জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র আবাসিক হল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’-এ চার দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্রী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
অনিরাপদ পানি ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
তারা জানান, ১৬ তলা এই ভবনটিতে কেবল নিচতলায় একটি ফিল্টার আছে। সে কারণে সেখানে দীর্ঘ লাইন লেগে থাকে। ফলে ছাত্রীরা সরবরাহ করা পানি সরাসরি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন।
তবে হলে সরবরাহ করা পানি গবেষণাগারে পরীক্ষা করে জীবাণু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রভোস্ট শামীমা বেগম। তিনি দাবি করেছেন, পানি নিয়ে ছাত্রীদের অভিযোগ শুধু শুধু তোলা হচ্ছে। ছাত্রীরা এখানে নতুন উঠেছে উল্লেখ করে তিনি এমনও বলেছেন যে তাদের মানিয়ে নিতে সময় লাগবে।
দ্বিতীয় তলা থেকে ষোল তলা পর্যন্ত প্রতিটি তলায় পানির ফিল্টার বসানো হবে জানালেও সেটি কবে হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
আক্রান্ত কত
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের তথ্য বলছে, ২৭ মার্চ থেকে চার দিনে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ৫৮ ছাত্রী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে বুধবার বেলা ২টা পর্যন্ত ১৫ জন, মঙ্গলবার ১৪, সোমবার ১২ ও রোববার ১২ ছাত্রী চিকিৎসা নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছাত্রী হলের পাঁচ শিক্ষার্থী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সেন্টারটিতে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। সেখান থেকে প্রাথমিক ওষুধ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যাদের অবস্থা গুরুতর, তাদেরকে কাছের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে একজনকে ন্যাশনাল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে আসছেন। বৃহস্পতিবার সাতজন অনাবাসিক শিক্ষার্থী সেখানে চিকিৎসা নেন।
বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শামসুন নাহার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার রুমে চারজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। আমি শুধু হলের খাবার ও পানি খাই। বাইরে কিছু খাই না। এখন হলের পানি, খাবার থেকে এ সমস্যা হতে পারে।’
আরেক ছাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পানির ফিল্টার একটা। এক হাজার ২০০ ছাত্রীর পানির জন্য সিরিয়াল সারা দিনে শেষ হয় না। পানির সিরিয়ালের ভয়ে পানিও ঠিকমতো খাওয়া হয় না। মেয়েরা তো অসুস্থ হবেই।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুন্নি আক্তার বলেন, ‘হলের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। হলে বেশ কয়েকটি তলায় অনেকের ডায়রিয়া হয়েছে। ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায়। এই পানি দিয়ে হলের ডাইনিংয়ে রান্না করা হয়। এ কারণে রান্না করা খাবার লাল রঙের হয়ে থাকে।’
হল ডাইনিংয়ের প্রধান পরিচালক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘হলের প্রধান সমস্যা নিরাপদ পানি। পানি কিছুক্ষণ গ্লাসে রাখলেই আয়রনের কারণে লাল হচ্ছে। গ্লাস ও জগে কয়েক দিনের মধ্যে আয়রন পড়ে যাচ্ছে।’
প্রাধ্যক্ষ বললেন, মেয়েদের অভিযোগ শুধু শুধু
হল কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে তারা।
প্রাধ্যক্ষ শামীমা বেগম বলেন, ‘যাদের ডায়রিয়া হয়েছে, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। আমরা হল পরিদর্শন করি। ছাত্রীদের অপরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও নজরে এসেছে। সুস্থ থাকতে নিজেদেরও পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।’
পানি নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা শুধু শুধু অভিযোগ করছে। তারা পানি ঘোলা ও গন্ধ বলছে। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি, পানি পরিষ্কার।
‘তারা যেহেতু নতুন এসেছে, তাই মানিয়ে নিতে হয়তো কিছুদিন সময় লাগবে। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমেও এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।’