তদারকির জন্য টাস্কফোর্স বা কমিশন গঠন করে একটি সংস্থার অধীনে সব রেস্তোরাঁকে আনার দাবি জানিয়েছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, বর্তমানে দেশের রেস্তোরাঁ খাতকে ১২টি সংস্থা তদারকি করছে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমন্বয়হীনতা, অযাচিত হস্তক্ষেপ ও বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে রেস্তারাঁগুলোকে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এতোগুলো সংস্থার অরাজকতা চলছে, কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারকে বাস্তবায়ন না করার জন্য কোনো একটা পক্ষ ষড়যন্ত্র করে এ অবস্থা তৈরি করেছে। তাই অবিলম্বে টাস্কফোর্স বা কমিশন গঠন করে একটি সংস্থার অধীনে রেস্তোরাঁগুলোকে আনতে হবে। না হলে আমরা ব্যবসা বন্ধ করে সমস্ত রেস্তোরাঁর চাবি জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করবো।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা অধিদপ্তর বিক্ষিপ্তভাবে তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ করে। কোনো ম্যাজিস্ট্রেট আসলে ক্ষোভ ঝাড়ে রেস্তোরাঁ মালিকের উপর। সবাই রেস্তেরাঁকে নেতিবাচক চোখে দেখে। পান থেকে চুন খসলেই বিশাল শাস্তি দেয়।
‘কোনো বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ লোক ছাড়াই যে যেভাবে পারছে জরিমানার নামে ভীতি দেখিয়ে আমাদের ব্যবসা নষ্ট করছে। তারা যেন রেস্তেরাঁকে জরিমানা করার জন্য অতি উৎসাহী।’
ইমরান হাসান বলেন, ‘রেস্তোরাঁ খাতের ৯৫ শতাংশ কর্মী অদক্ষ, স্বল্প শিক্ষিত। তাদের আগে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করুন। আমাদের একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন হিসেবে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) দিন। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কোনোদিনই খাদ্যের মান ভালো করা যাবে না। জরিমানা করা, হাতে হাতকড়া লাগানো কোনো সমাধান নয়।’
আসন্ন রমজানে আরও বড় খড়গ নামবে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়ে সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে প্রতিবারের মতো এবারও রমজানে বিশাল খড়গ নেমে আসবে। আমরা ইফতারি, সেহেরিসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য নিরাপদ করার জন্য সবোর্চ্চ সতর্ক ও সচেতন থাকবো। তারপরও বিভিন্ন আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে বিপদের মুখে ঠেলে দেবেন বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্ট। যেখানে-সেখানে রেস্তেরাঁকে জরিমানা করা হবে।’
করোনার সময়ে এ খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেস্তোরাঁ খাত। তারপরও আমরা সরকারের কোনো প্রণোদনা পায়নি। আমরা সরকারের কাছে এসএমই খাত থেকে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ চাই। আর বাংলাদেশ ব্যাংক এ ঋণের জন্য মালিকদের স্ব স্ব ব্যাংকে নির্দেশ দিলেও তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো।’
দীর্ঘদিনের এসব অরাজকতা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে মহাসচিব বলেন, ’রেস্তেরাঁ খাতের এ অবস্থা দুরভিসন্ধিমূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সরকারকে বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্র। সরকারকে এবং মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হেনস্থা করে তৃতীয় পক্ষ সুবিধা নিচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভ্যাট-ট্যাক্সের নামে অত্যাচার সব কিছু মিলে এখন আমাদের রেস্তোরাঁ বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প নেই।’
অনুষ্ঠানে রেস্তেরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি বলেন, ‘আমাদের যদি কোনো ভুল থাকে তবে সেটা সংশোধন করুন। সময় দেন সবকিছু ঠিকভাবে চালানোর জন্য। কিন্তু দীর্ঘদিনের এসব ব্যবসায়ীকে রাস্তায় নামিয়ে দেবেন না। আমরা হয়রানি-প্রতিবন্ধকতা ছাড়া সঠিকভাবে ব্যবসা করতে চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির প্রথম যুগ্ম মহাসচিব ফিরোজ আলম সুমন, কোষাধ্যক্ষ তৌফিকুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ আন্দালিবসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।