রাজধানীর খালকে ‘ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করে’ উল্লেখ করে আক্ষেপ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পুনরুদ্ধার করা লাউতলা খালে নৌ চলাচলের উদ্বোধন ও দূষণ রোধে জনসাধারণের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে চারটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে লাউতলা থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করে রামচন্দ্রপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর সংযোগস্থলে পৌঁছান।
তিনি জানান, এই পথে নৌ চলাচল চালু হবে। সড়কে ৪৫ মিনিট লাগলেও নৌযানে পৌঁছাতে লাগবে ছয় মিনিট। এ জন্য সিটি করপোরেশন থেকে প্রাথমিকভাবে ২০টি ইঞ্জিনচালিত নৌকার লাইসেন্স দেয়া হবে।
মেয়র বলেন, ‘নৌকায় চড়ে আমি দেখেছি অসংখ্য খামার ও বাড়ির বর্জ্য সরাসরি এই খালে গিয়ে পড়ছে।’
মোহাম্মদপুরে পুনরুদ্ধার করা লাউতলা খাল। ছবি: নিউজবাংলা
খামারি ও বাড়ির মালিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা ব্যবসা করবেন কিন্তু এই খাল ও শহরের ক্ষতি করবেন না। শুধু নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে সকলের কথা চিন্তা করবেন, এই শহরের কথা চিন্তা করবেন।’
এই খালের উপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠে ট্রাক স্ট্যান্ড। ১৪ বছর ধরে থাকা সেই অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করেছে সিটি করপোরেশন।
গত ২৩ জানুয়ারি খাল উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু করা হয়। সোয়া এক মাস পর খালে পানিপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে।
উচ্ছেদের সেই স্মৃতি তুলে ধরে মেয়র বলেন, ‘আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি মানুষ এই খালকে ডাস্টবিন বিন হিসেবে ব্যবহার করছে। এই খালে পলিথিন, পুরনো সোফা, কার্পেট, চটের বস্তাসহ বাসা-বাড়ির সকল ধরনের ময়লা ফেলা হয়েছে।
‘খালে ময়লা ফেলা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। এই খাল দিয়ে নৌযান চলবে, মাছের চাষ হবে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।’
এর জন্য সরকার ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে জনগণেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণকে সংঘবদ্ধভাবে খাল দখলদার ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়।’
এই খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে খাল পরিষ্কার রাখা ও তদারকির জন্য বিশেষ টিম গঠন করে দেয়ার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলেও জানান মেয়র।
রাজধানীর খাল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ওয়াসা থেকে সিটি করপোরেশনে দেয়ার পর কী কী করা হয়েছে, তাও তুলে ধরেন মেয়র। বলেন, “প্রায় এক বছর আড়াই মাস আগে আমরা ঢাকা ওয়াসা থেকে ২৯ টি খাল বুঝে পাই। পাওয়ার পর থেকেই দেখছি দুই ‘দ’-'দখল' আর 'দূষণ' এর কবলে খালগুলো সব মৃতপ্রায়। খালে স্বচ্ছ পানি প্রবাহ দেখার অভিপ্রায় নিয়ে আমরা কাজ করছি নিরন্তর।”
রামচন্দ্রপুর খালের বিষয়ে আতিকুল বলেন, ‘এই খালটির এতদিন সঠিক তদারকি ছিল না। এখন দায়িত্ব নিয়েছে সিটি করপোরেশন। খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ চলমান। সীমানার মধ্যে যত স্থাপনা থাকবে সব ভেঙে ফেলা হবে। তখন খালের পার দিয়ে ওয়াকওয়ে এবং সবুজায়ন করা হবে। যদি জায়গা বেশি পরিমাণ থাকলে সাইকেল লেনও করা হবে।’
ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা এস এম শরিফ-উল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী আমিরুল ইসলামসহ স্থানীয় কাউন্সিলরা।