শরীয়তপুরে খাবারের আয়োজনে দাওয়াত না পাওয়ায় এক শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
শরীয়তপুরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজে বুধবার এ ঘটনা ঘটে।
কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ নিউজবাংলাকে মারধরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মারধরের শিকার শিক্ষকের নাম বিএম সোহেল। তিনি বাংলা বিভাগের প্রভাষক। অভিযুক্ত সোহাগ ব্যাপারী ওই কলেজের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি।
কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, বুধবার কলেজে বাংলা বিভাগের স্নাতক সম্মান (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিশেষজ্ঞ এবং ওই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। তাদের সংবর্ধনা ও খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করে বাংলা বিভাগ।
এই আয়োজনে ছাত্রলীগ নেতাদের দাওয়াত দেয়া হয়নি কেন তা জানতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ ব্যাপারী ও সাধারণ সম্পাদক রাসেল জমাদ্দার দলের কয়েকজন কর্মী নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে বিভাগে যান। শিক্ষক বি এম সোহেলের কাছে এ বিষয়ে জবাবদিহি চান।
তিনি তখন একটি অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তখন সোহাগ ব্যাপারী ওই শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে অন্য শিক্ষকরা এসে তাকে উদ্ধার করেন।
অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার রাতে কলেজের শিক্ষক পরিষদের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। কারণ তিনি আমাদের কলেজের শিক্ষার্থী না, তাই তাকে বহিষ্কারও করতে পারছি না। এ কারণে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এ বিষয়ে শিক্ষক সোহেল বলেন, ‘এমন ঘটনায় আমি হতবাক, মাথায় কিছু কাজ করছিল না। অন্য শিক্ষকরা এসে বিষয়টি সামাল দিয়েছেন। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে এমন অপমান, ভাবতেও পারছিলাম না।
‘বিষয়টি অধ্যক্ষ স্যার ও শিক্ষক পরিষদের নেতাদের জানিয়েছি। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই মেনে নেব। তবে এরা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতা। তাদের বিচার হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’
অভিযোগের বিষয়ে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ ব্যাপারী বলেন, ‘অভিযোগ সত্য নয়। আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে থাকতে পারি। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কঠোর হতে হয়েছে। এ কারণে কোনো শিক্ষক আমার প্রতি বিরক্ত থাকতে পারেন।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহসিন মাদবর বলেন, ‘কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগের বিরুদ্ধে এক শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগের কথা শুনেছি। ছাত্রলীগ অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না।
ছাত্র না হয়েও তিনি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কিভাবে নির্বাচিত হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যেহেতু কলেজের অধ্যক্ষ বলেছেন সোহাগ ওই কলেজের শিক্ষার্থী নয়, তাই কিভাবে তিনি কমিটিতে ঢুকেছেন সেটি এখন ভাববার বিষয়। হয়তো তখন যাচাই-বাছাই করা হয়নি বা তিনি তথ্য গোপন করেছেন।
এমন ঘটনায় ছাত্রলীগ বিব্রত। আমরা শোনামাত্র সভা করে ওই কমিটি বিলুপ্ত করেছি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা কলেজ কর্তৃপক্ষ নিতে পারেন।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংসদ সদস্য মহোদয়ের দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়েছে। এরপর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে আমি জেনেছি। শিক্ষকরা থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’