চুয়াডাঙ্গায় বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে আড়াই মাস বয়সী শিশু ইকবাল হোসেনকে হত্যার কথা তার বাবা ইখলাছ উদ্দিন স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাহিনীটি বলছে, স্ত্রী মিতালী খাতুনের বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক আছে, এই সন্দেহের জেরে শিশুকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবা স্বীকার করেছেন।চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিন সকালে বাদী হয়ে ইখলাছ উদ্দিনকে আসামি করে মামলা করেছেন শিশুটির মা মিতা খাতুন। এজাহারে বলা হয়েছে, ইখলাছ উদ্দিন ও তার প্রথম স্ত্রীর ১২ বছর দাম্পত্য জীবনে কোনো সন্তান হয়নি। ৪ বছর আগে মিতা খাতুনকে বিয়ে করেন তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মাঝেরপাড়ার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ইখলাছ। পরে তাদের কোলজুড়ে আসে এক ছেলেসন্তান। তারপর থেকে দ্বিতীয় স্ত্রী মিতাকে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে ওই ছেলে তার নয় বলে জানান ইখলাছ। বুধবার সকাল ৮টার দিকে বাড়ির কাজ করছিলেন মিতা। সে সময় ছেলেকে কোলে নেন ইখলাছ। পরে শিশু ইকবালের বাঁ পায়ে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করেন তিনি। অসুস্থ হয়ে পড়লে ইকবালকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসক। সেখানে নেয়ার পথে বিকেলে মারা যায় শিশুটি। শিশুর মা মিতালী খাতুন মিতা বলেন, ‘আমার অন্য এক জায়গায় বিয়ে হয়েছিল। পারিবারিক কলহের কারণে বিয়েবিচ্ছেদ হয়। সেই পক্ষের দুই ছেলেসন্তানও আছে। তারা নানা বাড়িতে থাকে। প্রথম স্ত্রীর কোনো সন্তান না হওয়ায় ৪ বছর আগে ইখলাছ আমাকে বিয়ে করেন।
‘পরে আমাদের কোলজুড়ে আসে এক ছেলেসন্তান। তারপর থেকে সে আমাকে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘১৫ দিন আগে অমিডন সিরাপের মধ্যে বিষ মিশিয়ে আমার ছেলে ইকবালকে হত্যার চেষ্টা করে সে। সে সময় দ্রুত হাসপাতালে নিলে রক্ষা পায় আমার ছেলে। পরে আমি বাবার বাড়ি চলে যাই।
‘আমি আমার ছেলেকে নিয়ে একা থাকার কথা বলি। কিন্তু ওই কাজ আর করবে না বলে আমাদের ফিরিয়ে আনে ইখলাছ। বুধবার সকালে ইনজেকশনের মধ্যে বিষ মিশিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ অভিযুক্ত ইখলাছ উদ্দিন বলেন, ‘শারীরিক সমস্যার কারণে সন্তানের বাবা হতে পারব না বলে জানান চিকিৎসক। মিতালীর সঙ্গে ফোনে আমার প্রেম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাকে বিয়ে করি। আড়াই মাস আগে সন্তান হলে আমার সন্দেহ হয়। ‘ওই সন্তান আমার নয় বলে আমি জানাই। ওই সন্তানকে অন্য কারও কাছে দেয়ার জন্যও বলি। কিন্তু সে কোনো কথা না শুনলে আমি শিশু ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা করি। বুধবার সকালে ইনজেকশনের মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে তার শরীরে পুশ করি। পরে মারা যায় সে।’সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিষ মিশ্রিত ইনজেকশন পুশ করে শিশু ইকবালকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে বাবা। বৃহস্পতিবার সকালে বাদী হয়ে স্বামীর নামে মামলা করেন শিশুর মা মিতা খাতুন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দুপুরে তাকে আদালতে তোলা হবে।