শুধু খাদ্যদ্রব্যই নয়, দাম বেড়েছে দৈনন্দিন ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্যেরও। প্রকারভেদে ঘরে ব্যবহার করা অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে অন্তত ১০ শতাংশ। আর প্রকারভেদে এক থেকে দেড় মাসের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যে দাম বেড়েছে ২ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা কনজ্যুমার ফোরামের এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।
সেই গবেষণায় দেখা গেছে, গেল বছরের তুলনায় এখন ক্রেতাদের সাবান, ডিটারজেন্ট ও হ্যান্ডওয়াশ কিনতে হচ্ছে ১০ শতাংশ বেশি দামে। থালা-বাসন পরিষ্কার করার উপকরণ ভিমবারের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। হারপিক ও লাইজলের দর বেড়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ করে।
সংংস্থাটির দাবি, এই সময়ে টুথপেস্ট ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ, টিস্যু বা সমজাতীয় পণ্যের দর ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, গেল বছরের তুলনায় এখন ক্রেতাদের সাবান, ডিটারজেন্ট ও হ্যান্ডওয়াশ কিনতে হচ্ছে ১০ শতাংশ বেশি দামে। থালা-বাসন পরিষ্কার করার উপকরণ ভিমবারের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। ছবি: সাইফুল ইসলাম
কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, ‘খাদ্যহির্ভূত পণ্যমূল্যও অসহনীয়। নিত্য-ব্যবহার্য এসব পণ্য কিনতেও মানুষের আয় শেষ হচ্ছে। শুধু খাদ্যপণ্য তদারকি করা হয়, কিন্তু এসব পণ্য তদারকির বাইরে থাকে।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে সরকার যেভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে, এসব পণ্যের ব্যাপারে সেভাবে কিছু করার থাকে না। অতিদ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।’
ভোক্তারা বলেন, দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়াচ্ছে। অথচ সেদিকে কারও দৃষ্টি নেই। পণ্যের বাড়তি দামের কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম অবস্থায় সাধারণ মানুষ।
বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অন্যতম সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, ডিটারজেন্ট। বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারি দেখার পর এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। ছবিটি কারওয়ান বাজার থেকে তুলেছেন সাইফুল ইসলাম
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিত্য ব্যবহৃত কিছু পণ্যের দাম এক লাফে অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে ক্রেতারা যেমন সমস্যায় পড়ছেন, তেমনি তারাও বিপদে আছেন। কারণ কোম্পানি দাম বাড়ালেও ক্রেতাদের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে তাদের, অনেক সময় বিতণ্ডায়ও জড়িয়ে পড়ছেন তারা।
সাবান, ডিটারজেন্ট ও হ্যান্ডওয়াশ
বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অন্যতম সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও ডিটারজেন্ট। বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারি দেখার পর এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। অথচ এমন একটি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হচ্ছে এখন ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বাড়তি দামে।
কনজ্যুমার ফোরামের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এক বছর আগে ১০০ গ্রাম হুইল সাবানের দাম ছিল ২০ টাকা, এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ২২ টাকায়। এক কেজি ডিটারজেন্ট (হুইল) আগে ৮৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন এটা কিনতে ক্রেতাকে ১০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। কারণ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। হাফ কেজি হুইল ডিটারজেন্ট দাম বেড়ে ৪৫ টাকা থেকে হয়েছে ৫২ টাকা।
রিন এক কেজি কিনতে ক্রেতাকে এখন দিতে হচ্ছে ১৩৫ টাকা, আগে এটার দাম ছিল ১২০ টাকা। একইভাবে হাফ কেজি রিন ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেড় শ গ্রাম লাক্স সাবান কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা, যেটা আগে ছিল ৫২ টাকা। ১০০ গ্রাম লাক্স সাবান ৩৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা। ৭৫ গ্রামের লাক্স বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকায়, আগে যেটা ছিল ২৬ টাকা।
লাইফবয় ১৫০ গ্রাম কিনতে ক্রেতাকে বাড়তি ১০ টাকা গুনতে হচ্ছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ১০০ গ্রামের লাইফবয় সাবানের দাম ৩২ টাকা থেকে বেড়ে ৩৮ টাকা হয়েছে।
লাইফবয় হ্যান্ডওয়াশ রিফিল ৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা।
১৩৫ গ্রামের ডাভ সাবানের দাম বেড়েছে ২৬ টাকা। বর্তমানে এটি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। ১০০ গ্রামের ডাভ সাবানের দাম ২০ টাকা বেড়ে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে দাম ছিল ৭৫ টাকা।
ডেটল সাবান অরজিনাল ও কুল ৭৫ গ্রাম কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৪২ টাকা, আগে যা ছিল ৩৮ টাকা। একই সাবান ১২৫ গ্রাম কিনতে ক্রেতাকে ৬২ টাকা দিতে হচ্ছে, আগে যা ছিল ৫৮ টাকা।
থালা-বাসন পরিষ্কারক
এক বছরের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম ১৩ দশমিক ০৪ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি করেছে কনজ্যুমার ফোরাম।
বাজারে এখন ১০০ গ্রাম ভিমবারের দাম ১২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা। ৩০০ গ্রাম ভিমবারের দাম বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা। যেটা আগে ছিল ৩২ টাকা।
৫০০ গ্রাম ভিম লিকুইড কিনতে ক্রেতাকে বাড়তি ১০ টাকা গুনতে হচ্ছে, এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। ২৫০ গ্রাম ভিম লিকুইড পলির দাম ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা।
৫০০ গ্রামের ট্রিম লিকুইড লেমন বোতল ১০৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা। ২৫০ গ্রামের দাম ৫৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা।
হারপিক
বছরের ব্যবধানে হারপিকের দর বেড়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ।
হারপিক পাওয়ার প্লাস ৭৫০ এমএল কিনতে ক্রেতাকে ১৩৫ টাকা গুনতে হচ্ছে, আগে যা ছিল ১৩০ টাকা। ৫০০ এমএল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়, আগে দাম ছিল ১০০ টাকা। হারপিক বাথরুম ক্লিনার ১২০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২৫ টাকা।
টুথপেস্ট
কনজ্যুমার ফোরামের দাবি, গত এক থেকে দুই মাসের মধ্যে টুথপেস্টের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ।
পেপসোডেন্ট ২০০ গ্রামের একটি টুথপেস্ট কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হচ্ছে ১৩০ টাকা, আগে যা ছিল ১২৫ টাকা। ১০০ গ্রামের পেপসোডেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, আগে বিক্রি হয় ৭৫ টাকায়।
কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এমনিতেই খাদ্যদ্রব্যের বাড়তি দামে দিশাহারা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির স্রোতে মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহৃত পণ্যেরও দাম বাড়াচ্ছে কোম্পানিগুলো। এসব পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে আরও চাপে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।’
সাধারণ মানুষের অস্তিত্বের স্বার্থে নিত্যপণ্যের মূল্য ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জোর দাবি করেন তিনি।
বলেন, ‘আর কয়েক দিন পরই রোজা শুরু। এ সময় যেন কোনো পণ্যের অযাচিত মূল্য না বাড়ে, সে বিষয়ে এখনই কার্যকর এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’