বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৯০ ভাগ প্রকল্পই নিজস্ব অর্থায়নে: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ৩১ মার্চ, ২০২২ ১৩:১৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এখন প্রায় ৯০ ভাগ উন্নয়ন পরিকল্পনা আমরা নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি। সে সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। এর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এটার মধ্য দিয়েই আমি মনে করি দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে।’

বর্তমানে দেশের ৯০ ভাগ প্রকল্পই নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত ভবন ‘বিজয়-৭১’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিল পরপর তিনবার। এ কারণে অনেক উন্নয়ন আমরা করতে পেরেছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে আমরা আরও স্বাবলম্বী হতে চাই। কারও কাছে যেন হাত পেতে চলতে না হয়। নিজেরাই যেন নিজেদের উন্নয়নকাজ আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

‘আল্লাহর রহমতে এখন প্রায় ৯০ ভাগ উন্নয়ন পরিকল্পনা আমরা নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি। সে সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। এর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এটার মধ্য দিয়েই আমি মনে করি দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে দেশের অগ্রযাত্রায় বিচার বিভাগের ভূমিকা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের প্রতি, উচ্চ আদালতই রায় দিয়ে এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত করে দিয়েছেন। সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল যে অবৈধ সে রায় তারা দিয়েছেন, এ জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই।

‘পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি এ ধরনের অনিয়ম। যেমন আইয়ুব খান একাধারে সেনাপ্রধান আবার নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে জেনারেল জিয়াউর রহমান যাকে খন্দকার মোস্তাক ১৫ আগস্টের পর সেনাপ্রধান নিয়োগ করে এবং তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিল তারা। তারা ষড়যন্ত্র করেই জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়া সেনাপ্রধান আবার একাধারে রাষ্ট্রপতি। এই অনিয়ম করতে গিয়ে সে সেনা আইন যেমন ভঙ্গ করে, আবার সংবিধানকেও পদদলিত করে এবং মার্শাল ল জারি করে। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আবার জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। এই ক্ষমতা দখলের পালা যখন চলছে, তখন বাংলাদেশে একের পর এক ক্যু হতে থাকে। প্রায় ১৯-২০টি ক্যু হয়েছে এই দেশে। এর খেসারত দিয়েছে আমাদের সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর অফিসার ও সৈনিকরা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা আর আমাদের দেশের মানুষ।

‘কাজেই বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়ে এইসব খুনি যারা জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, শিশু ও নারীদের হত্যা করেছে, তাদের বিচার না করে ইমডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে খুনিদের পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়েছিল, নির্বাচন করার অধিকার দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। সে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়ে যারা কারাগারে বা সাজাপ্রাপ্ত তাদেরকে মুক্তি দিয়ে এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও সেই একই কাজ করেছিল। সেই যুদ্ধাপরাধীরাই ছিল ক্ষমতায়।

তিনি বলেন, ‘যে আদর্শ যে চেতনায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই আদর্শ-চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। আমি মনে করি এই একটি রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। সেই সঙ্গে আমি এবং আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছিলাম, আমাদের কোনো অধিকার ছিল না বিচার চাওয়ার। এমনকি আমি বাংলাদেশে ফিরে এসে মামলা করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু করতে দেয়া হয়নি।

‘কারণ ইমডেমনিটি দেয়া হয়েছে খুনিদের। এই যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ দেশে চালু করা হয়েছিল সেটা একমাত্র পরিবর্তন করতে পেরেছি যখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমি সরকার গঠন করতে পেরেছি তখন। সেখানেও অনেক বাধা, অনেক কিছুই আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমি ধন্যবাদ জানাই বিচারকদের সাহসী পদক্ষেপে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। এই খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এর জন্য সব সময় আমি নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি অন্তত ন্যায়বিচার আমরা পেয়েছি। বিচারহীনতা থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পেয়েছে।’

জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার কথা জানান তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন এ দেশের মানুষের জন্য। কাজেই আমাদেরও সেটাই লক্ষ্য। গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশের মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি যেন হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

‘৯৬ সালে যখন আমরা সরকারে এসেছি, সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি যে আমাদের বিচার বিভাগ আরও শক্তিশালী হবে এবং বিচার বিভাগ আমাদের ৭২ সালের যে সংবিধান, যে সংবিধানে জাতির পিতা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন তা যেন কার্যকর হয়। আমাদের সরকারই সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কার্যকর করার পদক্ষেপ নেয়।’

তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ করা, আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করা, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। উচ্চ আদালতে ড্রাফটের জন্য আলাদা কোনো কাঠামো বা কিছুই ছিল না, সেটার জন্য আমরা উদ্যোগ নিই। একটা স্থায়ী আইন কমিশন গঠন করি। বিচার বিভাগ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আমরা প্রতিষ্ঠা করি। সেই সঙ্গে বিচারকদের বিদেশে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।

‘আমাদের দেশের যারা দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, বিচার পাওয়ার মতো যাদের আর্থিক সক্ষমতা থাকে না, তারা যেন ন্যায়বিচার পেতে পারে এ জন্য আমরা আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ প্রণয়ন করি এবং বাস্তবায়ন করি। নারী ও শিশু অপরাধ দমনে বিশেষ আদালত আমরা প্রতিষ্ঠা করি। সুপ্রিম কোর্টের যে এনেক্স ভবন সেটা আমরা নির্মাণ করে আরও অধিক বিচারক নিয়োগ দিয়ে বিচারটা যেন মানুষ পায় সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।’

