চায়ের দোকানে থাকা বেঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ও টিচার্স ট্রেনিং (টিটি) কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে দুই কলেজের অন্তত ২০ ছাত্র আহত হয়েছেন। তারা ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।
সংঘর্ষের সময় টিটি কলেজের ভেতর থেকে দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।
বুধবার রাত ৮টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের কারণে নিউমার্কেট থেকে সাইন্সল্যাব পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। রাস্তা থেকে শিক্ষার্থীদের সড়িয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় টিটি কলেজের পাশে একটি চায়ের দোকানে ঢাকা কলেজ ও টিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা আসেন। দোকানের বেঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে টিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আসার পর দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ায়।
মাহফুজুর রহমান নামে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, দুই কলেজের ছাত্ররা একে অপরের দিকে ঢিল ছুড়ে। এতে অনেকে আহত হয়েছে। টিটি কলেজের ছাত্ররা তাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে ও ফটকে দফায় দফায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। যেগুলো শব্দ ককটেলের মতো।
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘চায়ের দোকানের বেঞ্চে সিনিয়রকে জায়গা দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। এ নিয়ে ঢাকা কলেজের তিন থেকে চারজনকে মারধর করে টিটি কলেজের ছেলে। যেটা টিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির ইন্ধনে হয়েছে।’
সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের অবস্থান ছিল নায়েমের গলিতে, টিটি কলেজের ছাত্রদের তাদের ফটকে।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা টিটি কলেজের ফটকে হামলা করে। ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। টিটি কলেজের ভেতরে দুই পক্ষের ছাত্রদের মারামারি হয়। দুপক্ষই দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত থাকতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাত ১০টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর ১০টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশ অ্যাকশেন শুরু করে। এ সময় পুলিশের দিকে লক্ষ্য করে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ভেতর থেকে পাথর নিক্ষেপ করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে পিছু হটে আসে।
পরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাস্তার ওপর অবস্থান করা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে দুই পাশের রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
টিচার্স ট্রেনিং কলেজের এই দেয়াল ভেঙে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করেছিল। ছবি: নিউজবাংলা
পুলিশের রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ঢাকা কলেজ এবং টিটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে বসা এবং চা খাওয়া নিয়ে তাদের বাদানুবাদ হয়। সে সময় টিটি কলেজের সেই শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তুলে। এরপর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আরও কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে এসে টিটি কলেজের বাউন্ডারি ভেঙে ক্যাম্পাসে ঢুকে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। এরপর একপর্যায়ে তারা কলেজের গেট এবং ওয়ালের কিছু অংশ ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে কলেজের কিছু আসবাবপত্র বিল্ডিংয়ের কিছু কাচের ক্ষয়ক্ষতি করে।’
তিনি বলেন, ‘এখনকার পরিস্থিতি একেবারে শান্ত। ঢাকা কলেজের ছেলেরা তাদের কলেজ ক্যাম্পাস এবং আবাসিক হলে ফিরে গেছে। আর ঢাকা কলেজের যারা আহত তারা ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিতে গেছেন। একটা অংশ এই চিকিৎসায় সহায়তা করতে গেছেন। এখন বাইরে কোনো শিক্ষার্থী নেই। দুই কলেজের প্রিন্সিপাল এবং প্রশাসনিক অথোরিটি এখানে এসেছেন। তারা দুই পক্ষই কথা বলেছেন। তারা এই ঘটনার সূত্রপাত এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে কমিটি করছেন। ভবিষ্যতে কোনো পরিস্থিতি যেন এই এলাকায় তৈরি না হয় বা শান্তিপূর্ণ এই অবস্থা বিরাজমান রাখার জন্য পুলিশ মোতায়ন থাকবে।’
হতাহতের বিষয়ে রমনা জোনের ডিসি বলেন, ‘দুই একটা ইট পাটকেল একটু লাগলেও পুলিশের তেমন কেউ আহত হয়নি। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলেছে তাদের ৭ থেকে ৮ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আমরা জানি না।’
সংঘর্ষের পর পর এ ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য কীভাবে এল, এমন প্রশ্নের উত্তরে রমনা জোনের ডিসি বলেন, ‘এগুলো ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি দেখবে। পুলিশ আলামত নিয়েছে। তারা পরীক্ষা করে দেখবে এগুলো আসলে বোমা বা বিস্ফোরক দ্রব্য ছিল কি না। তখনই আমরা জানতে পারব।’