শিমুলিয়া ঘাটে এসে পৌঁছলে দুই শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাকে স্বাগত জানান। পরে কাউলীবেড়া তার বাড়ি পর্যন্ত যান তারা। এক দিন পরই তিনি এলাকা ছেড়ে ঢাকার পথে রওনা হন।
২০২০ সালের ১৬ মার্চ করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে কাজী জাফরউল্লাহ ভাঙ্গা ছেড়ে ঢাকায় আসেন। এরপর এই প্রথম তিনি এলাকায় গেলেন।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতার নিজের এলাকায় এই সফর। সেখানে গিয়ে তিনি দলের মধ্যে ঐক্যের তাগিদ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘ফরিদপুর আওয়ামী লীগের সম্মেলন দ্রুত সময়েই হবে। এ জন্য সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে। আমি দলের মধ্যে কোনো গ্রুপিং চাই না।’
তিনি বলেন, ‘সেই নেতাই জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদ পেতে পারেন, যিনি তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভালোবাসা এবং সমর্থন নিয়ে রাজনীতি করেন। যারা সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয় ও গডফাদারগিরি করে তাদের জন্য দলীয় শীর্ষ পদ নয়।’
ফরিদপুরে সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাঁধন আলগা হওয়ার পর জেলায় ক্ষমতাসীন দলে কয়েকটি উপদলের তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে একই দলে একে অন্যের সমালোচনা করে চলছেন তারা।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সামিম হক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক ও ফরিদপুর পৌর মেয়র অমিতাভ বোসের অনুসারীরা অবশ্য জাফরুল্লাহর এই সফরে এখন পর্যন্ত দূরে রয়েছেন।
অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন ও যুগ্ম সম্পাদক ঝর্ণা হাসানের সমর্থকরা জাফরউল্লাহর ফরিদপুর যাত্রায় বেশ খুশি।
মোশাররফ গত দুই বছরে কোণঠাসা হলেও তার অনুসারীরা তো আছেই। এরাও আলাদা একটি পক্ষ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যদিও তাদের প্রভাব একেবারেই ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের মতো ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগও বিভক্ত। গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে নৌকা নিয়েও জাফরউল্লাহ হেরেছেন দলের মনোনয়ন না পেয়ে লড়াই করা মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে। দলের একটি অংশ নিক্সনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
এতদিন উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে ফরিদপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের ছবি সাঁটানো ছিল। জাফরউল্লাহর এই সফরের আগে সেই ছবি নামিয়ে তার ছবি তোলা হয়। এক বছর আগে নিক্সন অনুসারীরা জাফরউল্লাহর ছবি সরিয়ে দিয়েছিল।
সম্প্রতি নিক্সনের পক্ষে যোগ দেয়া কয়েকজন নেতা আবার জাফরউল্লাহর পক্ষে ফিরে এসেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হেদাতুল্লাহ সাকলায়েন, সাধারণ সম্পাদক ফাইজুর রহমান ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক সাহাদাত হোসেন এরই মধ্যে কাজী জাফরউল্লাহকে ত্যাগ করে সাংসদ নিক্সনের পক্ষে যোগ দেন। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। পরে তিন নেতা এক মাসের মধ্যে আবার কাজী জাফরউল্লাহর পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা জানান।
নিক্সন ২০২১ সালের নভেম্বরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।