করোনা মহামারির সময় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচার বিভাগকে সচল রাখায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদও জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করার ঘোষণা ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে দিয়েছিলাম। করোনাভাইরাসে যখন মানুষ দুর্দশাগ্রস্ত, যখন কোর্ট পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল, সে সময় আমি চেয়েছিলাম এবং পরামর্শ দিয়েছিলাম একটি ডিজিটাল ব্যবস্থায় এবং ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করা।

‘সেই সাথে কেরানীগঞ্জে যে কারাগার সেখানে একটি কোর্ট রুম এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আমরা চালু করেছিলাম যে ভাচুয়াল কোর্ট চালু করলে সেখান থেকে ভার্চুয়ালি যেন যুক্ত হতে পারে, তাদের আইনজীবী যেন থাকতে পারেন। এরপর মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেছিলাম যে ভার্চুয়াল কোর্ট আপনি চালু করেন, এতে অন্তত কিছু বিচার চলবে, নাহলে সবকিছু স্থবির হয়ে যাচ্ছে। বহু মানুষ গ্রেপ্তার হচ্ছে, বন্দি হচ্ছে কিন্তু বিচার পাচ্ছে না। আমরা আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন প্রণয়ন করে ভার্চুয়াল কোর্ট আমরা চালু করতে পেরেছি, তাতে অনেক বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে রায় সব সময় ইংরেজিতেই দেয়া হয়। যদিও এখন আমাদের সাক্ষরতার হার আমরা সরকার গঠনের পর ৭৫ ভাগে উন্নীত করেছি, এটা ঠিক। কিন্তু রায় ইংরেজিতে সবার জন্য বোঝা সম্ভব নয়। কাজেই এটা বহুদিনের দাবি ছিল যে রায়গুলো যেন বাংলায় দেয়া হয়। আমি খুবই আনন্দিত যে এটার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটে রায়গুলো বাংলায় প্রচার করা হয়। এতে মানুষ অন্তত যারা বিচার পায় তারা সঠিকভাবে জানতে পারে রায়ে কী বলা হলো। সাধারণ মানুষের এটা জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

‘সম্পূর্ণ ডিজিটাইজড করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা বিষয়টি নিজে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাস্তবায়ন যাতে করা যায় সে ব্যবস্থা নিয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় অনেক টাকা সাশ্রয়ও করে দিয়েছে। খুব বেশি টাকার একটি প্রজেক্ট নেয়া হয়েছিল, সেখান থেকে অনেক টাকা কাটছাট করে বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জেলা আদালতগুলোকেও আমরা উন্নত করে দিচ্ছি। জজ সাহেবদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারণ এই বাংলাদেশে এমন ঘটনাও ঘটেছে বোমা মেরে। জজদেরও হত্যা করা হয়েছে। সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে জনগণ ন্যায়বিচার পাবে এবং বিচারকাজ আরও ভালোভাবে চলবে।

‘সুপ্রিম কোর্টের নতুন ভবনে আরও ৩২টি আদালত বসার সুযোগ হবে। আরেকটি বিষয় বলতে চাই। রেকর্ডরুম খুবই প্রয়োজন। এটা যাতে নষ্ট না হয় তার ব্যবস্থা করা এবং এগুলোকে ডিজিটালাইজড করে ফেলা। হার্ডকপিও রাখতে হবে ডিজিটাইজডও করতে হবে। এরই মধ্যে রেকর্ডরুম করার জন্য অর্থসচিবকে বরাদ্দের জন্য নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি।’

দেশে আইন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিচারপতি ও আইনজীবীদের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা এসেছে। আপনারা জানেন বাংলাদেশে মাত্র কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এখন আমরা বহুমুখী জ্ঞানসংবলিত বিশ্ববিদ্যালয় করছি। বহু অ্যাকাডেমি আমরা করে দিয়েছি। কাজেই আইন বিশ্ববিদ্যালয় করার বিষয়ে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়ে আপনাদের পরামর্শ আমরা নেব। এটার কারিকুলাম কী হবে তাও আপনাদের ঠিক করে দিতে হবে।

‘জেলা পর্যায় আমরা যেমন আদালত ভবন করে দিচ্ছি, সঙ্গে সঙ্গে আমি মনে করি আইনজীবীরাও যাতে সুস্থভাবে বসে কাজ করতে পারেন। আমরা যারা ক্লায়েন্ট থাকি, আমাদের তো মামলা-টামলা অনেক খেতে হয় রাজনীতি করলে, আমি নিজেই তো ১২-১৪টা মামলার আসামি ছিলাম, কোর্টে যেতে হয়েছে। কাজেই সবাই যদি ভালো ও ঠান্ডা মাথায় কাজকর্ম করেন তাহলে ন্যায়বিচার পাওয়া সহজ হয়। আমরা সে ব্যবস্থাও করব। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সর্বস্তরের মানুষ যেন ন্যায়বিচারটা পায়। আটটা বিভাগে সঠিক আদালত গড়ে তুলে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।’

এ বিভাগের আরো খবর